×

জাতীয়

ফের চড়েছে চাল-ডিম

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৮:৫৩ এএম

ফের চড়েছে চাল-ডিম

ছবি: ভোরের কাগজ

সব নিত্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী > টয়লেট্রিজ ও বিস্কুটের বাজার গরম

বাজারে আবারো বাড়তে শুরু করেছে চাল ও ডিমের দাম। এই দুই খাদ্যপণ্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে চিনি, তেল, লবণ এবং মুরগির দাম। দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে আরেক ধাপ এগিয়ে সুপারশপগুলো। রাজধানীর সুপারশপগুলোতে ট্রয়লেট্রিজ পণ্য থেকে শুরু করে কেক, বিস্কুট এবং প্রসাধনীর দামও বাড়ানো হয়েছে। দাম বাড়ানোর পেছনে ডলারের দাম বাড়া এবং আমদানি নির্ভরতার অজুহাত দেখাচ্ছে তারা। শুধু এসব পণ্যেরই দাম বাড়েনি, কাঁচাবাজারেও নাজেহাল ভোক্তা। বাজারে দাম বাড়লেই অভিযান শুরু হয়, এতে কিছুটা প্রভাব পড়ে দামে। কিন্তু অভিযান শেষ হলে ফের বাড়িতে দামেই বিক্রি হতে থাকে পণ্য। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো- ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে নির্ধারিত কোনো সীমা না থাকলেও সব সমস্যা কমানোর ক্ষেত্রে। তখন নানা ধরনের অজুহাত আসতে থাকে। এতে প্রতিনিয়ত পকেট কাটা যাচ্ছে ভোক্তার। নিত্যপণ্যের এমন বেসামাল বাজারে দিশেহারা সাধারণ মানুষ। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, গরিবের চালের দাম আবারো বাড়তে শুরু করেছে। বেসরকারি খাতে আমদানির অনুমতি, খুচরা, পাইকারি ব্যবসায়ী এবং মিলার পর্যায়ে অভিযানে কিছুটা স্তিমিত হয়েছিল চালের দামের ঊর্ধ্বগতি। কিন্তু দুই সপ্তাহ পার না হতেই শেষ এই অভিযানের ফল। আবারো অস্থিরতা শুরু হয়েছে চালের বাজারে। ইতোমধ্যে মোটা চালের (স্বর্ণ) দাম বেড়ে ৫৫ টাকা হয়েছে। দুই সপ্তাহ আগেও রাজধানীর বাজারে ৫২ টাকা ছিল এই চালের দাম। মোটা চালের সঙ্গে কেজি প্রতি সরু চালের দাম বেড়েছে ২ টাকা। ৭২ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া নাজিরশাইল এখন প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৭৪ টাকায়।

চালের দামের বিষয়ে জানতে চাইলে নওগাঁর ধান-চাল আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নিরোধ গড়ন সাহা ভোরের কাগজকে বলেন, ধানের দাম বাড়ার কারণে মূলত চালের দাম বেড়েছে। এখন কৃষকের কাছে ধান নেই। এছাড়া আমদানিও হচ্ছে না। সব মিলে আগে এই মৌসুমে যে পরিমাণে ধান আসত, এখন এই পরিমাণে ধান আসছে না। যে কারণে চালের একটা সংকট তৈরি হয়েছে। মৌসুমের আগে চালের দাম কমার কোনো সম্ভাবনা নেই; বরং আরো বাড়তে পারে বলে মনে করেন এই ব্যবসায়ী নেতা।

ডিমের আড়তদার ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল শনিবারও প্রতি ডজন ডিম খুচরা বাজারে বিক্রি হয়েছে ১৫০ টাকায়। যা গত সপ্তাহেও ছিল ১২০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিডজন ডিমে দাম বেড়েছে ৩০ টাকা। অর্থাৎ প্রতিটি ডিমের দাম বেড়েছে ২ টাকারও বেশি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, টানা বৃষ্টিতে সরবরাহ সংকটে এমন হয়েছে। আবার কেউ বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে মুরগির খাদ্যের উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়া, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় এবং ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া অন্যতম একটি কারণ। এসব কারণে যখন গত মাসে ডিমের দাম বেড়েছে, সে সময় প্রশাসনের চাপে বাধ্য হয়ে দাম কমানো হয়েছিল। কিন্তু সমস্যা সমাধান না হওয়ায় আবারো বাড়ছে। এরমধ্যে কেউ বলছেন, ডিম নিয়ে কি হচ্ছে সেটা এখনো পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে না। মধ্যস্বত্বভোগীরা আবারো ডিম নিয়ে খেলা শুরু করেছে। তবে ডিমের দাম যতটা বেড়েছে, ততটা বাড়ার কথা নয় বলেও অনেকে স্বীকার করেছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিম উৎপাদনকারী সমিতির সভাপতি তাহের আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, আসলে ডিমের দাম বাড়ার কোনো কারণ আমরা দেখছি না। আমরা আগের দামেই ডিম বিক্রি করছি। খামারে ডিমের দাম বাড়েনি। উৎপাদনও কমেনি। কিন্তু আমরা শুনেছি পাইকারি বাজারে ১৩৫ টাকা ডজন বিক্রি হচ্ছে। যা দুদিন আগে ১২০ টাকা ছিল। আর চাইলেও আমরা দাম নির্ধারণ করতে পারি না। আমরা তো এক টাকাও বাড়তি পাচ্ছি না। আড়তদার আর বড় বড় কোম্পানি সিন্ডিকেট করছে। তারা দিনে ৫ লাখ ডিম উৎপাদন করে। ২ টাকা দাম বাড়াতে পারলে দিনে ১০ লাখ টাকা লাভ করেন। তারাই দাম বাড়িয়েছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। এজন্য ভোক্তা অধিদপ্তরের জোরদার অভিযান চালানোরও দাবি করেন এই ডিম উৎপাদক।

