×

জাতীয়

কাউন্সিল করতে অটল রওশন, হার্ডলাইনে জি এম কাদের

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১০:৩৭ এএম

কাউন্সিল করতে অটল রওশন, হার্ডলাইনে জি এম কাদের

রওশন এরশাদ ও জিএম কাদের

হঠাৎ করে আবার অস্থিরতা দেখা দিয়েছে সংসদের বিরোধীদল জাতীয় পার্টিতে। জাতীয় পার্টির প্রয়াত চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী দীর্ঘদিন অসুস্থ রওশন ও ভাই জি এম কাদেরের মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসায় দলটিতে এমন অস্থিরতার সৃষ্টি হয়েছে। দলটির দুই বলয়ের অন্তঃকলহ দিন দিন বেড়েই চলেছে। নেতৃত্ব নিয়ে ভুল বোঝাবুঝিতে ভেঙে যেতে পারে জাতীয় পার্টি। বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ আগামী ২৬ নভেম্বর কাউন্সিল সফল করতে অটল। অন্যদিকে কাউন্সিল ঠেকাতে তৎপরতার পাশাপাশি হার্ডলাউনে যাচ্ছেন জি এম কাদের। এরই মধ্যে রওশন এরশাদের পক্ষে কথা বলায় দলের শীর্ষ দুই নেতাকে সব পদপদবি থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। এ অবস্থায় উভয়পক্ষের পাল্টাপাল্টি হুঁশিয়ারি ও তৎপরতায় দলটি আবারো ব্র্যাকেটবন্ধী হতে পারে। সংশ্লিষ্ট সূত্র এমন আভাস দিয়েছে।

পার্টির নেতারা বলছেন, দলে কোণঠাসা হয়ে জি এম কাদের বিরোধীরা রওশন এরশাদকে ভুল বুঝিয়েছেন। এর মধ্যদিয়ে দলে নিজেদের আবারো প্রতিষ্ঠিত করতে চাচ্ছেন তারা। জি এম কাদেরপন্থিরা এদের সুবিধাবাদী বলেই আখ্যায়িত করছেন। জাতীয় পার্টির ভেতরে সবশেষ দ্ব›েদ্বর পেছনে দলের বর্তমান নেতৃত্বের কারণে কোণঠাসা বোধ করা নেতারা রয়েছেন। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের এই অংশটিকে তৃতীয় শক্তি বলে উল্লেখ করেছেন। দলের নেতারা বলছেন, যদি রওশন এরশাদের নেতৃত্বে দল আবার ভাঙে তাতেও মূল দলের কোনো ক্ষতি হবে না। কারণ, জাতীয় পার্টির মূলদল এখন জি এম কাদেরের সঙ্গেই আছে।

দলের বর্তমান পরিস্থিতিতে সম্প্রতি সভাপতিমণ্ডলীর এক সভায় সিদ্ধান্ত হয়, জাতীয় পার্টির মূল দলের যারা রওশন অংশের সঙ্গে যাবেন, তাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। বিষয়টির পুনরাবৃত্তি করে দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের গত শুক্রবার রাজধানীতে হিন্দু মহাজোটের প্রতিনিধি সম্মেলনে বলেছেন, কেউ দলীয় শৃঙ্খলা বিনষ্ট করলে যত প্রভাবশালী নেতাই হোক অথবা যত অর্থ বিত্তের মালিকই হোক, কাউকে ছেড়ে দেয়া হবে না। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৪ সেপ্টেম্বর জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ সব পদপদবি থেকে সংসদের চিফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গাকে অব্যাহতি দেয়া হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশনকে সরিয়ে জি এম কাদেরকে করার বিষয়ে স্পিকারকে চিঠি দেয়ার প্রক্রিয়া সঠিক ছিল না। অব্যহাতির জবাবে জি এম কাদের কীভাবে রাজনীতি করেন তা দেখে নেবেন বলে পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়ে রাঙ্গা বলেন, বেআইনিভাবে তাকে অব্যাহতি দেয়ায় কাদেরকে রংপুরে যেতে দেয়া হবে না। তবে সংগঠনবিরোধী কার্যকলাপের জন্য রাঙ্গাকে অব্যাহতির বিষয়টি জানান দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। এ নিয়ে রংপুর জাপার মধ্যেও পাল্টাপাল্টি প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। রাঙ্গার পর গত শনিবার সাবেক সংসদ সদস্য এডভোকেট জিয়াউল হক মৃধাকে জাতীয় পার্টির সব পদপদবী থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

