×

খেলা

এবার ছেলেদের ফুটবলকে বদলে দিতে চান কলসিন্দুরের মালা রানি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১২:০৩ পিএম

এবার ছেলেদের ফুটবলকে বদলে দিতে চান কলসিন্দুরের মালা রানি

মালা রানি

ময়মনসিংহ শহর থেকে ৬৫ কিলোমিটার উত্তরে ভারতের মেঘালয় রাজ্যঘেঁষা ধোবাউড়া উপজেলার কলসিন্দুর গ্রাম। গ্রামটি উন্নয়ন ও শিক্ষাদীক্ষায় এখনো বেশ পিছিয়ে। মুসলমান, হিন্দুদের পাশাপাশি এ গ্রামে বসবাস করেন আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকজনও। প্রায় এক যুগ আগে বাংলাদেশের নারী ফুটবলকে বদলে দেয়ার স্বপ্ন নিয়ে এ গ্রামে শুরু হয় এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। স্কুলের গন্ডি পার না করা মেয়েরা প্রত্যয়ী হয় বাংলাদেশের ফুটবলকে এগিয়ে নিতে। যাদের পায়ের জাদুতে ধুঁকতে থাকা নারী ফুটবল ফিরে পায় আলো। অপ্রতিরোধ্য এই ফুটবল কন্যাদের শুরুটা ২০১১ সালে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব ফুটবল টুর্নামেন্ট দিয়ে। একসময় শিরোপা ঘরে তোলে তারা। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাদের। একে একে জিততে শুরু করে দেশের সব ফুটবল প্রতিযোগিতার শিরোপা। একসময় সাফল্য ধরা দেয় বিদেশের মাটি। যার সবশেষ দক্ষিণ এশিয়ার নারী ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট জয়। নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতেছেন তারা। এই দলে রয়েছেন কলসিন্দুর গ্রামে বেড়ে ওঠা আট জন মেয়ে।

ময়মনসিংহের কলসিন্দুর নারী ফুটবল টিমের ম্যানেজার ও কলসিন্দুর স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যাপক মালা রানি সরকার। শুরু থেকে আজ অব্দি খুব কাছ থেকে দেখেছেন মেয়েদের ধারাবাহিক পথচলা। এবারের সাফ চ্যাম্পিয়ন ট্রফি জয়ের পেছনে মেয়েদের কঠোর সংগ্রামকে বড় করে দেখছেন তিনি, নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলের শিরোপা জিতেছেন বাংলাদেশের মেয়েরা। এ দলের আটজনই কলসিন্দুর গ্রামের। সানজিদা আক্তার, মারিয়া মান্দা, শিউলি আজিম, তহুরা খাতুন, শামসুন্নহার সিনিয়র, শামসুন্নাহার জুনিয়র, সাজেদা খাতুন ও মার্জিয়া আক্তার। এ জয় একই সঙ্গে আনন্দের এবং গর্বের। আমার সুখস্মৃতিতে এটি সবসময় উজ্জ্বল হয়ে থাকবে। অনেক সংগ্রাম, ত্যাগ, তিতিক্ষা অতিক্রান্ত করে মেয়েরে এ সাফল্য অর্জন করতে পেরেছে। যা জাতির জন্য গর্বের।

মেয়েদের দিয়ে সাফল্যের ধারাবাহিকতা পর এবার ছেলেদের ফুটবলকে এগিয়ে নিতে কাজ করতে চান তিনি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের টিমে ৪০-৪৫ জন মেয়ে আছে। একজন কোচ আছে, যাকে দিয়ে আমরা কোচিং করাই। এছাড়া আমরা আগামীর জন্য খেলোয়াড় তৈরি করার ক্ষেত্রে ছেলে এবং মেয়ে দুটি ফরম্যাটে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। এখন ৪০-৪৫ জনের ছেলে টিমও আমরা গড়ে তুলেছি। বর্তমানে তারা ভালো করছে। কিছুদিন আগে আমাদের কলসিন্দুর ছোটদের টিমের মেয়ে এবং ছেলেরা জাতীয় গ্রীষ্মকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় স্কুল এবং মাদ্রাসা এ দুই ফরম্যাটেই জেলা পর্যায়ে চ্যাম্পিয়নের গৌরব অর্জন করেছে। মেয়েদের মতো ছেলেরাও এগিয়ে যাবে। একসময় তারা বিশ্বজয় করবে। এটাই আমার প্রত্যাশা।

সানজিদা আক্তার-মারিয়া মান্দাদের পথচলার শুরুটা সহজ ছিল না। মেয়েদের ফুটবল খেলার পক্ষপাতি ছিলেন না গ্রামের অনেক মানুষ। তারা একে নেতিবাচকভাবে নিতে শুরু করে। ফুটবল খেলতে গিয়ে নানা ধরনের কটূক্তিও শুনতে হয়েছে কলসিন্দুরের মেয়েদের। স্থানীয়রা মেয়েদের ফুটবল খেলায় উৎসাহ দেয়ার পরিবর্তে তারা বাধা দেয়। এছাড়া ফুটবল খেললে মেয়েদের বিয়ে দেয়া যাবে না- এমন কথাও শোনা যায়। এ সময় স্থানীয় শিক্ষক এবং সমাজ সচেতন মানুষের সহায়তায় খেলোয়াড়দের পরিবার ও স্থানীয়দের বোঝানোর চেষ্টা করা হয়। একসময়ে মেয়েদের অদম্য ইচ্ছার কাছে হার মানে সমাজের বিদ্যমান নানা সংকট আর কুসংস্কার। মালা রানি যোগ করেন, শুরুতে অজপাড়া গাঁ কলসিন্দুরের এই মেয়েদের ফুটবল খেলাকে অনেকে ভালো চোখে দেখেনি। পরিবার থেকে খুব একটা সহযোগিতা পায়নি মেয়েরা। প্রাইমারি স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে মাধ্যমিকে যখন মেয়েরা ভর্তি হয়, তখন ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে বড় ধরনের বাধা আসে। কিন্তু মেয়েদের প্রবল আগ্রহ আর আমাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আজকের এ সফলতা। তিনি বলেন, ফাইনালে প্রথম গোল দিয়ে দলকে এগিয়ে নেয়া শামসুন্নাহার জুনিয়র ছোটবেলায় মাকে হারায়। গরিব-অসহায় পরিবারে তাকে যতœ করার কেউ ছিল না। কিন্তু ফুটবল খেলার প্রতি ব্যাপক আগ্রহ ছিল তার। আগ্রহ দেখে আমি এক বছর তার খাওয়া-দাওয়ার দায়িত্ব নিই। এভাবে নানা বাধাবিপত্তি পেরিয়ে প্রত্যেক মেয়ে জাতীয় দলে জায়গা করে নেয়।

তিনি আরও বলেন, একটা সময় মেয়েদের বয়সন্ধিকাল শুরু হলে অনেকে ঝরে পড়তে থাকে। পরিবারের পক্ষ থেকে মেয়েদের ফুটবল খেলতে অপরাগতা প্রকাশ করা হয়। আমি এবং স্থানীয় সচেতন মানুষজন মিলে তাদের বোঝাতে চেষ্টা করি। একসময় তাদের রাজি করতে সমর্থ হই। মেয়েরা আমাকে মা বলে ডাকে। আমার প্রতি তাদের পরিবারেরও বিশ্বাস আছে। এ বিশ্বাস থেকেই মেয়েদের পরিবার রাজি হয়। একসময় তারা মাঠে ফিরে আসে। যার ফলস্বরূপ এবারের এই শিরোপা জয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App