×

সাহিত্য

‘পোহালে শর্বরী’ এক রাতের গল্পে চিরবঞ্চনার আখ্যান

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৯:২১ পিএম

‘পোহালে শর্বরী’ এক রাতের গল্পে চিরবঞ্চনার আখ্যান

‘পোহালে শর্বরী’ নাটকের একটি দৃশ্য। ছবি: ভোরের কাগজ

‘পোহালে শর্বরী’ এক রাতের গল্পে চিরবঞ্চনার আখ্যান
‘পোহালে শর্বরী’ এক রাতের গল্পে চিরবঞ্চনার আখ্যান
‘পোহালে শর্বরী’ এক রাতের গল্পে চিরবঞ্চনার আখ্যান

অভাবের সংসারে বেড়ে ওঠা কন্যা শীলবতীর আপাত সুপ্রসন্ন ভাগ্য তাকে রাজস্ত্রী করে তোলে। কিন্তু মল্লরাজ্যের রাজা ওক্কাকের ধনসম্পদের কমতি না থাকলেও শরীরী বিষয়ে আছে দ্বিধা, সংশয় ও অক্ষমতা। সেই কারণে স্ত্রীকে সন্তুষ্ট করতে অসমর্থ এই রাজপুরুষ এক পর্যায়ে মহামাত্যের রাজনীতির ফাঁদে পড়ে। উত্তরাধিকারী তৈরির জন্য কুমারী স্ত্রী শীলবতীকে ঠেলে দেয়া হয় উপপতির গলায় মালা পরিয়ে দিতে।

রাজবংশের উত্তরাধিকারী সৃষ্টির জন্য নারীর এই অপমানজনক যাত্রা ও অক্ষম পুরুষের হাহাকার দিয়েই ‘পোহালে শর্বরী’ নাটকটির প্রারম্ভ। হিন্দি ‘পোহালে শর্বরী’ মানে ‘সুরয কি অন্তিম কিরণ সে সুরয কি পহেলি কিরণ তক’, অর্থাৎ গোধূলিলগ্ন থেকে ঊষাকাল। এ যেন প্রাচীন কাল থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত নিপীড়নের শিকার নারীর জীবনেরই গল্প।

মঙ্গলবার বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে মঞ্চায়ন হলো বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রায় সমবয়সী অন্যতম পথিকৃৎ নাট্যদল থিয়েটারের ‘পোহালে শর্বরী’।

হিন্দি ভাষার সাহিত্যিক সুরেন্দ্র বর্মার ‘সুরয কি অন্তিম কিরণ সে সুরয কি পহেলি কিরণ তক’ রচনা থেকে ‘পোহালে শর্বরী’ অনুবাদ করেছেন অংশুমান ভৌমিক। নির্দেশনা দিয়েছেন রামেন্দু মজুমদার এবং সংযুক্ত নির্দেশনায় ছিলেন ত্রপা মজুমদার। পোশাক পরিকল্পনায় নাট্যব্যক্তিত্ব ফেরদৌসী মজুমদার। এ ছাড়া মঞ্চ, আলো ও সামগ্রী পরিকল্পনায় পলাশ হেন্ড্রি সেন, আবহ সংগীত পরিকল্পনায় তানভীর আলম সজীব, কোরিওগ্রাফি পরিকল্পনায় স্নাতা শাহরীন, রূপসজ্জায় শুভাশীষ দত্ত তন্ময়।

মহাভারতের যুগের ‘মাধবী’ থেকে আমাদের কালের ‘কোকিলারা’ শুধু পুরুষের প্রয়োজনেই ব্যবহৃত হয়েছে। এই নাটকে দেড়-দুই হাজার বছরের আশপাশের এক কালপর্বে নারীর কামনা-বাসনার কোনো মূল্য না দিয়ে নিছক সন্তান উৎপাদনের যন্ত্র হিসেবে বিবেচনা করার এক কাহিনি বিধৃত হয়েছে। তার পাশাপাশি রয়েছে ধর্মের নামে গোঁড়ামি ও রাজনীতির ক‚টকৌশল, যার শিকার হয়েছে পুরুষও। সামাজিক বিধি-বিধান, ব্যক্তি মানস বিশেষ করে নারীর চাওয়া-পাওয়াকে মর্যাদা দিতে এখনো উদাসীন। ‘পোহালে শর্বরী’ নাটকে তারই প্রতিধ্বনি হলো।

নাটকটিতে স্থান-কাল-পাত্রের ক্ষেত্রে শিল্পের স্বাধীনতা নিয়েছে থিয়েটার। স্থান বা পাত্র কিছুটা নির্দিষ্ট করা গেলেও কালের ক্ষেত্রে ধরাবাঁধা নিয়মে খুব একটা বাঁধতে দেখা যায়নি। পোশাক ও মঞ্চসজ্জায় সেটি ছিল স্পষ্ট। দুই বছরের বেশি সময় আগে নাটকটির কাজ শুরু করেছিল থিয়েটার। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে মাঝে প্রস্তুতি থেমে যায়।

থিয়েটার জানায়, নাটকটির প্রতিটি চরিত্রের জন্য দুজন করে অভিনেতা অভিনেত্রী তৈরি করা হয়েছে। ফলে একদিকে যেমন দলের বেশি কর্মী কাজের সুযোগ পেয়েছেন, অন্যদিকে তেমনি কারো সমস্যার কারণে যেন প্রদর্শনী আটকে না যায়, সেটিও বিবেচনায় আনা হয়েছে।

শীলবতী চরিত্রেও অভিনয় করেছেন যথাক্রমে তানজুম আরা পল্লী ও তানভিন আরা সুইটি। আরো অভিনয় করেছেন গুলশান আরা, মাহমুদা আক্তার, নাজমুন নাহার, সামিয়া মহসীন, আপন আহসান, নূর-এ-খোদা মাশুক সিদ্দীকি, মুশফিকুর রহমান, সামিরুল আহসান, তানভীর হোসেন সামদানী, রাশেদুর রহমান, রবিন বসাক, জোয়ারদার সাইফ প্রমুখ।

অন্যদিকে, একই সময়ে জাতীয় নাট্যশালার পরীক্ষণ থিয়েটার হলে মঞ্চায়ন হয় বাতিঘর প্রযোজিত নাটক ‘মাংকি ট্রায়াল’।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App