×

বিনোদন

শহীদ মিনারে গাজী মাজহারকে শ্রদ্ধা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১২:২০ পিএম

শহীদ মিনারে গাজী মাজহারকে শ্রদ্ধা

সোমবার গাজী মাজহারুল আনোয়ারকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বশেষ শ্রদ্ধা জানান তার পরিবার, স্বজন, ভক্ত ও গুণগ্রাহীরা। ছবি: ভোরের কাগজ

শহীদ মিনারে গাজী মাজহারকে শ্রদ্ধা

সোমবার গাজী মাজহারুল আনোয়ারকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। ছবি: ভোরের কাগজ

কিংবদন্তি গীতিকবি গাজী মাজহারুল আনোয়ারকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাষ্ট্রীয় শ্রদ্ধা ‘গার্ড অব অনার’ দেয়া হয়েছে।

সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে এ শ্রদ্ধা অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে প্রথমেই দেয়া হয় গার্ড অব অনার। এরপর সর্বস্তরের মানুষ ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। মরদেহটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত রাখা হয়। এরপর এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় শহীদ মিনারের বিদায়ী আনুষ্ঠানিকতা।

এ সময় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে উপস্থিত হন সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অনেক শিল্পী। এর মধ্যে ছিলেন সাবিনা ইয়াসমিন, কুমার বিশ্বজিৎ, মনির খান, নকীব খান, আসিফ ইকবাল, শেখ সাদী খান, মানাম আহমেদ, ইমন সাহা-সহ আরও অনেকে। তারা গীতিকবির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের পাশাপাশি অশ্রুসিক্ত নয়নে স্মৃতিচারণও করেছেন। এ সময় গাজী মাজহারুল আনোয়ারের মেয়ে দিঠি আনোয়ার ও ছেলে উপলও উপস্থিত হন। বাবার সৃজন সংরক্ষণের ইচ্ছা প্রকাশ করেন তারা।

এছাড়া বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের পাশাপাশি গাজী মাজহারুল আনোয়ারকে ফুলেল শ্রদ্ধা জানায় সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানান যুগ্ম-সচিব মো. আতাউর রহমান, বাংলাদেশ শিল্পকলা অ্যাকাডেমি, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, বাংলাদেশ যুব মৈত্রী, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ, বাংলাদেশ সংগীত পরিষদ, বিটিভি, চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতি, চলচ্চিত্র সাংস্কৃতিক লীগ, গীতিকবি সংঘ, বিএনপি, জাতীয়তাবাদী সংস্কৃতি সংগঠনসহ স্বজন, বন্ধুবান্ধব, দেশের বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সঙ্গীতশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, খবরটা কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছিল না। এরকম একটা দিনে আমাকে কিছু বলতে হবে কল্পনাও করতে পারিনি। গাজী ভাইয়ের সঙ্গে এবং তার পরিবারের সঙ্গে আমার ৫০ বছরেরও বেশি সম্পর্ক। গাজী ভাই ২০ হাজারের মতো গান লিখেছেন। তার মধ্যে আমিই মনে হয় ৫-৬ হাজার গান গেয়েছি।

[caption id="attachment_365999" align="aligncenter" width="700"] সোমবার গাজী মাজহারুল আনোয়ারকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। ছবি: ভোরের কাগজ[/caption]

সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, আমরা শহীদ মিনারে যে মানুষটিকে শারীরিকভাবে বিদায় জানাচ্ছি তিনি মানুষের ভালোবাসায় আচ্ছাদিত আছেন। বিদ্রোহ ও প্রেমের প্রতীক ছিলেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার অমর হয়ে থাকবেন।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, এই সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যমে আমরা বলতে চাই, দৈহিকভাবে চলে গেলেও একজন শিল্পীর মৃত্যু হয় না। তার যে দেশপ্রেম সেটা অপ্রতিদ্বন্দ্বী। ১৯৭১ সালে তিনি ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’ লিখেছেন। যা মুক্তিযুদ্ধে প্রেরণা জুগিয়েছে। চলচ্চিত্রে যেখানে বানিজ্যিক, সেখানে তিনি কাব্যময়তা এনেছেন। আমাদের গানকে সমৃদ্ধ করেছেন।

