×

সাহিত্য

শিক্ষার সঙ্গে সাংস্কৃতিক সমন্বয় না ঘটালে দেশ অগ্রসর হবে না

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১০:২০ পিএম

শিক্ষার সঙ্গে সাংস্কৃতিক সমন্বয় না ঘটালে দেশ অগ্রসর হবে না

ছবি: সংগৃহীত

অসাম্প্রদায়িক ও শোষণমুক্ত গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় সাংস্কৃতিক জাগরণ গড়ে তুলতে সংস্কৃতির সব শাখার কর্মীদের ঐক্য জোরদার করে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় জানিয়েছেন সংস্কৃতিজনেরা। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় সংস্কৃতির শক্তিতে জেগে উঠো বাংলাদেশ শিরোনামে শুক্রবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকালে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ৮ম কেন্দ্রীয় সম্মেলন ও জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়।

উদ্বোধনী পর্বে বক্তারা বলেছেন, সামাজিক অবক্ষয়সহ যে কোনো বিপর্যয় থেকে জাতিকে রক্ষা করতে সাংস্কৃতিক বিকাশের বিকল্প নেই। সে জন্য এই খাতে পৃষ্ঠপোষকতা বাড়ানোর জন্য রাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানান তারা। বক্তারা বলেন, দেশ থেকে উগ্রতা-সহিংসতার বীজ নির্মূল করতে হলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তুলতে হবে।

শিল্পকলা একাডেমীর জাতীয় নাট্যশালার উন্মুক্ত চত্বরে জাতীয় সঙ্গীতের সাথে পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে সম্মেলন শুরু হয়। এ আয়োজন উদ্বোধন করেন দেশবরেণ্য সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. অনুপম সেন। সভাপতিত্ব করেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। আলোচনায় অংশ নেন সংস্কৃতিজন রামেন্দু মজুমদার, আসাদুজ্জামান নূর এমপি, মামুনুর রশিদ, মফিদুল হক, নাসির উদ্দিন ইউসুফ, সারা যাকের, ঝুনা চৌধুরী। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব মো. আহকাম উল্লাহ্ ।

সম্মেলনের উদ্বোধক অনুপম সেন বলেন, সমাজে মানবিকতা বিরোধী শক্তি জেগে উঠেছে যা রাষ্ট্র ও সমাজকে ধ্বংস করতে চায়। এর বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক কর্মীদের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। বাংলাদেশের ইতিহাসে বারবার সংস্কৃতি কর্মীরা সে দায়িত্ব পালন করে এসেছে, আগামীতেও করতে হবে। কারণ সংস্কৃতি কর্মীরা কখনো স্তব্ধ হয় না, তারা ব্যর্থ হয় না। মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় তারা তাদের ওপরে ঐতিহাসিকভাবে অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে একতাবদ্ধ হবে - এটাই প্রত্যাশা। কেননা, সংস্কৃতি কর্মীরা যখন এগিয়ে যায় তখন সাধারণ মানুষ এগিয়ে আসে। মানুষের চোখে যখন ঠুলি পড়ে তখন সংস্কৃতি কর্মীরা দৃষ্টি খুলে দেন।

সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর বলেন, শিক্ষার সঙ্গে সংস্কৃতির সমন্বয় ঘটাতে না পারলে দেশ এগুবে না। এই উপলব্ধি সরকার, শিক্ষক, মা বাবাসহ সবাইকে উপলব্ধি করতে হবে। কারণ, অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, আজও বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তি হিসেবে অনেকেই নিজেদের পরিচিতি তুলে ধরে। স্বাধীন দেশে এটা হতে পারে না। কিন্তু তা ঘটছে। এদের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলের যে ভূমিকা তার থেকে সম্মিলিত জোটের ভূমিকা কম নয়।

