×

সম্পাদকীয়

ভ্যাট আদায়ে ঘাটতি : প্রশাসনিক সংস্কার ও নজরদারি জরুরি

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৪:৩৭ এএম

প্রত্যাশা অনুযায়ী ভ্যাট আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না বলে ঘাটতি বেড়েই চলেছে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে ভ্যাটের লক্ষ্যমাত্রা বেশি হলেও আদায় কম। বৈশ্বিক অর্থনীতির বিরূপ প্রভাব, অন্যান্য বছরের তুলনায় উন্নয়ন প্রকল্পে অনুমোদন কমে যাওয়া, ভ্যাট আহরণের বড় বড় প্রতিষ্ঠানের শৈথিল্য, ভোজ্যতেলসহ বিভিন্ন পণ্যে ভ্যাট অব্যাহতি এবং মাঠ প্রশাসনের সঠিক নজরদারির অভাবে ভ্যাট আদায়ে বিপর্যয় নেমে এসেছে। চলতি অর্থবছরের আগস্ট মাসে ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮ হাজার ২১৪ কোটি টাকা। সাময়িক হিসাবে ভ্যাট আদায় হয়েছে ৭ হাজার ৫৩ কোটি টাকা। শুধু আগস্ট মাসেই ঘাটতির পরিমাণ ১ হাজার ১৬০ কোটি টাকা। যদিও এই সময়ে এনবিআরের গড় প্রবৃদ্ধি ৬.৫৯ শতাংশ, আমদানি-রপ্তানির প্রবৃদ্ধি ২০.০৪ শতাংশ, আয়কর খাতে প্রবৃদ্ধি ২.৭৯ শতাংশ। অথচ রাজস্ব আহরণের প্রধান খাত ভ্যাটের অবস্থা উদ্বেগজনক। ভ্যাট আদায়ের প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক অর্থাৎ মাইনাস ২.৯৬ শতাংশ। সরকারি প্রকল্পের উৎসে কর ছাড়া ভ্যাটের আরেকটি বড় স্টেকহোল্ডার সিগারেট কোম্পানিগুলো। কিন্তু এবারের বাজেটে এক্ষেত্রে বেশি রাজস্ব পাওয়া যাবে এই ধরনের কার্যকর কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। আগের থেকে একটু বাড়ানো হলেও তা বাস্তব পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে যথেষ্ট নয়। এ বিষয়ে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে আমরা আশাবাদী। ভ্যাট আদায়ে একটি প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা দিতে গিয়ে অন্যরা বৈষম্যের শিকার হয় বলে অভিযোগ রয়েছে, যার প্রভাব পড়ে সার্বিক ভ্যাট আদায়ে। এসব বৈষম্যের নিরসন না হলে ভ্যাট আদায় বাধাগ্রস্ত হবে, সন্দেহ নেই। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিপরীতে জনস্বার্থে ভোজ্যতেল আমদানিতে ভ্যাট কমিয়েছে সরকার। সেই সঙ্গে জ¦ালানি তেল ও চালে ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এতে ভ্যাট আহরণে কিছুটা প্রভাব পড়েছে। তবে ভ্যাট কমিশনারেটগুলোর নজরদারির অভাব রয়েছে অনেকাংশে। দীর্ঘদিন ধরে দুর্বল কাঠামো দিয়ে ভ্যাট প্রশাসন চালানো হচ্ছে বলে বারবার অভিযোগ ওঠে। ভ্যাট আদায়ে সুফল পেতে কর্তৃপক্ষকে মাঠ প্রসাশনের দুর্বলতা চিহ্নিত করে তা সমাধানে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এক্ষেত্রে প্রশাসনিক সংস্কারের কোনো বিকল্প নেই। মাঠপর্যায়ের ভ্যাট আদায়ে শ্লথগতি প্রভাব ফেলছে সামগ্রিক অর্থনীতিতে। এছাড়া আমাদের দেশে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বাড়তি মুনাফার লোভে রাতারাতি আমদানি পণ্যের দাম কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়। সেই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ পণ্যের দামও বেড়ে হয় আকাশছোঁয়া। যার নেতিবাচক প্রভাব সরাসরি পড়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনে। সংসারের খরচ মেটাতে খরচের তালিকা কাটছাঁট না করে তখন উপায় থাকে না। ফলে সার্বিক ভ্যাট আদায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অসাধু ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি নিশ্চত করা গেলে তা সব ক্ষেত্রেই মঙ্গলজনক হবে। দেশের অর্থনীতির আকার-আয়তন, বাণিজ্যসহ অন্যান্য তথ্য-উপাত্ত আমলে নিলে নির্দিষ্ট ভ্যাট আদায় কঠিন কিছু নয়। পরিকল্পিত উদ্যোগ নিলে এটা সম্ভব। ভ্যাট আদায় বাড়াতে ভ্যাট কমিশনারেটগুলোর নজরদারি ও সমন্বয় সাধন, মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনের দক্ষতা ও সক্ষমতা বাড়ানো, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার পাশাপাশি দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ জরুরি। সঙ্গে রাজস্ব প্রদানে সেবা নিশ্চিত, অনুকূল রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আইন-কানুন সময়োপযোগী করা গুরুত্ব পাবে। পরিকল্পনাজনিত সমস্যা তো রয়েছেই, সঙ্গে রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক নানা জটিলতা। আছে দুর্নীতির অভিযোগও। এসব সমস্যা নিরসনে সরকারকে আরো জোরালো ভূমিকা নিতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App