×

সম্পাদকীয়

বায়ুদূষণ কমছে না : প্রাণঘাতী এই বিপদ ঠেকান

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১২:২৫ এএম

বায়ুদূষণ কমছে না : প্রাণঘাতী এই বিপদ ঠেকান

রাজধানী ঢাকায় বায়ুদূষণের মাত্রা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। শিল্পবর্জ্যরে কারণেও রাজধানীসহ অন্যান্য শহরে বায়ুদূষণ বাড়ছে ক্রমাগত। শিল্পাঞ্চলের আশপাশে বসবাসকারী জনগোষ্ঠী মারাত্মক সব রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বায়ুদূষণের মাত্রা নিয়ে বারবার সতর্ক করা হলেও যেন সংশ্লিষ্টরা উদাসীন। গতকাল শুক্রবার দূষণের তালিকায় ৩১তম শহর হিসেবে ঠাঁই পেয়েছে ঢাকা। ঢাকা শহরের স্কোর এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স স্কোর ৬৫। ৫০-১০০-এর মধ্যে একিউআই স্কোরকে ‘মধ্যম’ বলা হয়। সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই, তাইওয়ানের কাওশিউং ও পাকিস্তানের করাচি যথাক্রমে ১৫৬, ১৫৩ ও ১৪১ একিউআই স্কোর নিয়ে তালিকায় প্রথম তিনটি স্থানে রয়েছে। ঢাকা দীর্ঘদিন ধরে বায়ুদূষণে ভুগছে। এর বাতাসের গুণমান সাধারণত শীতকালে অস্বাস্থ্যকর হয়ে যায় এবং বর্ষাকালে কিছুটা উন্নত হয়। ২০১৯ সালের মার্চ মাসে পরিবেশ অধিদপ্তর ও বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ঢাকার বায়ুদূষণের তিনটি প্রধান উৎস হলো- ইটভাটা, যানবাহনের ধোঁয়া ও নির্মাণ সাইটের ধুলা। ২০২০ সালে ১৩ জানুয়ারি বায়ুদূষণ রোধে মাত্রাতিরিক্ত কালো ধোঁয়া নির্গমনকারী যানবাহন জব্দসহ ৯ দফা নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। নির্দেশনাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়া বিভিন্ন ধরনের টায়ার পোড়ানো ও ব্যাটারি রিসাইক্লিং বন্ধ করা; ঢাকার পার্শ্ববর্তী নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুর ও মানিকগঞ্জে অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করে দুই মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল; নির্ধারিত মাত্রার বেশি কালো ধোঁয়া নিঃসরণকারী গাড়ি জব্দ করা; সিটি করপোরেশনের ধুলাবালিপ্রবণ এলাকায় নিয়মিত পানি ছিটানো অন্যতম। এসব নির্দেশনা কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে সেটা দেখার বিষয়। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ভারী ও বিষাক্ত পদার্থ যেমন- সিসা, ক্রোমিয়াম, ক্যাডমিয়াম, নিকেল, আর্সেনিক, ম্যাঙ্গানিজ, কপার ও কার্বন ডাই-অক্সাইডসহ অন্যান্য বিষাক্ত পদার্থ ঢাকার বায়ুতে মাত্রাতিরিক্ত রয়েছে। দেখা যাচ্ছে, ঢাকাতে এই মাত্রার চেয়ে তিন-চার গুণ বেশি বিষাক্ত পদার্থের উপস্থিতি রয়েছে। বৃষ্টির দিনে এই মাত্রা কিছুটা কম হলেও, শীতে তা মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। বছরের পর বছর ধরে এই বায়ুদূষণ চলছেই। জানা গেছে, গত ৪০ বছরে ঢাকা শহরে সুউচ্চ ভবন ও অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে ৭৫ শতাংশ চাষযোগ্য জমি হারিয়ে গেছে। অপরিকল্পিতভাবে শিল্পকারখানা স্থাপনে ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে বায়ুদূষণ ক্রমাগত বাড়ছে। ক্ষতিকর উপাদানগুলোর ব্যাপক হারে নিঃসরণ ঘটছে। যাদের বেশিরভাগই দরিদ্র জনগোষ্ঠী তারা সিসা দূষণের ঝুঁকিতে রয়েছে। এ কারণে বিশেষ করে শিশুদের বুদ্ধিমত্তা বিকাশে (আইকিউ) ও স্নায়ুবিক ক্ষতি হতে পারে এবং গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভপাত ও মৃত শিশু প্রসবের ঝুঁকি বৃদ্ধি পেতে পারে। পরিবেশ দূষণ ও পরিবেশ সংরক্ষণ বর্তমান সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। এ ব্যাপারটি সম্পর্কে আমাদের সচেতনতা আছে। কিন্তু নেই সুনির্দিষ্ট উদ্যোগ এবং অভিজ্ঞতা, যা কাজে লাগিয়ে বাস্তবায়ন করা যায় বসবাসযোগ্য পরিবেশ। জাতীয়ভাবে পরিবেশ রক্ষার জন্য এবং পানি সুরক্ষার জন্য আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসা উচিত, সচেতন হওয়া উচিত। সর্বোপরি পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধে পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে পরিবেশ অধিদপ্তরকে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App