প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য অর্জন : জাতীয় শিক্ষার্থী মূল্যায়নের যথার্থতা
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১২:২৬ এএম
আনুষ্ঠানিক শিক্ষার প্রথম ধাপ হলো প্রাথমিক শিক্ষা। প্রাথমিক স্তরের যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৯৯২ সালে প্রবর্তন করা হয়। শিক্ষাক্রম উন্নয়ন একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। এই পরিপ্রেক্ষিতে ২০০২ সালে যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম প্রথমবারের মতো পরিমার্জন করা হয়। প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও প্রান্তিক যোগ্যতা থেকে শুরু করে বিষয়ভিত্তিক প্রান্তিক যোগ্যতা, শ্রেণিভিত্তিক অর্জন উপযোগী যোগ্যতা ও শিখনফল নতুনভাবে নির্ধারণ করা হয়। শিশুর শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, নৈতিক, মানবিক, নান্দনিক, আধ্যাত্মিক, আবেগিক বিকাশ সাধন এবং তাদের দেশাত্মবোধ, বিজ্ঞানমনস্কতায়, সৃজনশীলতায় ও উন্নত জীবনের স্বপ্নদর্শনে উদ্বুদ্ধ করাই প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে প্রাথমিক শিক্ষায় ১৩টি উদ্দেশ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এই ১৩টি উদ্দেশ্যকে ফলপ্রসূ করতে ২৯টি প্রান্তিক যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়েছে। ২৯টি প্রান্তিক যোগ্যতার ওপর ভিত্তি করে প্রাথমিক শিক্ষায় ১২টি বিষয় লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। সে বিষয়ের আলোকে রয়েছে ১৮৯টি বিষয়ভিত্তিক প্রান্তিক যোগ্যতা। এই বিষয়ভিত্তিক প্রান্তিক যোগ্যতাকে আবার শ্রেণিভিত্তিক অর্জন উপযোগী যোগ্যতায় ভাগ করা হয় এবং এর আলোকে শিখনফল নির্ধারণ করা হয়। বর্তমানে নির্দিষ্ট স্তরের শিক্ষার্থীর জাতীয় শিক্ষাক্রমে বর্ণিত শ্রেণি ও বিষয়ভিত্তিক যোগ্যতা অনুযায়ী তার স্তরের অধীত বিষয়ের নির্ধারিত শিখনফলগুলোর কতটুকু অর্জন করতে পেরেছে তার ওপর মূল্যায়ন করার কৌশল নির্ধারণ করা হয়েছে। এই নির্দিষ্ট স্তরের শিক্ষার্থীর শিখনফল অর্জন পরিমাপ করার কৌশলই হলো জাতীয় শিক্ষার্থী মূল্যায়ন। শিক্ষাক্রমে বর্ণিত শ্রেণি ও বিষয়ভিত্তিক অর্জন উপযোগী যোগ্যতা সরাসরি পরিমাপ করা যায় না বিধায় শিখনফলের মাধ্যমে যোগ্যতা পরিমাপ করা হয়। এটি একটি নমুনাভিত্তিক মূল্যায়ন। এই মূল্যায়নে শিখনফলে গুরুত্ব দেয়ায় তা একজন শিক্ষার্থীর যথাযথ মূল্যায়ন সম্ভব হবে বলে আমি মনে করি। বর্তমান পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের মাঝে যে প্রতিযোগিতার মনোভাব লক্ষ্য করা যায় তাতে একজন শিক্ষার্থীর শেখার চেয়ে বা শিখনফল অর্জিত হওয়ার চেয়ে ভালো ফলাফল অধিক গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। এই দুঃসহ অবস্থা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। এমনিতেই করোনা মহামারির কারণে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছিল। দীর্ঘদিন বিদ্যালয় থেকে দূরে থেকে পড়ালেখার প্রতি শিক্ষার্থীদের মাঝে এক ধরনের অনাগ্রহ তৈরি হয়েছিল। তাই শিখন ঘাটতি পূরণে এই ‘জাতীয় শিক্ষার্থী মূল্যায়ন’ এক অনন্য ভূমিকা রাখতে পারে। এটি একদিকে যেমন প্রতিযোগিতার দৌরাত্ম্য থেকে শিক্ষার্থীদের মুক্তি দেবে তেমনি দীর্ঘদিনের শিখনফল ঘাটতি দূর করবে। শিক্ষার্থীর পরীক্ষা ভীতি দূর করে পঠিত বিষয়ের আলোকে শিখনফল অর্জনের এই মূল্যায়ন করতে এখানে শিক্ষকদের ভূমিকা অনন্য বলে আমি মনে করি। একজন শিক্ষক আন্তরিকতা, দক্ষতা ও নিজস্ব কৌশল অবলম্বন করে পাঠদান করলে খুব সহজেই শিখনফল অর্জিত হবে। আর পাঠকে ফলপ্রসূ করার জন্য বা শিখনফল অর্জনের লক্ষ্যে শিক্ষক পরিস্থিতি অনুসারে একাধিক পদ্ধতি ও কৌশলের সংমিশ্রণে নিজের মতো করে পাঠ পরিচালনা করতেই পারেন। সে ক্ষেত্রে পাঠদান কার্যক্রমে শিক্ষককে যথার্থ স্বাধীনতা দেয়া দরকার বলে আমি মনে করি। সুতরাং জাতীয় শিক্ষার্থী মূল্যায়নের ক্ষেত্রে শিখন-শেখানো পদ্ধতি ও কৌশল অবলম্বন করে শিক্ষাক্রমের সুষ্ঠু বাস্তবায়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর শিখনফল নিশ্চিতকরণ অর্থাৎ শিখন অর্জনে বিষয়শিক্ষক, শ্রেণিশিক্ষকসহ শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সবার সক্রিয় সহযোগিতা ও যথোপযুক্ত শিখন-শেখানো পদ্ধতি ও কৌশলের সুষ্ঠু প্রয়োগ অত্যন্ত জরুরি। পরিশেষে এইটুকুই বলা যায়, শিক্ষার্থীর শিখনফল পরিমাপের এই কৌশল অর্থাৎ জাতীয় শিক্ষার্থী মূল্যায়ন একটি অনবদ্য প্রক্রিয়া। যা দেশের শিক্ষাকার্যক্রমের অগ্রগমনকে অধিকতর শ্রেয়, সৌষ্ঠবপূর্ণ ও গতিশীল করবে এবং শিক্ষার্থীর শিখনফলকে দৃৃঢ়, নিশ্চল ও বলিষ্ঠ করবে, যা প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য অর্জনে সচেষ্ট হবে।
অনিতা দেব : সহকারী শিক্ষক, চন্দ্রনাথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার।