×

জাতীয়

কী পেল বাংলাদেশ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১১:১২ পিএম

কী পেল বাংলাদেশ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী

বাংলাদেশে জ্বালানি তেল থেকে শুরু করে গম, পেঁয়াজ, চালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য নিরবচ্ছিন্নভাবে সরবরাহের আশ্বাস দিয়েছে ভারত। দেশটি বাংলাদেশকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনেও সর্বাত্মক সহযোগিতা করারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বলে জানা গেছে।

নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ-ভারত শীর্ষ বৈঠকের পর ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিনয় কাত্রা এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান।

দুই দেশের বৈঠকের বিভিন্ন দিক নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা প্রসঙ্গটি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী উত্থাপন করেছিলেন। আমরা স্বীকার করি, বাংলাদেশ যেভাবে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে, সেটা গোটা বিশ্বে প্রশংসিত হচ্ছে। আমরাও তার প্রশংসা করি।

ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বলেন, আমরা রোহিঙ্গাদের জন্য আর্থিক সহযোগিতা করেছি এবং ভবিষ্যতে চাইলে আরো সহায়তা করব। রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে আন্তর্জাতিক যত প্রস্তাব আসছে, তার প্রতিটির সঙ্গে ভারত যুক্ত আছে। ভারত চায় দ্রুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তন হোক। এ বিষয়ে যদি ভবিষ্যতে আরো পদক্ষেপ নেওয়ার থাকে, তাহলে ভারত সেটা নেবে। বৈঠকে সেই প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ জ্বালানি তেল চেয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বিনয় কাত্রা বলেন, বাংলাদেশে দ্রুত পরিশোধিত তেল পাঠাতে নির্মাণাধীন মৈত্রী পাইপলাইন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, সরকারিভাবে তেল পাওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকার ভারতের ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন লিমিটেডকে নথিভুক্ত করেছে। এর ফলে ইন্ডিয়ান অয়েল কম্পানি বাংলাদেশের কম্পানিকে সরাসরি তেল দিতে পারবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহিরয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশকে ডিজেল সরবরাহের ব্যাপারে ভারত সদিচ্ছা দেখিয়েছে।

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ

ভারত হঠাৎ করে পেঁয়াজ, গম, চালের মতো পচনশীল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ বন্ধ করে দিলে বাংলাদেশের বাজারে বিরূপ প্রভাব পড়ে। এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমরা একটি দীর্ঘস্থায়ী সরবরাহব্যবস্থা গড়ে তুলছি। এই সরবরাহব্যবস্থার মাধ্যমে বাংলাদেশের অত্যাবশ্যকীয় পণ্যগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে সরবরাহ করা যাবে। ’

বাংলাদেশ গম চেয়েছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে ভারতের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘গম চেয়েছে, আমরা গম পাঠিয়েছি। ভবিষ্যতেও বাংলাদেশ চাইলে আমাদের চাহিদা মেটানো সাপেক্ষে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব। ’

প্রতিরক্ষা চুক্তি

ভারতের পররাষ্ট্রসচিব জানান, প্রতিরক্ষা খাতে ভারতের দেওয়া ঋণের আওতায় গত সপ্তাহে একটি প্রতিরক্ষাচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। একটি ভালো সূচনা। প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাপনায় এটি প্রভাব ফেলবে।

চলচ্চিত্র মুজিব

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আত্মজীবনীমূলক চলচ্চিত্র মুজিব নির্মাণ কত দূর জানতে চাইলে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী বলেন, ‘চলচ্চিত্রটি প্রস্তুত আছে। আমরা এটি প্রথমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেখাতে চাই। এ বিষয়ে তারিখ নির্ধারণের কাজ চলছে। ’

বাণিজ্য চুক্তি সেপা

শীর্ষ বৈঠক থেকে বাংলাদেশ ও ভারতের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সমন্বিত বাণিজ্যিক অংশীদারি চুক্তি (সেপা) স্বাক্ষরের জন্য এ বছরই আলোচনা শুরুর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সামনে বক্তব্য দেওয়ার সময় সেপা বিষয়ে বলেছেন। কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের পর বাণিজ্য বাড়াতে সেপা চুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

