×

জাতীয়

বাণিজ্য সহজীকরণের নীতি বাস্তবায়নের আহবান

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৫:০৪ পিএম

বাণিজ্য সহজীকরণের নীতি বাস্তবায়নের আহবান

রাজধানীর এনইসি সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক কর্মশালায় বক্তব্য রাখছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।

স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের সুফল পেতে হলে বাংলাদেশকে ট্রেড ফেসিলিটেশন বা বাণিজ্য সহজীকরণের নীতি ও পদ্ধতিসমূহ সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর এনইসি সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক কর্মশালায় সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা এই কথা বলেছেন। উত্তরণের প্রেক্ষাপটে তাঁরা ব্যবসা-বাণিজ্যের পদ্ধতি সরলীকরণ ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহের মধ্যে প্রয়োজনীয় সমন্বয় সাধনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন।

স্বল্পোন্নত দেশ হতে বাংলাদেশের উত্তরণ পরবর্তী সময়ে শুল্কমুক্ত কোটামুক্ত রপ্তানির সুবিধা ক্রমশ উঠে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে সম্ভাব্য নেতিবাচক প্রভাব নিরসনের ক্ষেত্রে বাণিজ্য সহজীকরণ পদ্ধতিসমূহ কি ভূমিকা পালন করতে পারে তা আলোচনা ও পর্যালোচনার জন্য অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)-এর সাপোর্ট টু সাস্টেইনেবল গ্র্যাজুয়েশন প্রকল্প (এসএসজিপি) ও মেট্রোপলিটান চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এমসিসিআই) কর্তৃক যৌথভাবে ‘Augmenting Competitiveness by Improving Trade Facilitation’ শীর্ষক কর্মশালার আয়োজন করা হয়। বাণিজ্য সহজীকরণ সংক্রান্ত আইনগত, প্রশাসনিক ও প্রযুক্তিগত বিষয়ে প্রয়োজনীয় সংস্কারের ক্ষেত্রসমূহ নিয়েও কর্মশালায় আলোকপাত করা হয়।

কর্মশালার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নৌপরিবহন সচিব মোঃ মোস্তফা কামাল এবং এমসিসিআই-এর সভাপতি সাইফুল ইসলাম। কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন ইআরডি সচিব মিজ শরিফা খান।

একটি দেশের সার্বিক বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডে গতি আনয়নে বাণিজ্য সহজীকরণের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বাণিজ্য সহজীকরণের জন্য বাণিজ্য সংক্রান্ত নিয়ম, নীতি ও পদ্ধতিসমূহের প্রয়োজনীয় আধুনিকীকরণ ও সমন্বয় সাধন প্রয়োজন। বাণিজ্য সহজীকরণ ব্যবসা-বাণিজ্যের দক্ষতা ও প্রতিযোগিতা সক্ষমতা অর্জন এবং বাণিজ্য সম্পাদনে সময় ও খরচ কমিয়ে আনতে সহায়তা করে।

স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণ পরবর্তী সময়ে শুল্কমুক্ত কোটামুক্ত রপ্তানির সুবিধা ক্রমশ উঠে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের রপ্তানির ক্ষেত্রে কোনো ধরনের নেতিবাচক প্রভাব নিরসনের লক্ষ্যে এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে দেশের সার্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সম্ভাব্য সকল বাণিজ্য সহজীকরণ নীতিপদ্ধতিসমূহ বাস্তবায়ন করা অত্যাবশ্যক বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।

উল্লেখ্য যে বৈশ্বিক বাণিজ্যে আরও গতি আনয়নের লক্ষ্যে গত ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে একটি ট্রেড ফেসিলিটেশন এগ্রিমেন্ট (টিএফএ) বা বাণিজ্য সহজীকরণ চুক্তি অনুমোদিত হয় যা ২০১৭ সালে কার্যকর হয়। বাংলাদেশ গত ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬ সালে চুক্তিটি অনুসাক্ষর করেছে এবং বর্তমানে তা বাস্তবায়নের কাজ করছে। স্বল্পোন্নত দেশসমূহের জন্য টিএফএ চুক্তি পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নের সুযোগ রয়েছে। তবে উত্তরণের পর এই সুবিধাটি কিছুটা কমে আসবে।

কর্মশালায় বক্তব্য প্রদান কালে বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন যে স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের জন্য প্রস্তুত হতে হলে বাংলাদেশকে ট্রেড ফেসিলিটেশন সংক্রান্ত নীতি ও পদ্ধতিসমুহ আবশ্যিভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।

ইআরডি সচিব মিজ শরিফা খান তাঁর বক্তব্যে বাণিজ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন নিয়মকানুন ও পদ্ধতিসমূহ আরও সহজ ও সমন্বিত করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব জনাব মোঃ মোস্তফা কামাল তাঁর বক্তৃতায় বন্দর ও লজিস্টিকস সংক্রান্ত উন্নয়ন কার্যক্রমসমূহ আরও সমন্বিত ও সুসংগঠিত উপায়ে বাস্তবায়নের ওপর জোর দেন। তিনি জানান চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সরকার একাধিক প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে যার ফলে উক্ত বন্দর দিয়ে পণ্য প্রেরণ ও খালাসের সময় অনেক কমে আসবে। আন্তদেশীয় বাণিজ্য সহজতর করার লক্ষ্যে কয়েকটি স্থলবন্দর অচীরেই চালু করা হবে বলে নৌপরিবহন সচিব জানান।

এমসিসিআই-এর সভাপতি জনাব সাইফুল ইসলাম তাঁর বক্তৃতায় দেশের বন্দরসমূহের দক্ষতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। এই প্রেক্ষাপটে তিনি বন্দরসমূহের ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার কাজে খ্যাতিসম্পন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানকে নিয়োজিত করার আহ্বান জানান।

কর্মশালায় আলোচনাকালে বক্তারা দেশে ব্যবসাবাণিজ্যের ব্যয় হ্রাস ও প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পদ্ধতিগত যে সময় ব্যয় হয় তা আরও কমিয়ে আনার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

কর্মশালায় জানানো হয় যে বাণিজ্য সংক্রান্ত আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়াসমূহ ডিজিটাল পদ্ধতিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পাদনের লক্ষ্যে গৃহীত সিঙ্গল উইন্ডো পদ্ধতি বাস্তবায়নের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। সিঙ্গল উইন্ডো পদ্ধতির মাধ্যমে কার্যক্রম পরিপূর্ণভাবে শুরু হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে সমন্বয় সাধন এবং স্বল্প সময়ে সার্বিক প্রক্রিয়া সম্পাদন আরও সহজতর হবে। কর্মশালার মূল বিষয়বস্তুর উপর উপস্থাপনা প্রদান করেন ইউ এস এইড-এর অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন ‘ফিড দ্য ফিউচার বাংলাদেশ ট্রেড একটিভিটি’-এর সিনিয়র কাস্টমস স্পেশালিস্ট জনাব মোঃ রইচ উদ্দিন খান।

কর্মশালার প্যানেল আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ডঃ মোঃ খায়েরুজ্জামান মজুমদার, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য ডঃ আবদুল মান্নান শিকদার, বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)-এর পরিচালক জনাব আসিফ আশরাফ ও পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ডঃ এম মাসরুর রিয়াজ।

কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইআরডি-এর অতিরিক্ত সচিব ও এসএসজিপি-এর প্রকল্প পরিচালক জনাব ফরিদ আজিজ। সরকারি ও বেসরকারি খাতের সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিবৃন্দ এবং বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবৃন্দ কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App