×

মুক্তচিন্তা

আমাদের পররাষ্ট্র নীতি কি দুর্বল?

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০১:১৫ এএম

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতি কী- এ কথা দেশের অনেকে হয়তো এখন পর্যন্ত জানে না। তবে বর্তমানে মিয়ারমারের ব্যাপারে কূটনৈতিক দিক থেকে অনেক দুর্বল মনে হয়। বিদেশে কি আমাদের বন্ধু নেই। বঙ্গবন্ধুর আমলে ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব কারো সঙ্গে শত্রæতা নয়’- এই ছিল বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতি, কথাটা সবার মুখে মুখে শুনেছি। এমনকি শেখ হাসিনার আমলেও এ কথার উচ্চারণ হতে শোনা গেছে। অথচ বর্তমান সরকারের পররাষ্ট্র নীতি কী এবং কিসের ভিত্তিতে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ইমেজ গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে তা কি দেশবাসী জানতে পারে না? জাতিসংঘ, ওআইসি, ৭৭ জাতি গ্রুপ, ন্যাম ও সার্কসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় বাংলাদেশ নিজেকে সামনের কাতারে নিয়ে এসেছে ঠিকই। তারপরও পাকিস্তানের কাছে বাংলাদেশের অনাদায়ী পাওনা আদায়, আটকেপড়া পাকিস্তানিদের ফেরত নিতে পাকিস্তানের অস্বীকৃতি, সীমান্ত সমস্যা, তিস্তার পানি, ট্রানজিটসহ ভারতের সঙ্গে বিরাজমান সমস্যার সমাধান না হওয়া ও তাইওয়ানসহ কিছু কিছু দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বিরাজমান শীতল সম্পর্ক পররাষ্ট্র নীতির দুর্বলতারই বহিঃপ্রকাশ। বর্তমানে মিয়ানমারের ১২ লাখ রোহিঙ্গা নিয়ে বাংলাদেশ অনেক বিপদে রয়েছে। মিয়ারমার আরো রোহিঙ্গা পাঠানোর জন্য পাঁয়তারা করছে। তারা সীমান্তে যুদ্ধের মহড়া দিচ্ছে। বাংলাদেশ সীমান্তে গোলা ছুড়ে লোক মারছে। আমরা শুধু প্রতিবাদ জানাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলার মাধ্যমে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতিকে কিছুটা চাঙ্গা হতে দেখছি। অথচ আজ পররাষ্ট্র নীতি আছে কি নেই জনগণ জানতে পারছে না। বাংলাদেশ একটি ছোট্ট দেশ হলেও এর ইতিহাস প্রাচীন, ঐতিহ্য দীর্ঘদিনের। বিশ্ব সমাজে একে পরিপূর্ণভাবে তুলে ধরার দায়িত্ব পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। এ মন্ত্রণালয়ে অভিজ্ঞ কূটনৈতিক, দক্ষ ও যোগ্য লোকের বড়ই অভাব। এ মন্ত্রণালয়কে ঢেলে সাজানো প্রয়োজন। দুর্নীতি এবং অধিক ব্যয়ভার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষে বহন করা এখন আর সম্ভব নয়। কূটনীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখির সময় অতিক্রম করছে সত্য, তবে আমাদের গতিশীল পররাষ্ট্র নীতির সফল প্রয়োগের মাধ্যমে তা কেটে ওঠা সম্ভব হবে। পররাষ্ট্র নীতিতে সরকার নয়, দেশের জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটানোর ওপর গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের স্বার্থ সংরক্ষণ করা পররাষ্ট্র নীতির প্রাথমিক লক্ষ্য হলেও মূল লক্ষ্য হচ্ছে সম্মানের সঙ্গে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে সঠিকভাবে তুলে ধরা। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো বর্তমানে যেসব সমস্যায় জর্জরিত তা মোকাবিলা করতে হলে দ্বিপক্ষীয় ও পারস্পরিক স্বার্থে এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে আন্তঃরাষ্ট্র সম্পর্ক আরো জোরদার করতে হবে। ডিপ্লোমেসি হচ্ছে সিরিয়াস বিজনেস। দেশের বাইরে দেশের স্বার্থ ও ইমেজ যথার্থভাবে সংরক্ষণ করাই হচ্ছে এর মূল কাজ। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সফল কূটনীতির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করা সম্ভবপর হয়। সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা ছিল আমাদের লক্ষ্য। আমাদের পররাষ্ট্র নীতি একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ উপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে। বিভিন্ন সময় দেখা যায় বাংলাদেশে অবস্থিত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত বা হাইকমিশনাররা বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের রাজনীতি সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করে থাকেন। এমতাবস্থায় সরকারকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য কারো সঙ্গে ঝগড়া-বিবাদ নয়, বন্ধুত্ব, সৌহার্দ, সহযোগিতা, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা, আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান, রাজনৈতিক ব্যক্তি নয় দক্ষ ও পেশাদার কূটনীতিক দিয়ে বাংলাদেশের ইমেজ তৈরি, হিংসা-বিদ্বেষ, শত্রæতা পরিহার করে যুদ্ধ নয় শান্তির পক্ষে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতিকে স্বাগত জানাই। তবে ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বিরোধ ও তিস্তার পানি ভাগাভাগি মিটিয়ে ফেলা এবং রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অরো কূটনৈতিকভাবে এগিয়ে যেতে হবে। বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোকে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক অবস্থা চাঙ্গা বা শক্তিশালীর কাজে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরতে হবে। মাহবুবউদ্দিন চৌধুরী লেখক ও গণমাধ্যমকর্মী। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App