×

জাতীয়

বাজারে এক ধরনের ব্লেম গেম চলছে : ভোক্তা ডিজি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৪:৫৯ পিএম

বাজারে এক ধরনের ব্লেম গেম চলছে : ভোক্তা ডিজি

জাতীয় ভোক্তা আধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান। ফাইল ছবি

বাজারে এক ধরনের ব্লেম গেম চলছে : ভোক্তা ডিজি

মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) জাতীয় ভোক্তা আধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সভাকক্ষে এলপিজি গ্যাসের মূল্য বিষয়ে ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণে মতবিনিময় সভা

এলপি গ্যাসের তাপে পুড়ছে ভোক্তার পকেট। অযৌক্তিকভাবে দাম নির্ধারণ করে দিচ্ছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। তাতেই মগের মুল্লুকে পরিণত হয়েছে বাজার। আমদানিকারকদের এমন দাবির প্রেক্ষিতে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, যখনই কোন অভিযান পরিচালনা করা হয়, তখনই এক ধরনের ব্লেম গেম চলতে থাকে। সেই ব্লেমগেম থেকে আমরা বের হতে চাই। প্রকৃত তথ্য উদঘাটন করতে চাই। ডিজি বলেন, সরকার নির্ধারিত দামে মিলছে না গ্যাসের সিলিন্ডার। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে বাজারে অভিযান চালিয়েও সেটার প্রমাণ মিলেছে। তিনি বলেন, গত কয়েকদিন রাজধানীতে প্রতি সিলিন্ডার গ্যাস কিনতে ভোক্তার বাড়তি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা খোয়া গেছে। বছরে ৮ কোটি সিলিন্ডার বিক্রি হলে তাতে ভোক্তার স্বার্থ বিশালভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে। সেজন্য এ অপরাধ মেনে নেয়া হবে না বলে জানান তিনি।

এদিকে, কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) বলছে, দেশে গ্যাসের দাম ও বাজার নিয়ন্ত্রণে বিইআরসির ব্যর্থতার মাশুল গুনতে হচ্ছে ভোক্তাদের। ইচ্ছে করে কেউ বাজার অস্থিতিশীল করছে কিনা- তা খুঁজতে গোয়েন্দা সংস্থাকে সহায়তার হাত বাড়াতে বললেন সফিকুজ্জামান।

মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) এলপিজি গ্যাসের মূল্য বিষয়ে এর উৎপাদনকারী, বাজারজাতকারী ও ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় ভোক্তা আধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সভাকক্ষে এ সভায় সভাপতিত্ব করেন অধিদপ্তরের ডিজি এ এই্চ এম শফিকুজ্জামান। সভায় এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, আগে এ সেক্টরে খুব একটা সমস্যা হয়নি। এখন যত প্রয়োজন বাড়ছে তত সমস্যা হচ্ছে। সেজন্য এলপিজি গ্যাসের দাম নির্ধারণকারী প্রতিষ্ঠান বিইআরসি’র (বাংলাদেশ অ্যানার্জি রেগুলেটরি কমিশন) একটি ভূমিকা রয়েছে।

দাম বেড়ে যাওয়ার সমস্ত দায় সরকারের কাঁধে চাপিয়ে এলপিজি আমদানিকারকরা বলেন, ব্যবসায়িক কোনো যুক্তি না মেনে দাম ঠিক করে দিয়ে গ্যাসের বাজারকে মগের মুল্লুকে পরিণত করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন। আমদানিকারকরা জানান, বিশ্ববাজারে এলপিজির দাম বৃদ্ধি, ডলারের দাম বৃদ্ধি, আমদানি খরচ বৃদ্ধি এবং জ্বালানি তেলের কারণে পরিবহন খরচ বাড়ার পরও সেসব বিষয় আমলে না নিয়ে বিইআরসি গ্যাসের দাম নির্ধারণ করে দিচ্ছে। যা প্রকৃত দামের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এর প্রতিউত্তরে সফিকুজ্জামান বলেন, তারপরও যখন সরকার দাম নির্ধারণ করে, সেটা মানতে হবে। ভোক্তারা নির্ধারিত দামে না পেলে সেটা প্রতারণা হবে। আপনাদের সমস্যাগুলো দাম নির্ধারণের পূর্বে কর্তৃপক্ষকে বোঝাতে হবে। সেটা আপনারা করতে পারছেন না এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। তিনি বলেন, আমি বিইআরসির চেয়ারম্যানের সঙ্গে বসবো। তিনিই আমাকে এর আগে দাম নিয়ন্ত্রণে অভিযানের কথা বলেছিলেন। এখন সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করে ডেভলপ করতে পারবো।

