×

সারাদেশ

সেতু হলে বদলে যাবে উত্তরাঞ্চলের অর্থনৈতিক দৃশ্যপট

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৮:৩৯ পিএম

সেতু হলে বদলে যাবে উত্তরাঞ্চলের অর্থনৈতিক দৃশ্যপট

ছবি: ভোরের কাগজ

দেশে দারিদ্র্যের শীর্ষে কুড়িগ্রাম জেলা। এর দুটি উপজেলা রৌমারী ও চর রাজিবপুর ব্রহ্মপুত্র নদ দিয়ে জেলা সদর থেকে বিচ্ছিন্ন। তবে উপজেলা দুটি স্থলপথে ময়মনসিংহ, শেরপুর ও জামালপুর জেলার সাথে যুক্ত। স্বাধীনতার ৫০ বছরেও জেলা সদরের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ স্থাপন হয়নি উপজেলা দুটির। কুড়িগ্রাম শহরের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয় এ দুই উপজেলার চার লক্ষাধিক মানুষকে। কেবল যোগাযোগ ব্যবস্থার জটিলতার কারণে জরুরী রোগি ও প্রসূতিদের উপযুক্ত চিকিৎসা মেলে না। বস্তুত দেশ এগিয়ে গেলেও স্বাধীনতার মুক্তাঞ্চলখ্যাত রৌমারী ও চর রাজিবপুর উপজেলা উন্নয়নের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারছে না।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, কুড়িগ্রামের চর রাজিবপুর উপজেলায় দেশের সবচেয়ে বেশি দরিদ্র মানুষের বসবাস। দারিদ্র্যের হার ৭৯ দশমিক আট। উপজেলাটির জনসংখ্যা প্রায় ৮৫হাজার। অন্তত ৩০টি চর রয়েছে। এসব চরের বাসিন্দারের বেশিরভাগ হতদরিদ্র। অন্যদিকে তৃতীয় স্থানে রয়েছে রৌমারী উপজেলা। এ উপজেলায় দারিদ্র্যের হার ৭৬ দশমিক ৪।

স্থানীয়দের মতে, জেলা সদর থেকে বিচ্ছিন্নতা, ভঙ্গুর যোগাযোগ ব্যবস্থা ও নদীভাঙন ও বেকারত্ব উপজেলা দুটিকে দারিদ্র্যতার শীর্ষে নিয়ে গেছে। এলজিইডি ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কুড়িগ্রাম জেলা সদর থেকে রাজধানী ঢাকার দূরত্ব ৪০০কিলোমিটার। অন্যদিকে রৌমারী থেকে ঢাকার দূরত্ব মাত্র ২৬০ কিলোমিটার। জেলা সদর থেকে রৌমারী ও চর রাজিবপুর উপজেলার দূরত্ব ৬৩ কিলোমিটার। এর মধ্যে ২২কিলোমিটার দুর্গম নদীপথ। বর্ষা মৌসুমে এ নদীপথ পাড়ি দিতে সময় লাগে ৩-৪ ঘন্টা। শুষ্ক মৌসুমে ৬-৭ ঘন্টারও বেশি সময় লাগে।

জনদুর্ভোগের কথা চিন্তা করে ২০০৬ ও ২০০৭ সালের দিকে রৌমারী-কুড়িগ্রাম সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের প্রস্তাব করেছিল স্থানীয় এলজিইডি। এ নিয়ে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখালেখিও হয়েছিল। প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, কুড়িগ্রাম শহর থেকে ধরলা সেতু পেরিয়ে যাত্রাপুর পর্যন্ত পাকা সড়ক রয়েছে। সেখান থেকে মোল্লারহাট পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার একটি সেতু নির্মাণ অথবা ফেরি পারাপারের ব্যবস্থা করলে রৌমারী ও চর রাজিবপুর যাতায়াত খুব সহজ হবে।

অথবা রৌমারীর বলদমারা খেয়াঘাট থেকে মাত্র ৬ কিলোমিটার চিলমারী উপজেলার ফকিরের হাট পর্যন্ত পাকা সড়ক ও একটি ব্রিজের ব্যবস্থা করলে কুড়িগ্রামের সঙ্গে উপজেলা দুটির সড়ক যোগাযোগ পূর্ণাঙ্গভাবে স্থাপিত হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সম্ভাবনায় এলাকাবাসীর মাঝে স্বস্তি দেখা দিলেও পরে আর কিছু শোনা যায়নি।

রৌমারী উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মাহমুদা আক্তার স্মৃতি বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদের কারণে উন্নত চিকিৎসা , কৃষি, শিক্ষাসহ নানা জটিলতায় পরতে হচ্ছে এ উপজেলার মানুষকে। সেতু নির্মাণ হলে মানুষের আর দুর্ভোগ থাকবে না। এতে জীবন মান বাড়ার পাশাপাশি চাঙ্গা হবে পিছিয়ে পড়া রৌমারী ও চর রাজিবপুর উপজেলার অর্থনীতির চাকা।

রৌমারীর বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বন্দবেড় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের বলেন, ৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এই রৌমারী ছিলো মুক্তাঞ্চল। এ অঞ্চলটি স্বাধীনতার পর থেকেই অবহেলিত। এ এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি, ব্রহ্মপুত্র নদের উপর একটি সেতু বাস্তবায়ন করার।

স্থানীয় সংসদ সদস্য, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন বলেন, স্বাধীনতার মুক্তাঞ্চল ছিলো রৌমারী। এখানে ৬৫ হাজার মুক্তিযোদ্ধা ট্রেনিং নিয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদের উপর সেতু এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন। এটি নির্মাণ হলে বঙ্গবন্ধু সেতুতে চাপ অনেক কমবে। হাজারও মানুষের কর্মসংস্থান হবে, বেকারত্ব কমবে। এতে কুড়িগ্রামসহ দেশের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App