×

খেলা

সাতক্ষীরায় জমকালো সংবর্ধনার প্রস্তুতি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১১:৪৭ এএম

সাতক্ষীরায় জমকালো সংবর্ধনার প্রস্তুতি

সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ নারী দল চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় আনন্দের বন্যা বইছে সাবিনা-মাসুরার জেলা সাতক্ষীরায়। অন্যান্য সময়ে ফুটবল খেলা তেমন না দেখলেও সোমবার বিকাল থেকে টিভিতে খেলা দেখতে মিস করেননি শহরের সবুজবাগ, বিনেরপোতাসহ বিভিন্ন এলাকার ফুটবল অনুরাগীরা। এদিকে ফাইনালে গোল না পেলেও টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হওয়ার গৌরবে গৌরান্বিত সাবিনার পরিবারসহ ফুটবলের সংশ্লিষ্টরা। অপরদিকে গোল্ডেনবুটজয়ী সাবিনা ও অন্যতম খেলোয়াড় মাসুরাকে স্বাগত জানাতে জমকালো সংবর্ধনার আয়োজন করতে যাচ্ছে জেলা ফুটবল এসোসিয়েশন। সাবিনার মা মমতাজ বেগম বলেন, বাংলাদেশের সাফল্যে তিনি খুবই উচ্ছ¡সিত। মেয়েটার ধ্যান-জ্ঞান ফুটবলকে নিয়ে। ৮ গোল নিয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ায় অপরিসীম আনন্দ উপভোগ করছেন তিনি। তিনি শুধু সাবিনা নয়, ফুটবল বাংলাদেশের সব মেয়ের শুভ কামনা জানিয়েছেন।

সাবিনার বাবা সৈয়দ আলী গাজী মারা গেছেন ২০২০ সালে। পিতাহীন সাবিনার বড় বোন সালমা খাতুন। পরিবারের তিনিই এখন কর্ত্রী। খেলা শেষ হওয়ার পরে সালমা খাতুন বলেন, সারাদিন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেছেন জয়ের খবরটা কখন আসবে। অবশেষে সন্ধ্যার পরপরই টিভির পর্দায় যখন ভেসে আসল, বাংলাদেশ ৩-১ গোলে জয়ী, তখন মনে হয়েছিল, স্বপ্ন সার্থক হয়েছে আমার বোনটার। আর রাতে যখন শুনলাম, সাবিনা সর্বোচ্চ গোলদাতা হিসেবে গোল্ডেন বুট পেয়েছে, তখন চোখ দিয়ে অনবরত আনন্দাশ্রæ বের হচ্ছিল। বাবার কথা খুব মনে পড়ছিল। কারণ বাংলাদেশের মধ্যে যেখানেই সাবিনা খেলা করতে যেত, বাবা ছুটে যেত। সালমা খাতুন সাবিনার আজকের এই অবস্থানের পেছনে যার সবচেয়ে বড় অবদান, সেই আকবার স্যারকেও তিনি কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন। প্রসঙ্গত, স্থানীয় মৌলবাদীদের হুমকি উপেক্ষা করে সাতক্ষীরার স্থানীয় কোচ আকবার আলী মেয়েদের বিভিন্ন ইভেন্টে কোচিং করাতেন। বছরখানেক আগে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।

তিনি আরো জানান, আমাদের ছোটবেলাটা কেটেছে অভাব আর দারিদ্র্যতার সঙ্গে। সেই সময়টা ছিল খুবই সংগ্রামের। সাবিনা এখন বড় তারকা। অন্যান্য বোনেরাও স্বাবলম্বী। সব মিলিয়ে মাকে নিয়ে ভালোই আছি। অপরদিকে, সাতক্ষীরা সদরের বিনেরপোতায় নারী ফুটবল দলের অপর খেলোয়াড় মাসুরাদের বাড়িতেও চলছে জয়ের উৎসব। বাংলাদেশ দলের জয়ে বাবা রজব আলী শারীরিক অসুস্থতা সত্ত্বে¡ও স্থানীয় মেলায় রাতভর দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। রজব আলী বলেন, আমি কলারোয়া থেকে সাতক্ষীরায় এসেছি ছোটবেলায়।

সংসার চালাতে কখনো চা বেচতাম, কখনো বা সবজি বিক্রি করতাম। শহরের পিটিআই মাঠে স্থানীয় কোচ আকবার ভাই মেয়েদের ফুটবল খেলার প্রশিক্ষণ দিতেন। আমার বড় মেয়ে মাসুরা ওরফে মুক্তা পিটিআই এলাকার একটি স্কুলে ক্লাস থ্রিতে পড়ত। স্কুল শেষে সে বাসায় না ফিরে মাঠে থাকত। সে সময় সাবিনারা পিটিআই মাঠে খেলত। প্রথম প্রথম সাবিনাদের বল সীমানার বাইরে গেলে সে কুড়িয়ে আনত।

এভাবে তার মধ্যে ফুটবলপ্রীতি তৈরি হয়। আমি এসবের কিছুই জানতাম না। যখন জানলাম, তখন বাধা দিয়েছিলাম। তবে আকবার ভাইয়ের অনুরোধে আমি আর না করতে পারিনি। শেষমেষ ফুটবলেই মেয়েটা সুনাম কুড়াল। মাসুরার মা ফাতেমা খাতুন জানান, আমরা খুবই গরিব মানুষ। এমনও দিন গেছে, অনাহারে থাকতে হয়েছে। ছোটবেলা থেকে মাসুরার খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ দেখে আমি তাকে খেলা চালিয়ে যেতে বলেছিলাম। কোচ আকবার আলীই আমার মেয়েকে এ পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছে। দুর্ভাগ্য হলো, এত বড় জয় আকবার আলী দেখে যেতে পারলেন না। ফাতেমা খাতুন আরো জানান, মেঝ মেয়ে সুরাইয়াকে বিয়ে দিয়েছি। বড় মেয়ে মাসুরাকে বিয়ের কথা বললেই সে বকা দেয়। ফুটবলই ওর ধ্যান- জ্ঞান। ফুটবলের প্রতি ওর আগ্রহ দেখে ওর বাবার অনিচ্ছাসত্ত্বেও আমি তাকে খেলতে উৎসাহিত করি। সাতক্ষীরা ফুটবল এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আরিফ হোসেন প্রিন্স জানান, নারী ফুটবল দল সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় গর্ব অনুভব করছি। বিশেষ করে সাবিনা ও মাসুরার জন্য সাতক্ষীরাবাসী গর্বিত। তারা দুজন সাতক্ষীরায় ফিরলে স্টেডিয়ামে এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে তাদের জমাকালো সংবর্ধনা দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App