বেসামাল নিত্যপণ্যের বাজারে দামের লাগাম টানতে উদ্যোগী হয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে সরকারি পর্যায়ে ৯টি পণ্যের দাম বেঁধে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। মধ্যবিত্তের আমিষ বলে খ্যাত ডিমের দাম নিয়ে গতকাল শনিবার একটি সংবাদ সম্মেলনে ডিম আমদানি করে দাম কমানোর বিষয়ে মত দেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি বলেন, ডিম আমদানির বিষয়ে ইতোমধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের মতামত জানতে চাওয়া হয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয় মত দিলে ডিম আমদানি করা হবে বলেও জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী।

বাজারে শুধু চাল বা ডিম নয়; এমন নানা ধরনের অজগুবি অজুহাতে বেড়েছে নিত্যপণ্যের দাম। বাজারে খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটার বিক্রি হয়েছে ১৮০ টাকায়। যা দুই সপ্তাহ আগে ১৭৫ টাকা ছিল। প্রতি কেজি চিনি ৯৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা আগে ৯০ টাকা ছিল। প্রতি কেজি প্যাকেট লবণ ৩৮ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা আগে ছিল ৩৫ টাকা। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছে ১৮০ টাকায়।

বাজারে বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, চাল ও ডিমের দাম আবারো বাড়তে শুরু করেছে। এজন্য সরকারকে কড়া পদক্ষেপ নিতে হবে। যেসব ব্যবসায়ী অতি মুনাফা করছেন, তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। আর ডিমের দাম বেশি বাড়লে বাজারের মূল্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমদানির অনুমতি দেয়া যেতে পারে বলেও অভিমত সরকারের সাবেক এই কর্মকর্তার।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ডিপার্টমেন্টাল স্টোর ঘুরে ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সুপাশপগুলোতে বিভিন্ন পণ্যের দাম ইচ্ছেমতো বাড়ানো হয়েছে। এক্ষেত্রে খোঁড়া যুক্তি দেখানো হয়। বাজারে বড় আকারের পাউরুটি বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকায়। যা আগে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা ছিল। ৩০০ গ্রাম ওজনের প্যাকেট চানাচুর বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা। যা আগে ৭৫ টাকা ছিল। ৮ পিসের প্যাকেট নুডুলস বিক্রি হয়েছে ১৬০ টাকা। যা আগে ১৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এনার্জি বিস্কুটের প্যাকেট বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকা, যা আগে ৩৮ টাকা ছিল। ১০ টাকা বেড়ে পাইনেপল বিস্কুটের প্যাকেট বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকায়। প্রতি কেজি টোস্ট বিস্কুট ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছে ১৬০ টাকায়। প্রতি লিটার কোক ৫ টাকা বেড়ে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ৬০০ গ্রাম ওজনের প্রাণ সসের বোতল ৭৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা আগে ৬২ টাকা ছিল। ৮০ টাকায় বিক্রি হওয়া এক কেজির ওয়াশিং পাউডার এখন ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ইউনিলিভারের রিন পাউডার মাত্র এক মাসের ব্যবধানে ১৫০ টাকা থেকে বেড়ে ১৮০ টাকা হয়েছে। ৫০০ গ্রামের সার্ফ এক্সেল দুই সপ্তাহ আগে ছিল ১০৫ টাকা, যেটা বর্তমানে ১৪০ টাকা। আবার ৩২০ মিলিগ্রামের সানসিল্ক শ্যাম্পুর দাম বর্তমানে ৪৬০ টাকা, যেটা কয়েকদিন আগেও সর্বোচ্চ ৩৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ২০০ মিলির জিলেট শেভিং জেল মূল্য ২৫০ টাকার স্থলে ৩২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মানভেদে ২০০ গ্রাম ওজনের সব ব্র্যান্ডের টুথপেস্টের দাম ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। ২০০ গ্রাম ওজনের কোলগেট টুথপেস্টের দাম ১৩০ থেকে বেড়ে হয়েছে ১৫০ টাকা। তবে সুশাপরশপ কর্তৃপক্ষ বলছে, অনেক পণ্যের দাম যৌক্তিকহারে বাড়ানো হয়েছে। শিল্পের যে পণ্যগুলো আছে তা উৎপাদন করতে কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। আমদানি পর্যায়ে দাম বাড়ানোর কারণে বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়েছে বলেও মনে করে তারা। এই বিষয়ে সুপারশপ স্বপ্ন-এর নির্বাহী পরিচালক সাব্বির হাসান নাসিরের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App