×

জাতীয়

দুদকের অভিযানে পাল্টে গেল হাসপাতালের দৃশ্য

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৮:৫৫ এএম

দুদকের অভিযানে পাল্টে গেল হাসপাতালের দৃশ্য

শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বরিশাল

সরকারি দায়িত্ব পালনে অনীহা ও ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখতে ব্যস্ত থাকার অভিযোগে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকের অভিযানের পরই পাল্টে গেছে হাসপাতালের দৃশ্য। আন্তঃ ও বহির্বিভাগের বেশিরভাগ চিকিৎসকই নির্ধারিত সময়ে হাসপাতালে হাজির হচ্ছেন। দুদকের অভিযানকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বিশিষ্টজনরা। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও স্বজনসহ বিশিষ্টজনরাা এই অভিযান অব্যাহত রাখার দাবি জানিয়েছেন। অন্যদিকে অধ্যক্ষের কার্যালয়ে দুদকের অভিযানের নিন্দা জানিয়ে বিক্ষোভ করেছেন চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা। দুদক মামলা করলে আভিযানিক দলের প্রধানের বহিষ্কারের দাবির পাশাপাশি কর্মবিরতির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।

সরেজমিন হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, মেডিকেলের ১৭টি আন্তঃ এবং ১৬টি বহির্বিভাগে ডাক্তাররা গতকাল বুধবার অফিসে পৌঁছেছেন সকাল ৮টার মধ্যে। অন্যান্য দিন ৯টার পর বহির্বিভাগে কার্যক্রম শুরু হলেও গতকাল ৮টার দিকেই রোগী দেখতে শুরু করেন ডাক্তাররা। আন্তঃবিভাগেও ৮টার মধ্যে উপস্থিত হন বেশিরভাগ ডাক্তার। আন্তঃওয়ার্ডগুলোতে সিনিয়র ডাক্তারদের রাউন্ড (পরিদর্শন) দিতে দুপুর ঠেকে গেলেও গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে শেষ হয় সব ওয়ার্ডের রাউন্ড। এতে স্বস্তি প্রকাশ করেন রোগীরা। মেডিকেল কলেজেও গতকাল যথাসময়ে অফিসে প্রবেশ করেন ডাক্তাররা। তবে বুধবারও ব্যতিক্রমী ছিলেন হাসপাতালের পরিচালক। এ বিষয়ে জানতে পরিচালকের মুঠোফোনে রিং দেয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

একদিনের মধ্যে ডাক্তারদের উপস্থিতির চিত্র পাল্টে যাওয়ার রহস্য জানতে চাইলে হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ডাক্তারদের হয়ত উপলব্ধি হয়েছে। সে কারণে তারা যথা সময়ে অফিসে এসেছেন। তিনি বলেন, সরকারি হাসপাতালে বহির্বিভাগে অফিস সময় সকাল ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা। আন্তঃওয়ার্ডে ৮টায় অফিস সময় শুরু হলেও সেখানে সারা দিন কাজ থাকে ডাক্তারদের।

এদিকে গত মঙ্গলবার সকালে অভিযানের সময় দুদক কর্মকর্তারা ডাক্তারদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন এমন অভিযোগ তুলে অসদাচারণের প্রতিকার চেয়ে বিভাগীয় কমিশনারের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন বরিশাল জেলা শাখা। ডাক্তারদের বিরুদ্ধে কোনো হয়রানিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে স্মারকলিপিতে।

শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সিনিয়র থেকে জুনিয়র সর্বস্তরের ডাক্তারদের বিরুদ্ধে অফিস ফাঁকি দিয়ে ব্যক্তিগত চেম্বারে প্রাইভেট প্রাকটিসের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। কোনো কোনো সিনিয়র চিকিৎসক সপ্তাহেও একদিন মেডিকেলে অফিস করেন না বলে অভিযোগ আছে। আবার এমনটাও জানা যায়, অফিসে গেলেও হাজিরা দিয়ে সটকে পড়েন প্রাইভেট চেম্বারে রোগী দেখতে। এ প্রেক্ষিতে দুদক পরিচালিত অভিযানকে স্বাগত জানিয়েছেন বরিশালের বিশিষ্টজনরা।

লোক সংস্কৃতি গবেষক ও বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক দেবাশীষ চক্রবর্তী বলেন, শুধু চিকিৎসা সেবা নয়, সব দুর্নীতির বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের এমন অভিযান অব্যাহত থাকা উচিত। সেই সঙ্গে সরকারি দপ্তরে যারা জনসেবায় নিয়োজিত রয়েছেন তাদের উচিত সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করা। এটা মনে রাখা উচিত, মাস শেষে যে বেতন তারা পাচ্ছেন, তা কিন্তু জনগণের ট্যাক্সের টাকা। সুতরাং জনগণের অধিকার রয়েছে তার কাছ থেকে সঠিকভাবে সেবা পাওয়ার।

সচেতন নাগরিক কমিটি বরিশাল জেলা শাখার সভাপতি অধ্যাপক শাহ সাজেদা বলেন, দুদকের অভিযানকে অবশ্যই স্বাগত জানাই। যেসব দপ্তরে মানুষ হয়রানির শিকার হয়, সেসব জায়গায় এই অভিযান ধারাবাহিকভাবে চালানো উচিত। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, মাঝে মধ্যে আমরা বিভ্রান্ত হই। দুর্নীতির বিরুদ্ধে ধারাবাহিক অভিযান না হলে আসলে কোনো ফলাফল আসে না।

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল বরিশালের আহ্বায়ক প্রকৌশলী ইমরান হাবিব রুমন বলেন, এসব প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি কমিয়ে আনতে নিয়মিত দুর্নীতি দমন কমিশনের অভিযান অব্যাহত রাখা উচিত। এমনকি সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের এই অভিযানকে স্বাগত জানানো উচিত। কারণ এতেই প্রমাণ হবে তার প্রতিষ্ঠান দুর্নীতিমুক্ত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

উল্লেখ্য, ৫০০ শয্যার মেডিকেলে ২২৪টি চিকিৎসক পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ১৫০ জন এবং মেডিকেল কলেজে ২৯১ জন ডাক্তারের স্থলে কর্মরত আছেন ১২২ জন।

প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার সকাল সোয়া ৯টা থেকে সোয়া ১০টা পর্যন্ত শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ মনিরুজ্জামান শাহিনের কার্যালয়ে অভিযান চালায় দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়। রোগীর চিকিৎসা না দেয়া, সরকার নির্ধারিত সময়ে কার্যালয়ে না আসা, ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখা নিয়ে ব্যস্ত থাকাসহ বেশ কয়েকটি লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে অভিযান চালায় দুদক। অভিযোগে ডা. আনোয়ার হোসেন বাবলু ও অমিতাভ সরকারের নাম উল্লেখসহ হাসপাতালের অন্যান্য চিকিৎসকের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ দেয়া হয়। অভিযানে অভিযোগের সত্যতা পায় দুদক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App