×

সারাদেশ

বাউফলে নৌকায় ভোট দেয়ায় হিন্দু বাড়িতে হামলা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৯:০৮ পিএম

বাউফলে নৌকায় ভোট দেয়ায় হিন্দু বাড়িতে হামলা

বাউফলে তিনটি হিন্দু পরিবারের বসতঘর কুপিয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে। ছবি: ভোরের কাগজ

বাউফলের নাজিরপুর-তাঁতেরকাঠি ইউনিয়ন পরিষদের উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থীকে ভোট দেয়ায় হিন্দুদের ঘর-বাড়িতে হামলা চালিয়েছে বিজয়ী বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকেরা। হামলায় তিনটি হিন্দু পরিবারের বসতঘর কুপিয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে। দেয়া হয়েছে এলাকা ছেড়ে যাওয়ার হুমকি।

গত বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) রাত ১০টার দিকে ওই ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের নিজ তাঁতেরকাঠি গ্রামের সুধীর দেবনাথের বাড়িতে ওই ঘটনা ঘটেছে।

ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দুরা জানান, গত মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) নাজিরপুর-তাঁতেরকাঠি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে তারা নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মো. ইব্রাহিম ফারুকের সমর্থক ছিলেন ও নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী এস.এম মহসিন বিজয়ী হন। ঘটনার দিন বুধবার সকালে বিজয়ী চেয়ারম্যানের সন্ত্রাসী বাহিনীরা ওই হিন্দু বাড়িতে ঢুকে তাদেরকে এলাকা ছাড়া হুমকি দেন। ওই দিনই রাত ১০টার দিকে ওই হিন্দু বাড়ির তিনটি বসতঘর কুপিয়ে ও পিটিয়ে ভাঙচুর করা হয়। এসময় সন্ত্রাসী বাহিনীর লোকজন হিন্দুদেরকে এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেন অন্যথায় ঘরে আগুন দেয়া হবে বলে হুমকি দেন। ঘটনার পর থেকে ওই বাড়ির বেশিরভাগ পুরুষ ঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এখন তারা অজানা উৎকণ্ঠা ও নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছেন।

হামলার শিকার কল্পনা রানী দেবনাথ (৪০) বলেন, শেখ হাসিনার মনোনীত প্রার্থীকে নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার অপরাধে আমাদের সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। আগামী চার বছরের জন্য এলাকা ছাড়ার হুমকি দিয়ে গেছে। অন্যথায় ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেবেন বলেও বলে গেছেন। আমরা এখন নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি।

নমিতা রানী (৩০) বলেন, নৌকার ভোট দেয়ার অপরাধে আমার স্বামী পালাতক। শিশু সন্তান নিয়ে ভয়ের মধ্যে দিন কাটছে। ঘরে হাট বাজার নেই। খাওয়া পড়াও নেই।

হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন পটুয়াখালী জেলা ও বাউফল উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদ ও হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। তারা ওই ঘটনার সাথে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী করেছেন।

উল্লেখ্য, নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় নাজিরপুর ইউনিয়নে দু’টি আওয়ামী লীগ কার্যালয় এবং একজন সাংবাদিকের বাড়িসহ নৌকার সমর্থকদের ২৫টি বাড়ি-ঘর ভাঙচুর করা হয়েছে। এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের ৫ শতাধিক কর্মী। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে নৌকার সমর্থকদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, বিএনপি-জামায়াত, শিবিরের সমর্থন ও ভোটে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সহ-সভাপতি এস.এম মহসিন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পরে তার কাঁধে ভর করে বিএনপি-জামায়াত চক্র আওয়ামী লীগ নিধনে মাঠে নামে। অসংখ্য আওয়ামী লীগ কর্মীর বাড়ি-ঘরে হামলা ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে।

নৌকার কর্মী সমর্থকদের ওপর হামলা, বাড়ি ঘর ভাঙচুরের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন সদ্য বিজয়ী নাজিরপুর তাঁতেরকাঠি ইউপি চেয়ারম্যান এস.এম মহসিন।

এবিষয়ে বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আল-মামুন বলেন, আমি নিজে ওই হিন্দু বাড়িতে গিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছি। থানায় অভিযোগ দেয়ার জন্য বলা হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App