×

সম্পাদকীয়

স্বাস্থ্য পরীক্ষার ভুল রিপোর্ট : অবৈধ প্যাথলজি নিয়ন্ত্রণ করুন

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০১:৩১ এএম

স্বাস্থ্য পরীক্ষার ভুল রিপোর্টের কারণে মানুষের জীবন বিপন্ন হয়ে উঠছে। এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই গণমাধ্যমে উঠে আসছে। করোনা অতিমারিতে এমন ঘটনা বেশি দেখেছি। অবৈধ প্যাথলজি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভুয়া রিপোর্ট দিয়ে রোগীর জীবন বিপন্ন করে তুলছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দেশের এসব অবৈধ প্রতিষ্ঠান বন্ধে বারবার উদ্যোগ নিলেও কার্যকর কোনো ভূমিকা দেখা যায় না। ইতোমধ্যে সরকার সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে সেবার মান বাড়াতে ও শৃঙ্খলা ফেরাতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। দীর্ঘদিনের অনিয়ম-বাণিজ্য এবং ভোগান্তি দূর করতে অবৈধ হাসপাতাল বন্ধে অভিযানে নেমেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। এসব অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিকের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। বিনা চিকিৎসা বা ভুল চিকিৎসায় এসব হাসপাতালে রোগীর মৃত্যু যেন স্বাভাবিক বিষয়। আর উচ্চহারে বিল আদায়ের ঘটনা তো রয়েছেই। গত মে মাসের শেষের দিকে টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পরপর মা ও নবজাতক মৃত্যুর ঘটনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের টনক নড়ে। ২৫ মে ৭২ ঘণ্টা বা তিন দিনের মধ্যে দেশের সব অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এই সময়ের পর নিবন্ধনহীন কোনো ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালু থাকলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে ঘোষণাও দেয়া হয়। এতে দেড় হাজারেরও বেশি অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দেয়া হয়। প্রথম ১০ দিন সাঁড়াশি অভিযান চললেও পরবর্তীতে এ অভিযানের গতি অনেকটা কমে আসে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, এই অভিযান চলমান একটি প্রক্রিয়া। এর আগেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বরাবরই বলে এসেছে ভুয়া ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর বিরুদ্ধে সরকারের অভিযান অব্যাহত থাকবে ও ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিন্তু জনবল সংকটের দোহাই দিয়ে কার্যকর কিছু দেখা যায়নি। দেশে ১৩ হাজার ৬৮০টি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে লাইসেন্স আছে ৬ হাজার ১০২টির। এর মধ্যে হাসপাতাল ২ হাজার ১৪৮টি, প্যাথলজি ল্যাব ৩ হাজার ৮৭২টি ও ব্লাড ব্যাংক ৮২টি। লাইসেন্সের জন্য আবেদন এবং পরিদর্শনের অপেক্ষায় আছে আরো কয়েক হাজার প্রতিষ্ঠান। উদ্বেগের বিষয়, লাইসেন্স ও ভ্যালিড কাগজপত্র নেই, অন্যদিকে তারা যে ভালো সেবা দিচ্ছে তাও নয়। অনেক ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিকে নেই ন্যূনতম ডাক্তার, নার্স ও টেকনিশিয়ান। চিকিৎসা না দিয়ে যেনতেনভাবে মানুষের গলা কেটে ব্যবসা করাই যেন তাদের মুখ্য উদ্দেশ্য। চিকিৎসাবিজ্ঞানের অভাবনীয় অগ্রগতি ঘটেছে। উন্নত বিশ্বের অনেক উদ্ভাবনের সুফল ভোগ করছে বাংলাদেশের মানুষ। তবে অর্থনৈতিক কারণে এ সুবিধা সবার কাছে সমভাবে পৌঁছানো সম্ভব হয় না। বিশেষভাবে অসচ্ছল জনগোষ্ঠীর জন্য এ সমস্যা আরো তীব্র হয়, যখন চিকিৎসকরা অনেক ধরনের পরীক্ষা করাতে বলেন। চিকিৎসাসেবাকে সাধারণ মানুষের কাছে সহজলভ্য করতে সরকার প্রতি বছরই শত শত কোটি টাকা বাজেট বাড়াচ্ছে। সরকারি হাসপাতালে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকার কথা থাকলেও দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা এবং অনৈতিক কারসাজির সিন্ডিকেটেড বাণিজ্যের জন্য সে সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন দেশের দরিদ্র মানুষ। বিশেষ করে অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে জোর দাবি করছি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App