×

খেলা

ফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ নেপাল

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৮:১৭ পিএম

ফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ নেপাল

ভুটানের দুই খেলোয়াড়কে কাটিয়ে বল নিয়ে ছুটছেন বাংলাদেশের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন।এ টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৮টি গোল করেছেন তিনি।

নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালে শুক্রবার ভুটানকে ৮-০ গোলে উড়িয়ে ফাইনালে উঠেছে বাংলাদেশের মেয়েরা। এ ম্যাচে দুই অর্ধে ৪টি করে গোল করে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। ফাইনালে ওঠার এই ম্যাচে সাবিনা হ্যাটট্রিক করেন। ১টি করে গোল করেছেন সিরাত জাহান, ঋতুপর্ণা চাকমা, কৃষ্ণা রানি সরকার, মাসুরা পারভীন ও তহুরা খাতুন। এ টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৮টি গোল করেছেন সাবিনা।

জাতীয় দলের হয়ে তার গোলসংখ্যা ৩২। চলতি সাফে এটা সাবিনার দ্বিতীয় হ্যাটট্রিক। প্রথম হ্যাটট্রিক পাকিস্তানের বিপক্ষে। এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো সাফের ফাইনালে উঠেছে বাংলাদেশ। ২০১৬ সালে ভারতের শিলিগুঁড়ির আসরে প্রথম ফাইনাল খেলেছিল গোলাম রব্বানী ছোটনের শিষ্যরা। শুক্রবার দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ভারতকে ১-০ গোলে হারিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করে নেপাল। ১৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের বিপক্ষে ফাইনালে মাঠে নামবে স্বাগতিক নেপাল।

ভুটানকে গোল বন্যায় ভাসানোর পর শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সংবাদ সম্মেলনে কোচ ছোটন বলেন, আমাদের লক্ষ্য ছিল ফাইনাল খেলা। তবে কত গোল হবে তা ভাবিনি। জেতা আমাদের জরুরি ছিল। ঢাকা থেকে আসার সময় আমরা প্রতিজ্ঞা করেছিলাম ফাইনালে যাব। মেয়েরা পুরো ম্যাচ জুড়েই ভালো খেলেছে। তিন ম্যাচেই ভাল ব্যবধানে জিতেছি আমরা।’ ফরোয়ার্ড সিরাত জাহান স্বপ্না চোট পেলেও সেটা গুরুতর নয় বলে জানিয়েছেন কোচ।

কোচ যেমন ফুটবলারদের প্রশংসা করেছেন, তেমনি অধিনায়ক সাবিনাও কোচকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন, ‘স্যারের সঙ্গে আমাদের প্ল্যানিংটা দুর্দান্ত। তিনি যেভাবে প্ল্যান করেছেন, সেভাবে খেলার চেষ্টা করেছি। স্যার সবসময় আমাদের সঙ্গেই থাকেন। বড় প্রাপ্তি বললেন তিনিই। অবশ্যই এটা স্যারের ক্রেডিট। স্যারের মতো একজন শিক্ষক পেয়েছি বলেই মেয়েরা এত উজ্জীবিত।’ নিজের হ্যাটট্রিকে দল ফাইনালে যাওয়ায় একটু বেশি তৃপ্ত তিনি, ‘ভালো লাগছে বড় ব্যবধানে জিতে। সবসময় চেষ্টা করি নিজের সেরাটা দিতে। আরও ভালো দেয়ার চেষ্টা করব ফাইনালে।’

নেপালের কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে শুক্রবার ম্যাচের শুরু থেকেই আধিপত্য বিস্তার করে বাংলাদেশের মেয়েরা। গোল পেয়ে যায় ম্যাচ শুরু হতেই, ১ মিনিট ৩৪ সেকেন্ডে। মনিকা চাকমার থ্রু পাস নিয়ন্ত্রণে নিয়ে গোলরক্ষককে কাটিয়ে নিখুঁত কোনাকুনি শটে লক্ষ্যভেদ করেন সিরাত জাহান স্বপ্না। পঞ্চম মিনিটে মারিয়া মান্দার শট সরাসরি গোলরক্ষকের গ্লাভসে জমে যায়। একটু পরই পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে বক্সের বাইরে এসে ভুটানের আক্রমণ ভেস্তে দেন গোলরক্ষক রুপনা চাকমা। দ্বাদশ মিনিটে বাঁ দিক দিয়ে আক্রমণে ওঠা স্বপ্না প্রতিপক্ষের এক ডিফেন্ডারের চার্জে পড়ে যান। বেশ কিছুক্ষণ চিকিৎসা নেওয়ার পর খোঁড়াতে খোঁড়াতে মাঠ ছাড়েন এই ফরোয়ার্ড। বদলি নামেন ঋতুপর্ণা।

