×

জাতীয়

মাঠে মারমুখী আওয়ামী লীগ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৮:২৭ এএম

মাঠে মারমুখী আওয়ামী লীগ

ফাইল ছবি

** বিএনপিকে চাপে রাখার কৌশল ক্ষমতাসীনদের ** সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন : বিএনপি **

তৃণমূলের সহিংস কর্মসূচির ঢেউ এখন রাজধানীতেও। উত্তপ্ত রাজপথ। মুখোমুখি আওয়ামী লীগ-বিএনপি। কঠোর অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিএনপির অভিযোগ, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা করছে সরকার। সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে দলটি। আর ক্ষমতাসীনরা বলছে, শান্তিপূর্ণ পথে নয়; বরং সন্ত্রাসের পুরানো পথেই হাঁটছে বিএনপি। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির নামে নৈরাজ্য সৃষ্টিই বিএনপির লক্ষ্য। নির্বাচন বানচালের উদ্দেশ্যে মিত্র জামায়াতকে নিয়ে ষড়যন্ত্রের ছক কষছে দলটি। নৈরাজ্যের হাত থেকে দেশ রক্ষা সরকারের দায়িত্ব। অপশক্তিকে রাজপথে উপযুক্ত জবাব দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে রাজপথে রয়েছে আওয়ামী লীগ। তবে সহিংস আচরণকে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিকাশের প্রধান অন্তরায় হিসেবেই দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, জনগণের হেফাজত যেমন সরকারের দায়িত্ব; তেমনি রাজনৈতিক দলগুলোর শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনে সহযোগিতা করাও রাজনৈতিক উদারতার পরিচয়।

রাজনীতির মাঠে ক্ষমতাসীনদের মারমুখী আচরণের নেপথ্যের কারণ কী- এমন প্রশ্ন রাজনৈতিক মহলে। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, রাজপথের দখল বিএনপির হাতে ছেড়ে দেবে না আওয়ামী লীগ। যেকোনো মূল্যে নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর তারা। এ ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেয়া হবে না। গুলশান কার্যালয় ও পল্টন ছাড়া রাজধানীর আর কোথাও বিএনপিকে দাঁড়াতে দেয়া হবে না। যেখানে দাঁড়াবে, সেখানেই প্রতিবাদ করা হবে। তাদের মতে, নির্বাচনের আরো দেড় বছর বাকি। এখন থেকেই আন্দোলনের নামে নৈরাজ্য চলতে থাকলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নষ্ট হবে। সরকার তা হতে দিতে পারে না। রাজপথে মোকাবিলার মাধ্যমে বিএনপিকে চাপে রাখতে চায় সরকার।

মুখোমুখি আওয়ামী লীগ-বিএনপি: গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুরে সংঘর্ষ হয়। এর আগে সংঘর্ষ হয় উত্তরায়। শনিবার সন্ধ্যায় বনানীতে বিএনপির মোমবাতি প্রজ্বালন কর্মসূচিতে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। বিএনপির কর্মসূচির আশপাশ দিয়ে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’, স্লোগানে জড়ো হন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা। ফলে নির্ধারিত সময়ের আগেই কর্মসূচি শেষ করেন বিএনপি নেতারা। রাত পৌনে আটটার দিকে ওই কর্মসূচিতে পাল্টাপাল্টি হামলায় আহত হয়েছেন বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন, নির্বাহী পরিষদ সদস্য তাবিথ আউয়াল, শ্যামা ওবায়েদসহ কয়েকজন। ওইদিন বিকালে নোয়াখালী থেকে ঢাকা ফেরার পথে কুমিল্লার মনোহরগঞ্জে হামলার শিকার হন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলু। বুলুর ওপর হামলা নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে বিভিন্ন মহলে। তৃতীয় কোনো শক্তির ইন্ধন রয়েছে কিনা এ ব্যাপারে খোঁজ নেয়া হচ্ছে। গতকাল রবিবার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, কুমিল্লায় বিএনপি নেতা বুলুর ওপর হামলা কীভাবে হয়েছে তা তদন্ত করা হবে। কেউ অতি উৎসাহী হয়ে কিছু করছে কিনা, তাও দেখা হবে। তিনি বলেন, বিএনপিকে হঠাৎ করেই মাঠে-ময়দানে দেখা যাচ্ছে। তাদের রাজনৈতিক স্বাধীনতা রয়েছে। তারা গণতান্ত্রিকভাবে কর্মসূচি করলে সরকারের কিছু বলার নেই। কিন্তু যখনই জ্বালাও পোড়াও, ভাঙচুর হবে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নেবে। এদিকে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় মিরপুর এলাকা থেকে বিএনপি ও এর বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের ৯ নেতাকর্মীকে শনিবার রাতে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