তিস্তায় আবারও আশ্বাস

২০১১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের দিন শীর্ষ বৈঠকেই তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা ছিল। ১১ বছর পর কাকতালীয়ভাবে গতকাল ৬ সেপ্টেম্বর আবার শীর্ষ বৈঠক হয়েছে। তবে তিস্তা নিয়ে জট খোলেনি।

২০১৭ সালের এপ্রিলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নয়াদিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পাশে রেখে বলেছিলেন, কেবল তার সরকার ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারই তিস্তার পানিবণ্টনের সুরাহা করতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল মোদির সামনে তিস্তা চুক্তিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, ‘যত দিন নরেন্দ্র মোদি এখানে (ভারতে) আছেন, বাংলাদেশ-ভারত সব সমস্যা সমাধান হবে। ’

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহিরয়ার আলম নয়াদিল্লিতে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা এখনো তিস্তা চুক্তি নিয়ে আশ্বাসের পর্যায়ে আছি। আমরা বিশ্বাস করি, ভারত যে আশ্বাস দিয়েছে তা দেরিতে হলেও বাস্তবায়িত হবে। ’

করোনা মোকাবেলার প্রশংসা করলেন মোদি, জবাব দিলেন শেখ হাসিনা

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জানান, বৈঠকের শুরুতে শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, শেখ হাসিনা করোনাকালে দেশের ১৭ কোটি মানুষকে মায়ের মতো আগলে রেখেছেন। শেখ হাসিনাও বেশ বিনয়ের সঙ্গে বলেছেন, করোনার শুরুর দিকে ভারত টিকা দিয়ে সহযোগিতা করেছিল।

ওই টিকা নিয়ে তখন অনেক কথা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে সেই সরবরাহ পুরোপুরি না হলেও প্রাথমিক যে চালান এসেছিল, তা দিয়ে সম্মুখসারির ব্যক্তিরা কভিড আক্রান্তদের সেবা দিতে পেরেছিলেন।

বাংলাদেশের উন্নতি না হলে ভারতের উন্নতিতে লাভ হবে না

বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশেরই একসঙ্গে উন্নতি করার ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেন, শুধু ভারতের উন্নতি হলে এবং প্রতিবেশী বাংলাদেশে যদি উন্নতি না হয় তাহলে লাভ হবে না।

এর প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নরেন্দ্র মোদি যা বলেছেন তাই যদি চেতনা বা আদর্শ হয় তাহলে তিনি বিশ্বাস করেন যে কোনো সমস্যাই আটকে থাকবে না। এরপর ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে সহযোগিতা করার সত্যিকারের আগ্রহ ভারতের আছে।

ভারত ইস্যুতে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ঝুঁকি নিয়েছেন শেখ হাসিনা

বৈঠক প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহিরয়ার আলম বলেন, শেখ হাসিনা ট্রানজিট, কানেক্টিভিটি ইস্যুতে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বড় ঝুঁকি নিয়েছেন। ১৯৬৫ সালের আগে এই অঞ্চলে যে কানেক্টিভিটি ছিল সে পর্যায়ে আমরা গিয়েছি। রেলের মাধ্যমে ভারতের কোনো বন্দর দিয়ে অন্যত্র রপ্তানি করার বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।

পাট রপ্তানিতে অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক প্রত্যাহারের আহ্বান

ভারত বলেছে, অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক থাকার পরও বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাট রপ্তানি বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক প্রত্যাহারের বিষয়টি জোরালোভাবে তুলে ধরেছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী তাত্ক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার নির্দেশনা দিয়েছেন।

নিজের নির্বাসিত জীবন ও দিল্লিতে আশ্রয়ের কথা স্মরণ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনের সামনে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান ও সাংবাদিকদের সামনে রাখা বক্তব্যে ১৯৭৫ সালের পর তার ভারতের নয়াদিল্লিতে নির্বাসিত জীবনের কথা স্মরণ করেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App