×

মুক্তচিন্তা

তিস্তা নদী নিয়ে অপেক্ষার প্রহর কবে শেষ হবে রাশেদুজ্জামান রাশেদ

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০১:৪৪ এএম

তিস্তা নদী নিয়ে অপেক্ষার প্রহর কবে শেষ হবে রাশেদুজ্জামান রাশেদ
এবারের ভারত সফরেও প্রধানমন্ত্রী তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি সামনে এনেছেন। নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ‘ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ৫৪টি নদী প্রবাহিত হয় এবং উভয় দেশের মানুষের জীবন-জীবিকার সঙ্গে এসব নদী যুক্ত। আমরা কুশিয়ারা নদীর পানিবণ্টন-সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছি। দ্রুত আমরা তিস্তার জটও খুলতে পারব।’ মোদির এ বক্তব্যে আমরা আশাবাদী। তিস্তাপাড়ের মানুষের স্বপ্নের বাস্তবায়ন হবে বলে আশা করছি। ১৯৯৭ সালের আন্তর্জাতিক পানিপ্রবাহ কনভেনশন অনুযায়ী, ২০১৪ সালের ১৭ আগস্ট অভিন্ন নদীতে অভিন্ন অধিকার প্রতিষ্ঠায় আইন প্রণীত হয়েছে। ওই বছর থেকে দিবসটি ‘নদী অধিকার দিবস’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। দুঃখজনক বিষয়, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকার সেই আইনটিতে অনুসমর্থন করেনি। ফলে জাতিসংঘে বাংলাদেশ যে অভিন্ন নদীতে অভিন্ন অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য দাবি জানাবে, তার কোনো ক্ষেত্রও প্রস্তুত হয়নি। স্বাধীনতার ৫০ বছরে নদী বাঁচাতে রাষ্ট্রের ভূমিকা কী? এত বছরে বিভিন্ন সরকার ক্ষমতায় এসেছে কিন্তু নদী ও তিস্তা পাড়ের মানুষের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। যেটা ঘটেছে দিনের পর দিন নদী বিলীন হয়েছে। মানুষের সংকট তীব্র হয়েছে। গবেষকদের জরিপের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ৪৮ বছরে প্রায় অর্ধেক সংখ্যক নদী শুকিয়ে গেছে কিংবা মরে গেছে। আর সরকারি তথ্যমতে, দেশে নদ-নদীর সংখ্যা ছিল প্রায় ৮০০। বর্তমানে এ তা দাঁড়িয়েছে ৪০৫-এ। আর বেসরকারি হিসাব বলছে, বর্তমানে বাংলাদেশে নদীর সংখ্যা ২৩০। আমাদের দেশে নীতি, আইন, পরিসংখ্যান সব আছে- কিন্তু প্রয়োগ নেই। নদীকে ধ্বংস করে দেশের অস্তিত্বকে বিপন্ন করা যাবে না। অভিন্ন ৫৪টি নদীর পানিবণ্টন বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে এক দীর্ঘমেয়াদি অমীমাংসিত ইস্যু। দুদেশের মধ্যে ১৯৯৬ সালে একমাত্র গঙ্গা নদীর পানিবণ্টনের চুক্তি স্বাক্ষর হলেও তিস্তাসহ আলোচনায় থাকা ৮টি নদীর পানি ভাগাভাগির ব্যাপারে এখনো কোনো সুরাহা হয়নি কেন? ভারত তিস্তা নদীতে বাংলাদেশের উজানে গজল ডোবায় ব্যারেজ নির্মাণ করে তিস্তার পানি অনৈতিক ও একতরফাভাবে প্রত্যাহার করে। এর ফলে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলো কৃষি হুমকির মুখে, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। এর জন্য উত্তরবঙ্গ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি। শুধু তিস্তা নয়, আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পের নামে বাঁধের মালায় বাংলাদেশকে ঘিরে ফেললে তা বাংলাদেশের প্রাণ, প্রকৃতি, পরিবেশ ভয়ংকর ঝুঁকিতে ফেলবে। ইতোমধ্যে ফারাক্কা বাঁধের কারণে সুন্দরবন হুমকির মুখে, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে লবণাক্ততা এবং রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলে মরুকরণ ঘটে চলছে। এতে প্রতি বছর লাখ লাখ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে বাংলাদেশের। পানির প্রবাহ বন্ধ হলে দেশের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে মরুভূমিতে পরিণত হবে। তাই নদীর প্রতি বিশেষ যতœ নিতে হবে। আন্তর্জাতিক নীতি অনুসারে কোনো নদীকে কেউ বাঁধ দিয়ে আটকে রাখতে পারবে না; কিন্তু আমার বন্ধু দেশ ভারত গ্রীষ্মের সময় তিস্তার গজল ডোবায় বাঁধ দিয়ে পানি আটকে রাখে। প্রতিবাদ করার মানসিকতা দেখা যায় না। নদী হচ্ছে পৃথিবীর ধমনীর মতো। এর প্রবাহমনতাই সত্যিকার অর্থে আমাদের জীবন রক্ষাকারী। তাই নদী বাঁচলে মানুষ বাঁচবে আর মানুষ বাঁচলে দেশ বাঁচবে। রাশেদুজ্জামান রাশেদ লেখক। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App