×

অর্থনীতি

মূলধনী যন্ত্রপাতির রেয়াতি সুবিধায় জটিলতা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৮:৪৭ এএম

মূলধনী যন্ত্রপাতির রেয়াতি সুবিধায় জটিলতা

জাতীয় রাজস্ব ভবন (এনবিআর)। ফাইল ছবি

শিল্প গ্রুপের সঙ্গে বৈঠকে বসছে এনবিআর > হয়রানির অভিযোগ ব্যবসায়ীদের

দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও শিল্পায়নের স্বার্থে শিল্প কারখানা স্থাপনে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে বেশ কয়েক বছর ধরে রেয়াতি সুবিধা দিয়ে আসছে সরকার। উৎপাদন ও বিনিয়োগ বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে কর্মসংস্থানের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে শুল্ক ছাড় দেয় সরকার। কিন্তু কারখানা স্থাপনের জন্য মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে ছাড় থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে এই রেয়াতি পেতে দীর্ঘ ভোগান্তিতে পড়তে হয় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে। আবার কিছু ক্ষেত্রে এই রেয়াতি সুবিধার অপব্যবহার যেমন হয়, উল্টোদিকে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও এর সুযোগে অনেককে হয়রানিও করে থাকেন। এতে রেয়াতি সুবিধা পেতে নানা ধরনের ভোগান্তির শিকার হন উদ্যোক্তারা। এসব সমস্যার সমাধান করতে অর্থাৎ রেয়াতি সুবিধা কারা পাবে আর কারা পাবে না – এ সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে বৈঠকে বসছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এনবিআর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের শিল্প কারখানা স্থাপন সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার পর বিভিন্ন এলসি স্টেশন থেকে রেয়াতি সুবিধা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে থাকে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রজ্ঞাপনে স্পষ্ট ব্যাখ্যা থাকার পরও বিশেষ সুবিধায় কিছু কিছু বড় প্রতিষ্ঠানের আমদানি করা মূলধনী যন্ত্রপাতি রেয়াতি সুবিধা দেয়া হয়েছে। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে এনবিআর বড় বড় শিল্প গ্রুপের মূলধনী যন্ত্রপাতিতে রেয়াতি সুবিধা দিয়েছে। যদিও কাস্টম অ্যাক্ট অনুযায়ী বিশেষ সুবিধা দেয়া এখতিয়ার এনবিআরের রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে বড় বড় শিল্প গ্রুপ মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা পেলেও ছোট ছোট উদ্যোক্তারা নানা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। আর কিছু কিছু কর্মকর্তা বড় বড় গ্রুপকে বিশেষ সুবিধা দেয়ার জন্য চেষ্টা-তদবিরও করে থাকেন। আর এটাকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে চরম বৈষম্য বলেও অভিযোগ করেছেন অনেক ব্যবসায়ী নেতা। তবে কর্মকর্তাদের থেকে কম যান না কিছু কিছু ব্যবসায়ীও। তারা কাস্টমসের কিছু ফাঁকফোকরের সুযোগ নিতে পিছপা হন না। সম্প্রতি এনবিআরের সেই শিল্প প্লান্ট সংক্রান্ত্র প্রজ্ঞাপনের শর্ত পালন না হওয়ায় পণ্য আটকে দেন দেশের বৃহৎ একটি কাস্টমস হাউসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। মূলধনী যন্ত্রপাতি সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনের শর্ত পরিপালন না হওয়ায় পণ্য ছাড়তে রাজি হননি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড রেয়াতি সুবিধা দেয়ায় ওই ব্যবসায়ী রেয়াতি সুবিধার আওতায় পণ্য ছাড় করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন। সর্বশেষ এনবিআরের উপকমিশনার পদমর্যাদার পলিসি সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা এই পণ্য চালান ছাড়তে চাপ তৈরি করেন। এক পর্যায়ে কাস্টমস হাউসের এই কর্মকর্তার সঙ্গে বির্তকেও জড়ান তিনি। তবে কাস্টমস হাউসের সেই কর্মকর্তা এই বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হননি। তবে এসব ঘটনা হরহামেশা পর্দার অন্তরালে অনেকের সঙ্গে ঘটে বলেও নিশ্চিত করেছেন একই কাস্টমস হাউসের একাধিক কর্মকর্তা। কিন্তু জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এসব সমস্যা সমাধানে পেতে বৈঠকের সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনবিআর। এরই ধারাবাহিকতায় সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তরসহ সবাইকে নিয়ে বৈঠকে বসছে এনবিআর। যদিও এনবিআর এই বৈঠককে তাদের নিয়মিত বৈঠক হিসেবে উল্লেখ করেছে। বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে এনবিআরের কাস্টমস পলিসির দ্বিতীয় সচিব পারভেজ রেজা চৌধুরী ভোরের কাগজকে বলেন, শিল্প প্লান্ট স্থাপনের জন্য আমদানি করা মূলধনী যন্ত্রপাতির রেয়াতি সুবিধা নিয়ে বৈঠক এটা এনবিআরের রুটিন ওয়ার্ক। এসব বিষয় নিয়ে কাস্টম পলিসি শাখা নিয়মিত বৈঠক করে বলেও জানান এই কর্মকর্তা। সূত্র জানায়, রেয়াতি সুবিধার আওতায় শিল্প প্লান্ট স্থাপনের জন্য আমদানি করা ক্যাপিটাল মেশিনারিজ নিয়ে তৈরি হওয়া জটিলতা নিরসনে আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর এনবিআরের কাস্টমস পলিসির সদস্য মো. মাসুদ সাদিকের সভাপতিত্বে বৈঠক হবে। এতে বিডার চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে শিল্প সচিব, ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান, এফবিসিসিআই সভাপতিসহ বিভিন্ন শিল্প উদ্যোক্তারা উপস্থিত থাকবেন। সেই সঙ্গে স্টেক হোল্ডার হিসেবে শিল্পগ্রুপ বসুন্ধরা থেকে শুরু করে আব্দুল মোনেম, আফতাব হ্যাচারি, কনফিডেন্সসহ সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডাররা বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন। এই বৈঠকে রেয়াতি সংক্রান্ত্র জটিলতা নিয়ে বিশদ আলোচনা হবে। সেই সঙ্গে রেয়াতি সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে স্থায়ী সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা রয়েছে। এ বিষয়ে বিকেএমইর কার্যকরী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম ভোরের কাগজকে বলেন, মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়া উচিত। কারণ হিসেবে এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, যারা ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আনবে তারা মেশিন বসাবে উৎপাদন করবে। আর উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রপ্তানি করবে। আর রপ্তানি যদি নাও করে তাহলে দেশের চাহিদা মিঠবে। দেশের উৎপাদন বাড়বে, সেই সঙ্গে কর্মসংস্থানও বাড়বে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। কিন্তু এনবিআর এই পদ্ধতিতে না গিয়ে নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা চালু করে রেখেছে। এতে নানা ধরনের ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন উদ্যোক্তারা। এসব বিষয়ে দ্রুত সমাধান করা উচিত বলেও মনে করেন এই ব্যবসায়ী নেতা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App