এসময় ব্যবসায়ীরা দাম বেশি নেয়ার পরও লোকসান হচ্ছে এমন তথ্য দেন। তাদের লোকসানের প্রসঙ্গে মহাপরিচালক বলেন, আমি কখনো কোনো ব্যবসায়ী লাভ করছে এমন শুনিনি। আপনাদের কথা, আপনারা শুধু লোকসানই করেন। তারপরও আমরা দেখি আপনাদের ব্যবসা বড় হয়।

তিনি বলেন, তারপরও আমরা আমাদের অভিযানে পাওয়া তথ্য এবং আজকের এ বৈঠক নিয়ে বেশ কিছু সুপারিশ দেব। সেটা যদি সরকারের সর্বোচ্চ মহলে বিবেচনা করে তবে পরিস্থিতি উন্নতি হবে। ক্যাব বলছে, বিইআরসির ব্যর্থতার দায় বহন করছেন ভোক্তারা। আলোচনায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন বলছে, গ্যাসের বাজারে চলছে অসুস্থ প্রতিযোগিতা। এ সময় ভোক্তার স্বার্থরক্ষায় গোয়েন্দা সংস্থাকে কাজ করার আহ্বান জানায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। নির্ধারিত মূল্যে ভোক্তার চুলায় গ্যাসের ব্যবহার নিশ্চিতে অভিযান জোরদার করবে ভোক্তার অধিকার নিয়ে কাজ করা সরকারি সংস্থাটি।

এসময় বেক্সিমকো গ্যাসের চিফ কমার্শিয়াল অফিসার মুনতাছির আলম বলেন, বারবার অনুরোধ করে বিইআরসি’র দাম নির্ধারণের সভায় জায়গা নিতে হয়েছে আমাদের। গত মাসে দাম নির্ধারণে আমরা আগ্রহী ছিলাম না। কারণ মিটিংয়ে আমাদের সঙ্গে আলাপ না করে এলসি নিস্পত্তির রেট ১০২ টাকা ধরা হয়েছিল। যেখানে সে সময় ডলার রেট আরও অনেক বেশি ছিল। তিনি বলেন, এছাড়া আমাদের গ্যাস সংরক্ষণ ও বোতলজাতকরণের জন্য রেট ধরা হয় ১৮৬ টাকা। কিন্তু আমরা হিসাব দিয়েছি এ খরচ ২৪৫ টাকা। তারপরও মানা হয় না। অন্যদিকে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পরও সে পুরনো ৬৫ টাকা প্রতি লিটারের দাম ধরে অভ্যন্তরীণ পরিবহন খরচ হিসাব করা হচ্ছে। অপারেটরের কোনো মার্জিনও রাখা হয়নি দাম নির্ধারণের হিসাবে। ফলে যে দাম নির্ধারণ করা হচ্ছে সেটা সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

জিএমআই কোম্পানির চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এ এলপিজি খাতে ৩২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ। আমিও জীবনের শেষ সময়ে বড় বিনিয়োগ করে বসেছি এ খাতে। সরকার যেমন প্রয়োজনে রাতারাতি একদিনে ৪৮ টাকা জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে দিতে পারে, আমরা সেটা করতে পারি না। শুধু লোকসান করি। তিনি বলেন, আমরা পরিপূর্ণ ব্যবসায়ী, সিস্টেমেটিক ব্যবসায়ী, আমাদের ইথিকস আছে। সেজন্য আমরা লোকসান দিয়েও চালিয়ে যাচ্ছি। লোকসানের কারণে এখন আমরা ব্যাংক ঋণও পাচ্ছি না। আগে ঋণ দেয়ার জন্য ব্যাংকগুলো পেছনে পেছনে ঘুরতো।

অন্যদিকে ডিলার ও বিক্রেতাদের পক্ষ থেকে কয়েকজন বৈঠকে বলেন, অপারেটর কোম্পানিগুলো তাদের মুনাফা কমিয়ে দিচ্ছে। এমনও হয়েছে, কোম্পানি এক মাসে তিন দফা মুনাফা কমিয়েছে। সেজন্য তাদের লাভ থাকছে না। তারা বারবার সরকারের বিভিন্ন সংস্থার অভিযানে জরিমানার স্বীকার হচ্ছেন। যদিও দাম বাড়ানোর পেছনে অপারেটররা দায়ী।

বৈঠকে বিইআরসি’র প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত উপপরিচালক ফিরোজ উজ জামান বলেন, দাম নির্ধারণে কিছু দুর্বলতার কথা এসেছে। সেগুলো আমি বিইআরসি চেয়ারম্যানকে জানাবো। এসময় এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, আপনারা দাম নির্ধারণের শুনানিতে আমাকে রাখবেন। আমি সেখানে উপস্থিত থাকবো। পাশাপাশি এ খাতের প্রতিটি স্তরের স্টকহোল্ডাররা যেন উপস্থিত থাকতে পারে সেটি নিশ্চিত করবেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App