×

মুক্তচিন্তা

রানির মৃত্যু ও প্রশ্নবিদ্ধ রাজতন্ত্র

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০১:৪৪ এএম

রাজতন্ত্র মধ্যযুগের বহুল প্রচলিত শাসনব্যবস্থা হলেও কালের বিবর্তনে এখন মৃতপ্রায়। কিন্তু এখনো অল্পসংখ্যক রাষ্ট্রের পাশাপাশি কিছু উন্নত দেশও ঐতিহ্য হিসেবে নামসর্বস্ব রাজতন্ত্র টিকিয়ে রেখেছে। ভূপতির জন্য রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে রাজতন্ত্র নাম দেয়া হলেও দেশ পরিচালিত হচ্ছে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে। সম্প্রতি একুশ শতকে বিশ্বজুড়ে রাজতন্ত্রের প্রাসঙ্গিকতা আছে কিনা এই নিয়ে তৈরি হয়েছে নানা বিতর্ক। এজন্য অনেকের প্রশ্ন- ব্রিটিশ রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুই কি নামসর্বস্ব রাজতন্ত্রের সমাপ্তি ঘণ্টা? ৭০ বছর রাজত্ব করে গত ৮ সেপ্টেম্বর মারা যান রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। রানির মৃত্যুতে প্রথামাফিক ব্রিটেনের রাজা এবং কমনওয়েলথ প্রধান হিসেবে তার বড় ছেলে চার্লসের সিংহাসনে আরোহণের পর কমনওয়েলথভুক্ত বিভিন্ন দেশে রাজার কর্তৃত্ব শুরুতেই প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। সংস্থাটির বেশ কয়েকজন নেতার মতে, পদটি বংশগত হওয়া উচিত নয়। এখনো ১৪টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ব্রিটেনের রাজা। যদিও বেশিরভাগ দেশে ভূপতির শাসন নিয়ে আপত্তি উঠেছে। তারই পরিপ্রেক্ষিতেই জাতির উদ্দেশে ভাষণে রাজা রাজতন্ত্রের ভূমিকা ও তার প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরলেও আধুনিক যুগে রাজতন্ত্রের যৌক্তিকতা নিয়ে বিভিন্ন অঞ্চলে যথেষ্ট প্রশ্ন উঠছে। সমগ্র বিশ্বের প্রায় আড়াই বিলিয়ন মানুষ ও ব্রিটিশ উপনিবেশে থাকা দেশগুলোর সংস্থা হচ্ছে কমনওয়েলথ। যুক্তরাজ্যের পাশাপাশি কমনওয়েলথের ৫৬টি দেশের মধ্যে নামমাত্র রাজতন্ত্র বিদ্যমান দেশগুলো হলো কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, অ্যান্টিগা অ্যান্ড বারবুডা, বাহামা, পাপুয়া নিউগিনি, জ্যামাইকা, বেলিজ, গ্রানাডা, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ, টুভালু, সেন্ট কিটস এন্ড নেভিস, সেন্ট লুসিয়া ও সেন্ট ভিনসেন্ট এন্ড দ্য গ্রেনাডাইনস। সাম্প্রতিক সময়ে ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে বের হওয়ার পক্ষে বিভিন্ন দেশে নানা আলোচনা, সমালোচনা হচ্ছে। সিংহাসনে তৃতীয় চার্লসের যোগদানের পরই ক্যারিবিয়ান রাজনীতিতে রাজতন্ত্র বিরোধিতা দেখা যাচ্ছে। ইতোমধ্যে বার্বাডোস প্রজাতান্ত্রিক দেশে পরিণত হয়েছে। কানাডা, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও জামাইকাতেও একই সুর শোনা যাচ্ছে। বেশিরভাগেরই দাবি সাংবিধানিক পন্থা অনুসরণ করে অবিলম্বে রাজতন্ত্রের ইতি টানা হোক। পঞ্চাশের দশকে এলিজাবেথের সিংহাসনে বসার পরে অনেক দেশ প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করলে রানি পরোক্ষভাবে কমনওয়েলথের মাধ্যমে সদ্য স্বাধীন দেশগুলোকে তার অধীনে রাখার চেষ্টা করেন। কিন্তু ২০১৮ সালে কমনওয়েলথের শীর্ষ সম্মেলনে রানির মৃত্যু হলে চার্লসকে রাজ্যের প্রধান হিসেবে ঘোষণা করার পর থেকেই অ্যান্টিগুয়া এন্ড বারমুডা, জ্যামাইকা, সেন্ট ভিনসেন্ট ও গ্রানাডাইনসহ কয়েকটি দেশে রাজতন্ত্র থেকে বের হওয়ার আওয়াজ ওঠে। এদিকে রাজপরিবারের শাসনে থাকা বাহামা, বেলিজ, গ্রানাডা, সেন্ট লুসিয়া ও সেন্ট কিটস এন্ড নেভিসের জনগণের মতে রাজতন্ত্র ‘তার প্রাসঙ্গিকতা এবং তাৎপর্য হারিয়েছে’। তাদের মতে এখনি সময় এসব দেশে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার। সত্যিকার অর্থে রাজা তৃতীয় চার্লসও উপলব্ধি করেছেন একবিংশ শতাব্দীতে রাজতন্ত্রের সার্থকতা ও প্রাসঙ্গিকতা ক্রমবর্ধমান সন্দেহপ্রবণ জনসাধারণকে বোঝাতে ব্যর্থ হলে ব্রিটিশ রাজতন্ত্র টিকিয়ে রেখে রাজ্যগুলোকে ধরে রাখা তার জন্য অত্যন্ত কঠিন হবে। বাস্তবিক অর্থে রানির প্রয়াণের পর ব্রিটিশ রাজশাসনের অস্তিত্ব নিয়ে যথেষ্ট সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। রাজতন্ত্র টিকে রাখার একমাত্র পথ মানুষের মনমানসিকতা ও নৈতিকতা সম্পর্কে ধারণা নিয়ে রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা এবং সাংবিধানিক নীতিকে সম্মান করে জনমনে আস্থাশীল নেতা হয়ে রানির মতো ধ্রæব নক্ষত্র হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করা। অন্যথায় তৃতীয় চার্লসের শেষ সময় পর্যন্ত কতগুলো রাষ্ট্র তার অধীনে থাকে, তা প্রশ্নসাপেক্ষ। কিন্তু একবিংশ শতাব্দীতে রাজতন্ত্রবিরোধী স্রোত যেভাবে বৃৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের স্থায়িত্ব হ্রাস পাবে, তা অবশ্যম্ভাবী। এখন রাজতন্ত্রবিরোধী স্রোতে নতুন রাজার রাজত্ব কতদিন স্থায়ী হয় সেটিই দেখার বিষয়। ফকর উদ্দিন মানিক লেখক ও গবেষক; প্রকৌশলী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App