এদিকে, গত শনিবার রাজধানী গুলশানের জাপা কার্যালয়ে রওশন এরশাদের ডাকা দলের আগামী ২৬ নভেম্বরের দশম জাতীয় সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় থাইল্যান্ড থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে রওশন এরশাদ বলেন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের দলের নেতাদের বহিষ্কার করছেন এবং আরো বহিষ্কার করার হুমকি দিয়ে অগণতান্ত্রিক ও শিষ্টাচার বহির্ভূত আচরণ করছেন, তার এ ধরনের কর্মকাণ্ড দেশজুড়ে লাখ লাখ এরশাদপ্রেমী নেতাকর্মীকে আহত করেছে। দেশ ও গণতন্ত্রের স্বার্থে জি এম কাদেরকে এ ধরনের অনিয়ন্ত্রিত বক্তব্য দেয়া থেকে বিরত থাকার আহ্বানও জানান তিনি। সভায় সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্যসচিব গোলাম মসীহের সঞ্চালনায় আগামী ২৬ নভেম্বরের সম্মেলন সফল করতে ঢাকা মহানগর সমন্বয় কমিটিসহ ১১টি সাংগঠনিক টিম ও ২২টি উপকমিটি গঠন করা হয়। এ সময় রওশন এরশাদ সারাদেশের এরশাদপ্রেমী নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে আগামী সম্মেলন সফল করার আহ্বান জানান।

এর আগে গত ৩১ আগস্ট হঠাৎ করে রওশন এরশাদ বিদেশ থেকে চিঠি দিয়ে নিজেকে আহ্বায়ক ঘোষণা করে আগামী নভেম্বরে দলের কাউন্সিল ডাকলে জাপায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। যদিও দলের গঠনতন্ত্রে রওশন এরশাদের কাউন্সিল ডাকার এখতিয়ার নেই জানিয়ে দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেছেন, রওশন এরশাদ ‘চাপে পড়ে’ দলের কাউন্সিল ডেকেছেন। তার অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে বাইরের কিছু মানুষ হয়তো ভিন্ন এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছে। এছাড়া কাউন্সিল প্রত্যাহারে রওশনের ওপর চাপ প্রয়োগ করা হয় দলের পক্ষ থেকে। এতে ব্যর্থ হয়ে সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার পদ থেকে তাকে বাদ দিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদ সদস্যের মতের ভিত্তিতে দলটির পক্ষ থেকে স্পিকারকে একটি চিঠি দেয়া হয়। যেটি বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন। এ অবস্থায় জাপার কিছু নেতা মনে করেন, ভাবি-দেবরের পুরনো দ্ব›দ্ব নতুন করে দৃশ্যমান হওয়ায় পার্টির ভেতর ঝামেলা সৃষ্টি করবে।

এমন অবস্থায় সামনে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কে দলে থাকবেন, কে বের হয়ে যাবেন, তা এখনো বলা যাচ্ছে না। বিশেষ করে রওশন এরশাদের সর্বশেষ আহ্বায়ক কমিটি গঠনের মধ্যদিয়ে পার্টিতে নতুন করে তৈরি হওয়া অস্থিরতা কোন দিকে মোড় নেয়, তা বলা মুশকিল।

জানা যায়, যে কোনো মূল্যে আগামী ২৬ নভেম্বরের কাউন্সিল সফল করতে চান রওশনপন্থিরা। এ লক্ষ্যে মাঠ পর্যায়ে কাজও শুরু করেছেন তারা। এ বিষয়ে আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব গোলাম মসিহ বলেন, আগামী ২৬ নভেম্বরের কাউন্সিল সফল করতে ইতোমধ্যে আমরা তৃণমূল পর্যায়ে যোগাযোগ শুরু করেছি। জেলা, উপজেলা পর্যায় থেকে শুরু করে সব স্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করছি। আমরা রাজধানীর গুলশান, বনানী ও তোপখানা রোডের অফিসের কার্যক্রমও শুরু করেছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দলে ভাঙনের সুর কেন উঠবে। রওশন এরশাদ তো কাউকে বাদ দিয়ে কাউন্সিল ডাকেননি। এখন যদি কেউ না আসেন, তাহলে ম্যাডামের কি করার আছে? এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পার্টির সংসদীয় দল স্পিকারের কাছে যে চিঠি দিয়েছে তাতে আমরা বিক্ষুব্ধ, বিস্মিত। বেগম রওশন এরশাদ এ মাসেই দেশে ফিরবেন। পরবর্তী পদক্ষেপ তিনি জানাবেন।

তবে দলটির জি এম কাদেরপন্থি শীর্ষ এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রওশনপন্থিরা কাউন্সিল করলেও তাতে মূল দলের কোনো ক্ষতি হবে না। মূল দল জি এম কাদেরের নেতৃত্বেই ঐক্যবদ্ধ আছে। রওশন এরশাদ ঠিক কাজ করছেন না। দলের নেতাকর্মীরা রওশন এরশাদের কাছে এটা আশা করে না। সুযোগ সন্ধানী কিছু লোক রওশন এরশাদের নেতৃত্বে দলকে ভাঙতে চায়। কাউন্সিল হলে দল ভাঙনের মুখে পড়বে কি না, জবাবে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, রওশন এরশাদের নেতৃত্বে কাউন্সিল হলে পার্টি দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে মুখামুখি অবস্থান নিতে পারে। এর পরবর্তী পরিস্থিতি আরো জটিল হতে পারে। যার প্রভাব পড়বে আগামী নির্বাচনে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App