×

জাতীয়

দেশীয় কয়লা উত্তোলনে গুরুত্ব

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৯:২৪ এএম

দেশীয় কয়লা উত্তোলনে গুরুত্ব

প্রতীকী ছবি

বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে নীতি ও পরিবেশ, বিশ্বে কয়লার ব্যবহার বেড়েছে

দেশীয় কয়লার উত্তোলনে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। কিন্তু দেশের পরিবেশগত সমস্যা, সরকারের নীতি এবং উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তের অভাবে কয়লার উত্তোলন হচ্ছে না। অথচ দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিসহ দেশের ৫টি কয়লার খনিতে মোট ৭ হাজার ৮০০ মিলিয়ন টন কয়লা মজুদ রয়েছে। বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) সূত্রে এসব জানা গেছে।

সূত্র জানায়, বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই পরিবেশ রক্ষায় কয়লার ব্যবহার কমানোর ওপর জোর দেয় বিশ্বের উন্নত দেশগুলো। কয়লার ব্যবহার বন্ধের উদ্যোগও নেয় উন্নত দেশগুলো। কিন্তু অব্যাহতভাবে জ্বালানির চাহিদা বাড়তে থাকায় ২০১৮ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সারাবিশ্বে আবার কয়লার ব্যবহার ৫ শতাংশ বেড়ে যায়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর এখন কয়লা ব্যবহারের ক্ষেত্রে আবার নতুন করে ভাবছে সব দেশ। এক্ষেত্রে বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই।

পরিবেশগত বিধিনিষেধ থাকলেও বিকল্প জ্বালানি হিসাবে দেশীয় কয়লা উত্তোলন ও অনুসন্ধানের ওপর জোর দেয়া হয়েছে। চীন একাই বিশ্বের ৫০ শতাংশ কয়লা জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করলেও বাংলাদেশ মাত্র ১ মিলিয়ন টন কয়লা উৎপাদন করে। চীন, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়া বিশ্বের শীর্ষ সাতটি কয়লা উৎপাদনকারী দেশ। অথচ সরকারের কয়লা নীতি, সিদ্ধান্ত ও পরিবেশগত সমস্যার কারণে বাংলাদেশে কয়লা অনুসন্ধান কার্যক্রম এবং ব্যাপকহারে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।

পরিবেশগত সমস্যা: ২০০৬ সালে এশিয়া এনার্জি নামের এক প্রতিষ্ঠান দিনাজপুরের ফুলবাড়ি, বিরামপুর আশপাশের এলাকায় বিশাল কয়লার খনিতে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনের উদ্যোগ নেয়। এই খবর জানতে পেরে ব্যাপক গণবিক্ষোভের সৃষ্টি হয়। আনসারের গুলিতে বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারী নিহত হয়। গণবিক্ষোভের মুখে এশিয়া এনার্জি দিনাজপুর থেকে সরে আসে এবং কয়লা উত্তোলনের উদ্যোগ থেমে যায়। এরপর দেশীয় কয়লা উত্তোলনে জন্য কোনো সরকারের পক্ষ থেকেই আর কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এখন পর্যন্ত দেশীয় কয়লার উত্তোলন থেমে আছে।

তবে বিশ্বে বর্তমান জ্বালানি সংকটের মুখে সরকার আবার দেশীয় কয়লা ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। পেট্রোবাংলা গবেষণায় দিনাজপুরের দীঘিপাড়া, ফুলবাড়ী, জয়পুরহাটের জামালগঞ্জ ও রংপুরের খালাশপীরের খনিতে কয়লার মজুদ রয়েছে বলেও নিশ্চিত করেছে। কিন্তু কয়লা উত্তোলনের বিষয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।

যদিও দেশীয় কয়লা উত্তোলন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী বলেছেন, উন্মুক্ত পদ্ধতিতে আমরা দেশের কয়লা উত্তোলনে যাব না। পরিবেশগত কারণেই এই পদ্ধতি আমাদের জন্য ভালো হবে না। এটা করা হলে অনেক মানুষ ক্ষতির সম্মুখীন হবে। বিকল্প উপায়ে কয়লা উত্তোলনের ব্যবস্থা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে।

একই ধরনের কথা বলেছেন বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ কর্পোরেশনের (পেট্রোবাংলা) চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান। তিনি বলেন, দেশের খনি থেকে কয়লা উত্তোলনের বিষয়ে সরকার নতুন করে চিন্তা-ভাবনা শুরু করেছে। বড়পুকুরিয়াসহ এখন দেশে ৫টি কয়লা খনিতে মোট ৭ হাজার ৮০০ মিলিয়ন টন কয়লার মজুদ রয়েছে বলে আমরা গবেষনা করে দেখেছি। কিছু পরিকল্পনা রয়েছে এবং কিছু কাজও হয়েছে। তবে বড়পুকুরিয়া ছাড়া দীঘিপাড়া, ফুলবাড়ী, জামালগঞ্জ ও খালাশপীর কয়লা খনির কয়লা কিভাবে উত্তোলনের ব্যবস্থা নেয়া হবে তা সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে।

ভূতত্ত্ববিদ ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, কয়লার অনুসন্ধান, ব্যবহার ও উত্তোলন নিয়ে বিরোধিতা রয়েছে। তবে আমি বলবো, কয়লা নিয়ে সরকারের গুরুত্ব সহকারে ভেবে দেখার সময় হয়েছে। মাটির নিচে কয়লা সম্পদ রেখে দিয়ে লাভ নেই, ব্যবহারেই লাভ। দেশীয় খনির কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর জন্য বড় ধরনের অবদান রাখতে পারে। বড়পুকুরিয়া থেকে কয়লা উঠছে। এখন ফুলবাড়ী ও দীঘিপাড়ার খনি থেকে কয়লা উঠানোর সুযোগ রয়েছে। এটা ব্যাহার করতে পারলে আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ অনেক কমে যাবে।

পেট্রোবাংলার একটি সূত্র জানায়, দিনাজপুরের দীঘিপাড়া খনি থেকে কয়লা উত্তোলনের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। ইতিমধ্যেই এই খনির সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছে। ২০১৭ সালে নেদারল্যান্ডসের প্রতিষ্ঠান ফুগরো, জার্মানির প্রতিষ্ঠান মিবরাগ কনসাল্টিং ইন্টারন্যাশনাল ও অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক প্রতিষ্ঠান রাঞ্জ পিনকক মিনারকো এই তিনটি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে কনসোর্টিয়াম গঠনের পর তাদের সঙ্গে বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড (বিসিএমসিএল) চুক্তি করে।

এই কনসোর্টিয়াম ২০২০ সালের শুরুতে পেট্রোবাংলার কাছে তাদের প্রতিবেদন দাখিল করে। তারা প্রতিবেদনে ভূগর্ভস্থ পদ্ধতিতে অর্থাৎ বড়পুকুরিয়ার মতো ‘সুড়ঙ্গ পদ্ধতি’ ব্যবহার করে কয়লা উত্তোলনের পক্ষে মতামত জানায়। কিন্তু তারা যে পরিমান ব্যয়ের কথা বলছে তা সত্যিকার অর্থে অনেক বেশি বলে মনে হচ্ছে। এ কারণে কনসোর্টিয়ামের প্রতিবেদনটি এখন ব্রিটিশ কোম্পানি ডিএমটির মাধ্যমে পর্যালোচনা করানোর কাজ চলছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App