১৭তম মিনিটে গোলরক্ষককে কাটিয়ে দারুণ গোলে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন সাবিনা। মাঝমাঠের একটু উপর থেকে নিখুঁত ক্রসে এ গোলের সুর বেঁধে দিয়েছিলেন মারিয়া মান্ডা। ২৪তম মিনিটে মনিকার ক্রসে কৃষ্ণা পা ছুঁইয়েছিলেন, কিন্তু বল যায় পোস্টের বাইরে। ৩০তম মিনিটে মনিকার আড়াআড়ি ক্রসে কৃষ্ণার হেড এক ড্রপ খেয়ে জালে জড়ালে ম্যাচে চালকের আসনে বসে বাংলাদেশ। পাঁচ মিনিট পর মনিকার থ্রু পাস পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে এসে স্লাইড করলেও পুরোপুরি বিপদমুক্ত করতে পারেননি গোলরক্ষক। তিনি স্লাইড করার পর ঋতুপর্ণার পায়ে লেগে বল তার সামনেই পড়ে। বাঁ পায়ের নিচু শটে ফাঁকা পোস্টে বল জালে জাড়ান এই ফরোয়ার্ড।

ভুটানের জালে ৪ গোল দিয়ে বিরতিতে যায় বাংলাদেশ। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধেও এতটুকু গোল করার ক্ষুধা কমেনি বাংলাদেশের মেয়েদের। অবশ্য ফাইনালের কথা ভেবেই কিনা কোচ গোলাম রব্বানী দলের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় মনিকা চাকমা, মারিয়া মান্ডা, শিউলি আজিম, কৃষ্ণা রানী সরকারকে তুলে নেন। তাদের বদলে মাঠে নামেন তহুরা খাতুন, শামসুন্নাহার জুনিয়র, নীলুফার ইয়াসমিন ও স্বপ্না রানী। এই চারজন নামার পর খেলায় গতি বেড়েছে আরও। আক্রমণে আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়েছে ভুটানের রক্ষণ।

৫৩তম মিনিটে সাবিনা নিজের দ্বিতীয় গোল দিলে বাংলাদেশ এগিয়ে যায় ৫-০ গোলে। ডান দিক থেকে বক্সে আড়াআড়ি ক্রস বাড়ান সানজিদা। অরক্ষিত সাবিনা দেখে-শুনে ঠাণ্ডা মাথায় ডান পায়ের শটে লক্ষ্যভেদ করেন। ৫৭তম মিনিটে সাবিনার ফ্রিকিক ভূটানের গোলরক্ষকের হাত থেকে ছুটে গেলে মাসুরা পারভীন আলতো শটে বল জালে পাঠিয়ে ব্যবধান ৬-০ করেন। একটু পর সানজিদার শট ক্রসবার কাঁপায়। ৮০তম মিনিটে বাংলাদেশ জালে বল জড়ালেও বাজে অফসাইডের বাঁশি। ৮৭তম মিনিটে গোলমুখ থেকে টোকায় লক্ষ্যভেদ করেন তহুরা। ইনজুরি সময়ে নিজের হ্যাটট্রিক পূরণ করে দলের জয় নিশ্চিত করেন অধিনায়ক সাবিনা খাতুন। এর আগে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচেও হ্যাটট্রিক করেন তিনি। সব মিলিয়ে ৮ গোল করে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোল স্কোরার তিনি।

এ নিয়ে টানা চার জয়ে ফাইনালে উঠেছে বাংলাদেশ। এছাড়া এ জয়ে ভুটানের বিপক্ষে শতভাগ জয়ের ধারা ধরে রাখল বাংলাদেশ। সাফে এর আগে তাদের বিপক্ষে খেলা তিন ম্যাচেই জিতেছিল দল। দ্বিতীয় সেমিফাইনালে মুখোমখি ভারত-নেপালের মধ্যকার জয়ী দলের বিপক্ষে শিরোপা জয়ের লক্ষ্যে মাঠে নামবে সাবিনারা।

এর আগে সাবিনার জোড়া গোলে গ্রুপপর্বের প্রথম ম্যাচে মালদ্বীপকে ৩-০ গোলে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। এরপর সাবিনার হ্যাটট্রিকে দ্বিতীয় ম্যাচে পাকিস্তানকে ৬-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল লাল-সবুজের জার্সিধারীরা। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে শক্তিশালী ভারতকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে শেষ চারে জায়গা করে নিয়েছিল সাবিনারা। দলের হয়ে জোড়া গোল করেন সিরাত জাহান স্বপ্না। অপর গোলটি আসে কৃষ্ণা রানী সরকারের পা থেকে। অন্যদিকে গ্রুপ পর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে নেপালের কাছে ৪-০ গোলে হারে ভুটান। তিন দলের বি গ্রুপে তারা দ্বিতীয় সেরা দল হয় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৫-০ গোলে জিতে। এর আগে কখনোই ভুটান প্রতিপক্ষকে এক ম্যাচে ৫ গোল দেয়নি। এমনকি কখনোই ওঠেনি মেয়েদের সাফের সেমিফাইনালে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App