রামেন্দু মজুমদার বলেন, সমাজে সাম্প্রদায়িকতা ছড়িয়েছে, নৈতিকতার চরম ক্ষয় হয়েছে। শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষকের অবমাননা ঘটছে। দুর্নীতি হচ্ছে, বখাটেপনা ছড়াচ্ছে সমাজে। মানুষ এসব ঘটনার প্রতিবাদ করছে না। সংস্কৃতি কর্মীদের কাজ হবে সমাজের এসব অন্যায়ের প্রতিবাদ করা।

নাট্যজন মামুনুর রশীদ বলেন, মুক্ত চিন্তার জন্য আমাদের পূর্ব অনেক জীবন দিয়েছেন। তাদের জীবন দানকে আমরা ভুলে গেছি। তাদের স্মরণে রেখে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের এই দেশটাকে মানবিক করে তোলার কাজ করতে হবে। শিক্ষা ব্যবস্থাকে মানবিক করার সংগ্রাম করতে হবে। সংস্কৃতির প্রতি সরকারের যে অবহেলা এর বদল ঘটানোও হবে জোটের আগামীর আন্দোলনের প্রধান লক্ষ্য।

নাসির উদ্দিন ইউসুফ বলেন, সংস্কৃতির সংগ্রাম চলমান রাখতে হবে। দেশ থেকে উগ্রতা-সহিংসতার বীজ নির্মূল করতে হলে আমাদের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে নতুন করে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এ আন্দোলনে রাজনৈতিক দলগুলোকে সম্পৃক্ত হতে বাধ্য করতে হবে। লেখক গবেষক মফিদুল হক বলেন, মানবিক দেশ গঠনে শিল্পের অস্ত্রের ব্যবহার করতে হবে। বাংলাদেশ আজ সাম্প্রদায়িকতা ও উগ্রতার বড় হুমকির মুখোমুখি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রাখতে মানুষের মুক্তির পথে সংস্কৃতির শক্তি নিয়ে জেগে উঠতে হবে। তিনি বলেন, মানুষের মূল্যবোধকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের কর্মপন্থা ঠিক করতে হবে। তিনি বলেন, জোটের শক্তি এখন দৃশ্যমান। এখন ভাবতে হবে এ শক্তি নিয়ে কী কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছি - এই প্রশ্ন এখন আমাদের করতে হবে।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সারা যাকের জোটের আগামীর দায়িত্ব প্রসঙ্গে বলেন, অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হবে। জোটের কাজ দেখে যেন মনে না হয় তারা একপেশে কাজ করছে। সরকারের বলয়ের বাইরে থেকে নিজের দায়িত্ব পালন করা। প্রতিবাদ করা। অন্যায় হলে বিপক্ষ শক্তি যেই হোক নিজেদের কাজটি করতে হবে। সারা যাকের মেয়েদের সাংস্কৃতিক জোটের নেতৃত্ব পর্যায়ে নিয়ে আসার তাগিদ দেন।

গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের চেয়ারম্যান ও শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী বলেন, আমাদের দেশকে চিন্তা চেতনার দিক থেকে দ্বিখণ্ডিত করার চক্রান্ত আজও চলছে। আমাদের সেই চক্রান্তকে পরাজিত করতে এক হয়ে কাজ করতে হবে। স্বাধীনতার মূল্যবোধগুলোকে সমুন্নত রাখতে, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে রূপ দিতে সংস্কৃতির শক্তি নিয়ে মানুষের জাগরণে আন্দোলনের বিকল্প নেই।

গোলাম কুদ্দুছ বলেন, সামাজিক অবক্ষয়সহ যে কোনো বিপর্যয় থেকে জাতিকে রক্ষা করতে সাংস্কৃতিক বিকাশের বিকল্প নেই। সে জন্য এই খাতে পৃষ্ঠপোষকতা বাড়ানোর জন্য রাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

উদ্বোধনী পর্ব শেষে কাউন্সিল অধিবেশনে বিভিন্ন সংগঠন ও ফেডারেশনের প্রতিনিধিরা সাংস্কৃতিক আন্দোলনের বিভিন্ন অর্জন ও চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App