×

জাতীয়

মুক্তিযুদ্ধে শিক্ষিতদের অংশগ্রহণ কম ছিল: আসাদুজ্জামান নুর

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৮:০২ পিএম

মুক্তিযুদ্ধে শিক্ষিতদের অংশগ্রহণ কম ছিল: আসাদুজ্জামান নুর

রবিবার জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে বক্তব্য রাখেন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নুর।ছবি: ভোরের কাগজ

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তথাকথিত শিক্ষিত শ্রেণির মানুষের অংশগ্রহণ কম ছিল, অপরপক্ষে নিরক্ষর কৃষকের সন্তানেরাই মুক্তিযুদ্ধে বেশি অংশগ্রহণ করেছিল বলে উল্লেখ করেছেন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নুর (এমপি)।

রবিবার (১১ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক জন-ইতিহাস ইন্সটিটিউটের শততম আয়োজন উপলক্ষে কিশোরের মুক্তিযুদ্ধ, মেসবাহ কামালের স্মৃতি ও সংগ্রাম শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এই কথা বলেন।

এসময় তিনি বলেন, আমাদের দেশের মুক্তিযু্দ্ধের ইতিহাসের প্রকৃত সত্য হলো, মুক্তিযুদ্ধে যারা অংশগ্রহণ করেছিলেন তাদের মধ্যে শতকরা ৭০ ভাগ ছিল নিরক্ষর কৃষকের সন্তান। যারা ইতিহাস, রাজনীতি বা ইতিহাসবিদদের জীবনী পড়ে জ্ঞান অর্জন করেছে তাদের সংখ্যাটা আদতে কম ছিল।

তিনি আরও বলেন, ১৬ ডিসেম্বর বা ২৬ মার্চ এলে আমরা টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দেখি। এতে শহুরে দুএকজন মুক্তিযোদ্ধা কথা বলেন। তবে এর বাইরেও অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে আছেন। তাদের কথা আমরা শুনি না।

গ্রামের নিরক্ষর কৃষকের সন্তান যারা হয়তো সর্বোচ্চ স্কুল পর্যন্ত পড়েছে তাদের মধ্যে গভীর দেশপ্রেমের ভাবনাটা কীভাবে এলো সেটা আমাদের ভাবিয়ে তোলে। একটা লুঙ্গি, গেঞ্জি পরে তারা হালকা অস্ত্র নিয়ে রাতে বেরিয়ে পড়েছে পাকিস্তানের মতো শক্তিশালী একটি সেনাবাহিনীর সামনে। এই সাহস, দেশপ্রেম কোথা থেকে তারা পেলো?

এসময় তিনি বলেন, তাদের বিশ্বাসের জায়গাটা ছিল অন্তত প্রবল যে, দেশ স্বাধীন হবে এবং আমরা একটা স্বাধীন সার্বভৌম দেশ পাবো। তবে এই বিশ্বাসের জন্ম হয়েছে কোথা থেকে? এই প্রশ্নের উত্তর হলো, বঙ্গবন্ধু বলেছেন যুদ্ধে যেতে হবে। দ্বিতীয় কোনো বিষয় তাদের মাথায় ছিলো না। প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধার কাছে বঙ্গবন্ধু সশরীরে উপস্থিত ছিলেন না কিন্তু সশরীরে উপস্থিত না থেকে এত প্রবলভাবে উপস্থিত থাকতে পারে সেটা মুক্তিযুদ্ধে যারা অংশগ্রহণ করেননি তারা অনুভব করতে পারবেন না।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক চলচ্চিত্র নির্মাতা ফুয়াদ চৌধুরী বলেন, মুক্তিযুদ্ধে শিশু, কিশোরেরা অমানুষিক যা কিছু দেখেছে মানসিকভাবে তাদেরকে সারাজীবন ধরে এটা কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। এছাড়াও ধর্ষণ দ্বারা পুরো জাতি বা কমিউনিটিকে অপমান করা হয়। যা পাকিস্তানিরা আমাদের করেছে। পাকিস্তানি যোদ্ধাদের অস্ত্র দেয়া হয় এবং যা খুশি সেটা করার ক্ষমতা দেয়াতে তারা তাদের শৃঙ্খলা হারিয়ে ফেলেছিল।

তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধে শিশু কিশোরদের অবদানকে যেভাবে তুলে ধরার কথা সেভাবে তুলে ধরা হয় না। তাদের ইতাহাসকে চর্চা করার আহ্বান জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদানকালে আন্তর্জাতিক জন-ইতিহাস ইন্সটিটিউটের সভাপতি অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা স্মৃতিচারণ করে বলেন, একাত্তরে আমাদের সবার বয়স অন্তত ১০ বছর করে বেড়ে গিয়েছিল। সে সময়টা এমন ছিলো যে মনে হতো ইথারে কথা ভেসে আসছে। কোনো ঘটনা ঘটলে সারা দেশে মুহূর্তের মধ্যেই ছড়িয়ে যেতো। রেডিও টেলিভিশন তখন পাকিস্তান সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল। তার পরেও বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতা একদিন পরে প্রচারিত হয়েছে।

জন ইতিহাস ইন্সটিটিউটের অনুষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক বিভাগের সম্পাদক অঞ্জন মেহেদীর সঞ্চালনা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুল মমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন জন ইতিহাস ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. সানিয়া সিতারা। এছাড়াও এতে বক্তব্য দেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও দর্শন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও ইতিহাসবিদ অধ্যাপক শরিফ উদ্দিন আহমদ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App