×

জাতীয়

৫ শতাধিক বাংলাদেশিকে বানানো হয়েছে সাইবার ক্রীতদাস

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১০:৩৯ পিএম

৫ শতাধিক বাংলাদেশিকে বানানো হয়েছে সাইবার ক্রীতদাস

ক্তভোগী ও তাদের পরিবারের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে চক্রের মূলহোতাসহ তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

উচ্চ বেতনে কম্বোডিয়াতে নিয়োগের কথা বলে পাঁচ শতাধিক বাংলাদেশি চাকরি প্রত্যাশীর সঙ্গে প্রতারণা করেছে একটি চক্র। চক্রের খপ্পরে পড়া লোকরা চাকরি তো পাননি, উল্টো হয়েছেন ‘সাইবার ক্রীতদাস’।

বেশ ক’জন ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে চক্রের মূলহোতাসহ তিন সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর এ তথ্য জানিয়েছে র‌্যাব-৩।

র‌্যাব-৩-এর এএসপি ফারজানা হক বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে র‌্যাব-৩ এর একটি দল মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর পল্টন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে কম্বোডিয়ায় মানবপাচার চক্রের মূলহোতা নাজমুল ইসলাম (৩০), নূর ইসলাম সাজ্জাদ (২৫), এবং মো. সিরাজুল ইসলাম পঞ্চায়েতকে (৫৭) গ্রেপ্তার করে।

এ সময় তাদের কাছ থেকে পাসপোর্ট ৩টি, মোবাইল ফোন ৪টি, রেজিষ্টার ১টি, মানবপাচার সংক্রান্ত বিভিন্ন কাগজপত্র ২৫০ পাতা এবং নগদ ৫ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।

এএসপি বলেন, প্রাথমিক অনুসন্ধান ও জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেপ্তাররা সংঘবদ্ধ মানবপাচার চক্রের সদস্য। চক্রের মূলহোতা কম্বোডিয়া প্রবাসী নাজমুল ইসলাম। তিনি বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দালালের মাধ্যমে উচ্চ বেতনে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে চাকরি দেয়ার নাম করে ভিকটিম এবং তাদের অভিভাবকদের প্রলুব্ধ করেন। কম্বোডিয়ায় প্রেরণের খরচ বাবদ প্রাথমিকভাবে তারা ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা নেয়।

আগ্রহী বেকার তরুণ-তরুণীদের প্রথমে কম্পিউটার বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়। উত্তীর্ণ হলে কম্বোডিয়া প্রবাসী আলীম ও শরিফুলের সহায়তায় তাদের জন্য কম্বোডিয়ান ট্যুরিস্ট ই-ভিসা করা হয়। তারপর তাদেরকে বিমানযোগে কম্বোডিয়ায় পাঠানো হয়।

কম্বোডিয়ায় যাওয়ার পর নাজমুল তার সহযোগী কম্বোডিয়া প্রবাসী রাকিব ও রফিকের সহায়তায় প্রথমে ভিকটিমদের প্রবাসী আরিফের হোটেলে নিয়ে যায় এবং তাদের কাছ থেকে পাসপোর্ট ছিনিয়ে নেওয়া হয়।

ফারজানা হক আরও বলেন, কেউ টার্গেট সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হলে বা কাজ করতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে নির্যাতন করা হয়। তার খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। কেউ অব্যাহতি চাইলে তাকে কিনতে যে ডলার ব্যয় করা হয়েছে তার দ্বিগুণ অর্থ ফেরত দিতে বলা হয় এবং সে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে কোনো অভিযোগ করবে না মর্মে অঙ্গীকারনামা নেওয়া হয়। তখন ভিকটিম বাধ্য হয়ে বাংলাদেশ থেকে টাকা সংগ্রহ করে কোম্পানিতে অর্থ ফেরত দিয়ে কম্বোডিয়া প্রবাসী বাংলাদেশি দালালদের আশ্রয়ে যায়। তখন দালালরা ভুক্তভোগীদের আবার আরেকটি সাইবার প্রতারক কোম্পানিতে বিক্রি করে দেয়।

যদি কেউ দেশে ফিরে আসতে চায়, তখন দেশে ফেরত যাওয়ার শর্ত হিসেবে আরও গ্রাহক সংগ্রহ করে দেওয়ার শর্ত জুড়ে দেয়। এ সময় ভুক্তভোগীদের কম্বোডিয়ায় থাকা খাওয়ার খরচ নিজেকে বহন করতে হয়। রোজগার না থাকায় তারা ইচ্ছার বিরুদ্ধে অবৈধ কাজ করতে বাধ্য হয়। নতুবা দেশ থেকে টাকা নিয়ে থাকা-খাওয়ার ব্যয় নির্বাহ করতে হয়। অনেকে বাঁচতে নিরুপায় হয়ে নিজে মুক্তি পাওয়ার জন্য পরিচিত অপর বাংলাদেশিদের কম্বোডিয়ায় আসতে প্ররোচিত করে। তারপর কম্বোডিয়া প্রবাসী আলীম ও শরিফুল তাদের ই-ভিসার ব্যবস্থা করে কম্বোডিয়ায় নিয়ে গিয়ে ভিকটিমদের একইভাবে সাইবার ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রি করে দেয়। এভাবে চক্র সারা বাংলাদেশ থেকে পাঁচ শতাধিক বাংলাদেশিকে সাইবার ক্রীতদাস হিসেবে কম্বোডিয়ায় প্রেরণ করেছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App