×

জাতীয়

মোবাইল ফোন না দেয়ায় খুন হন চিকিৎসক বুলবুল

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৮:৪২ এএম

মোবাইল ফোন না দেয়ায় খুন হন চিকিৎসক বুলবুল

নিহত ‘গরিবের ডাক্তার’ খ্যাত বুলবুল আহমেদ

রাজধানীর কাজীপাড়ায় ‘গরিবের ডাক্তারখ্যাত’ দন্ত চিকিৎসক বুলবুল আহমেদের (৩৯) মৃত্যু হয়েছে ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল ৫ ছিনতাইকারী। হত্যায় সরাসরি অংশ নেয় মো. রিপন ও তার সহযোগী মো. রাসেল হোসেন হাওলাদার। মূলত মোবাইল দিতে না চাওয়ায় বুলবুলের উরুতে আঘাত করে রিপন। পরে সেটি নিয়ে পালিয়ে যায়। এ সময় ঘটনাস্থলের পাশেই ছিল রায়হান। মোবাইল ছিনিয়ে নেয়ার পর ৫ জন এক জায়গায় মিলিত হয়।

আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডে ছুরিকাঘাতকারী রিপন ও দলনেতা রায়হানসহ ওই ৫ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট প্রস্তুত করেছে মামলার তদন্তকারী সংস্থা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের মিরপুর বিভাগ। এ সপ্তাহের মধ্যেই চার্জশিট আদালতে দাখিল করা হতে পারে। মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।

এদিকে ছিনতাইয়ের কারণে যদি উরুতে আঘাত করা হয়, তাহলে পকেটে থাকা টাকা ও আরো একটি মোবাইল কেন তারা নিল না? এমন প্রশ্নেরও জট খুলেছে তদন্তে। একটি ফোন ছিনিয়ে নেয়ার পর বিহঙ্গ পরিবহনের বাস চলে আসায় তারা তাড়াহুড়া করে পালিয়ে যায়। এরই মধ্যে ৫ আসামিই দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। সেখানেও বিষয়টি স্বীকার করেছে তারা।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত ২৭ মার্চ ভোরে নোয়াখালী যাওয়ার উদ্দেশে শেওড়াপাড়া বাসস্ট্যান্ড যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হন দন্ত চিকিৎসক ও প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার বুলবুল আহমেদ। ভোর সাড়ে ৫টার দিকে পশ্চিম কাজীপাড়ার নাভানা ফার্নিচারের সামনে (মেট্রোরেলের ২৭৮নং পিলার) গেলে রিপন ও রাসেল রিকশার গতিরোধ করে এবং সঙ্গে থাকা সব কিছু দিয়ে দিতে বলে। না দিলে সঙ্গে থাকা ছুরি দিয়ে আঘাত করার ভয় দেখায়। বুলবুল আহমেদ মোবাইল ফোন দিতে না চাওয়ায় রিপন তার উরুতে আঘাত করে রক্তাক্ত জখম করে ও মোবাইল ফোন নিয়ে পালিয়ে যায়। এ সময় সেখানে বিহঙ্গ পরিবহনের একটি বাস এলে বাসচালক আশিক ও হেল্পার সাগর তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে স্বজনরা সেখান থেকে তাকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে ঘটনার পরে রায়হান ওরফে আপন ওরফে সোহেল, মো. রাসেল হোসেন হাওলাদার, হাফিজুর রহমান ওরফে আরিয়ান হোসেন হৃদয় রাঢ়ী, সোলায়মান মীর ও রিপন কাঠালতলা মোড়ে একত্র হয়। রায়হান দলের নেতা হওয়ায় ডাকাতির সব মালামাল সে জমা রাখত। বুলবুলের মোবাইল ফোনও সে জমা নেয় এবং রিপনকে ১৫০০ টাকা দেয়। ওই টাকা অন্যরা ভাগ করে নেয়। ছিনতাইয়ের সময় রায়হানও ঘটনাস্থলের আশপাশে উপস্থিত থেকে পুলিশ আসছে কিনা সেটি পাহারা দিচ্ছিল। এ ঘটনায় ব্যবহৃত ছুরিটি রিপন ও আরিয়ান একটি ভাঙা বাড়িতে ইটের খোয়ার নিচে লুকিয়ে রেখেছিল, পরে সেটি উদ্ধার করা হয়েছে। বুলবুল যে রিকশায় ছিলেন তার চালককে পাওয়া যায়নি বলে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

মামলার তদারকি কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের মিরপুর জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মো. সাইফুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেন, হত্যাকাণ্ডের সব দিক বিবেচনায় রেখেই আমরা তদন্ত কাজ শেষ করেছি। খোয়া যাওয়া মোবাইল ফোনও উদ্ধার করা হয়েছে। আসামিরা এরই মধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। দ্রুতই আমরা আদালতে চার্জশিট দাখিল করব।

জড়িতদের সর্বোচ্চ বিচার দাবি : নিহত বুলবুল আহমেদের স্ত্রী শাম্মী আক্তার ভোরের কাগজকে বলেন, ডিবি তদন্তের সময় সার্বক্ষণিক আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। প্রথমে আমাদের সন্দেহ হচ্ছিল, ছিনতাইকারী এ ঘটনা ঘটিয়ে থাকলে পকেটে আরেকটি মোবাইল ও নগদ টাকা কেন রেখে যাবে। পরে আসামিরা পুলিশকে বিষয়টি স্পষ্ট করেছে যে, একটি বাস চলে আসায় তারা আর সেগুলো নিতে পারেনি। সবকিছু মিলিয়ে তদন্তে আমরা সন্তুষ্ট। এখন একটাই চাওয়া আসামিদের যেন সর্বোচ্চ বিচার নিশ্চিত করা হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App