কুমার বিশ্বজিৎ বলেন, জন্মগ্রহণ করলে মৃত্যু অনিবার্য। সংস্কৃতি অঙ্গন গত দশ বছর ধরে অভিভাবকশূন্য হচ্ছে। বাংলা গানের কালপুরুষ ছিলেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার। আজ তাকেও বিদায় জানাতে হলো।

সঙ্গীতশিল্পী নকীব খান বলেন, গাজী মাজহারুল আনোয়ার ছিলেন সংগীতের জন্য নিবেদিতপ্রাণ। একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছিলেন। পৃথিবীর কোনো দেশে ২০ হাজার গান লিখেছেন এমন মানুষ পাওয়া বিরল। তার প্রতিটি সৃষ্টি অসাধারণ।

গাজী মাজহারুল আনোয়ারের মেয়ে দিঠি আনোয়ার বলেন, বাবা মানুষকে ভালোবাসতেন। যদি জীবদ্দশায় মনের অজান্তে তিনি কষ্ট দিয়ে থাকেন, তাহলে তাকে যেন ক্ষমা করে দেন। আব্বুকে গার্ড অব অনার দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। সবাই আব্বুর জন্য দোয়া করবেন।

দিঠি আনোয়ার বলেন, আব্বুর শেষ ইচ্ছা ছিল, শেষ পর্যন্ত যেন তার হাতে কলম থাকে। তাই ছিল। আমি দুই মাস ধরে আমেরিকায়। আমার আরও পরে আসার কথা ছিল। কিন্তু আমার ভালো লাগছিল না এ জন্য চলে এসেছি। আসার মধ্যেও আমার কথা হয়েছে। এর মধ্যেই খবর পাই বাবার মৃত্যুর।

তিনি বলেন, আব্বু বলতেন, মা, আমি কোনো রাজনীতি বুঝি না। আমি দেশের মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি, এর চেয়ে বড় আর কিছু হতে পারে না। আমাকে যখন যে ডাকবে, তার কাছেই যাব।

এ সময় দিঠি বর্তমান সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, আব্বুকে শহীদ মিনারে নিয়ে আসতে পেরেছি এ জন্য সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞ।

গাজী মাজহারুল আনোয়ারের ছেলে উপল বলেন, তার বাবার গানের পরিমাণ ২০ হাজারেরও বেশি। ৪২টির মতো সিনেমা পরিচালনা করেছেন তিনি। একটি অসমাপ্ত বই নিয়েও কাজ করছেন তারা, যেটি আগামী বইমেলায় প্রকাশ হওয়ার কথা ছিল।

উপল বলেন, আমরা চেষ্টা করব তার সৃষ্টি সংরক্ষণ করার জন্য। সরকার করবে কি না, সেটা তো আমরা জানি না। তবে তারা করতে চাইলে আমরা সহযোগিতা করব।

এরপর গাজী মাজহারুল আনোয়ারের মরদেহ নেয়া হয় চলচ্চিত্রের আঁতুড়ঘর এফডিসিতে। সেখানে বাদ জোহর অনুষ্ঠিত হয় তার প্রথম জানাজা। সেই সঙ্গে সিনেমা সংশ্লিষ্টরা তাকে শ্রদ্ধা জানান। বাদ গুলশানের আজাদ মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় জানাজা। এরপর বনানী কবরস্থানে তার মা খোদেজা বেগমের কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হবে

কিংবদন্তি এই গীতিকার গতকাল রবিবার সকাল সাতটা ৫৫ মিনিটে মৃত্যু বরণ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর।

সংবাদমাধ্যম বিবিসি বাংলার জরিপে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ২০টি বাংলা গানের তালিকায় রয়েছে তার লেখা তিনটি গান। বিবিসির সেই গান তিনটি হলো ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’, ‘একতারা তুই দেশের কথা বল রে এবার বল’ ও ‘একবার যেতে দে না’।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App