আওয়ামী লীগ কেন মারমুখী: দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে টানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সারাদেশে সাংগঠনিক শক্তি জোরদার করার চেষ্টা করছে বিএনপি। বিশ্লেষকরা বলছেন, দলটিকে চাপে রাখতে বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় বাধা, হামলা ও নতুন মামলা দেয়া শুরু হয়েছে। সবশেষ ঢাকায়ও বিএনপিকে কর্মসূচি পালনের ক্ষেত্রে চাপে রাখার কৌশল নিয়েছে ক্ষমতাসীন দল।

দুর্বার গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকারকে পদত্যাগ করানো হবে- হুঁশিয়ারি করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকে বিভিন্ন জায়গায় বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছেন, হামলা করছেন। এসব করবেন না। এভাবে দেশের মানুষকে দাবিয়ে রাখা যাবে না। দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, প্রতিটি হামলার জবাব আমরা দেব। সেই প্রস্তুতি আমরা নিচ্ছি। যারা হামলা চালিয়েছে, সেই কাপুরুষদের প্রতিটি ভিডিও আর ছবি আমাদের কাছে আছে। আপনারা কেউ রেহাই পাবেন না।

আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, বিএনপি নেতারা গণতন্ত্রের ভাষায় কথা না বলে অহেতুক উসকানিমূলক কথাবার্তা বলছেন। নির্বাচন বানচালের হুমকি দিচ্ছেন। দেশের রাজনীতিকে বিএনপি কলুষিত করতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক খাদ্যমন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলাম। তিনি বলেন, জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে প্রকাশ্যে মাঠে নেমেছেন তারা। কোনো সন্ত্রাসীকে বাংলাদেশে রাজনীতি করতে দেয়া হবে না। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিহত করা হবে। বিএনপির আন্দোলনের আলামত ভালো নয়। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উসকে দিচ্ছেন তারা। বিএনপি যদি নাশকতার পথে হাঁটে, তাহলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিহত করা হবে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, গোলযোগ সৃষ্টি করে দেশকে অস্থিতিশীল করা বিএনপির লক্ষ্য। তারা যেকোনো মূল্যে সরকারের পতন ঘটাতে চায়। সরকারের পতন ঘটাতে পারলে অন্য কোনো সামরিক সরকার যদি আসে তাহলে তাদের দণ্ড মওকুফ করে নির্বাচন করার সুযোগ দেবে। এটাই তাদের মূল লক্ষ্য।

সহিংসতায় লাভ কার: আওয়ামী লীগ-বিএনপি সহিংসতায় লাভ কার- এমন হিসেব কষছেন অনেকেই। বিএনপির মতে, এর ফলে বিএনপির আন্দোলন চাঙ্গা হচ্ছে, নেতাকর্মীরা মনোবল ফিরে পাচ্ছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সরকারের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। অন্যদিকে সরকার বিরোধী দলকে রাজনৈতিক কর্মসূচিও পালন করতে দেয় না- এই পুরানো অভিযোগও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তুলে ধরা সহজ হবে। অবশ্য বিএনপি নেতাদের এমন দাবি নাকচ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলছে, জনগণের জানমাল রক্ষার দায়িত্ব পালনে সব ষড়যন্ত্রের জবাব দিতে প্রস্তুত সরকার। হাত গুটিয়ে বসে থাকার দিন শেষ।

এদিকে সহিংসতার রাজনীতি কোনো দলের জন্যই শুভ ফল বয়ে আনে না বরং পরমত সহিষ্ণুতাই রাজনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যায়- এমন মত বিশেষজ্ঞদের। জানতে চাইলে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার ভোরের কাগজকে বলেন, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি করার অধিকার সবার আছে। তবে রাষ্ট্রবিরোধী বা সহিংস কোনো আচরণ হলে সরকার অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু রাস্তায় বিএনপি নেতা বুলুর ওপর হামলা বিষয়টি অবশ্যই প্রশ্নের জন্ম দেয়। এটি কোনো অতি উৎসাহী করেছে কিনা- এটি খোঁজ নিয়ে আইনের আওতায় আনা উচিত। কারণ বিনা উসকানিতে হামলা সরকারের দিকেই আঙ্গুল তোলে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App