×

খেলা

এশিয়া কাপ থেকে কী শিখল টাইগাররা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১০:৪২ পিএম

এশিয়া কাপ থেকে কী শিখল টাইগাররা

ছবি: সংগৃহীত

এশিয়া কাপ থেকে কী শিখল টাইগাররা

ফাইল ছবি

এশিয়া কাপ থেকে কী শিখল টাইগাররা

ক্যাচ মিস মানে ম্যাচ মিস,টাইগার ফিল্ডাররা হরহামেশা ক্যাচ ছেড়ে দিতে বেশ পটু। ছবি: সংগৃহীত

এশিয়া কাপের গ্রুপ পর্যায়ে প্রথম রাউন্ডে আফগানিস্তান এবং শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিয়েছে টাইগাররা। আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ দল প্রতিরোধ গড়তে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়। আফগানিস্তান দল তাদের দলগত শক্তি প্রয়োগ করে প্রমাণ করেছে টি-টোয়েন্টিতে তারা টাইগারদের থেকে অনেক বেশি এগিয়ে আছে। অন্যদিকে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশ দল খেলতে নেমেছিল জেতা ছাড়া উপায় নেই অবস্থা নিয়ে। প্রতিরোধ গড়ে শেষ পর্যন্ত নিজেদের ব্যর্থতা এবং ভুলের জন্য দল হার নিয়ে মাঠ ছেড়েছে। সাকিব বাহিনী খেলার ইতিবাচক দিকগুলোকে শেষ পর্যন্ত কাজে লাগাতে পারেনি।

লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা ২০ ওভারের খেলা ২২ ওভারে নিয়ে যেয়ে-খেলাটা লঙ্কানদের হাতে তুলে দিয়েছে। একটি দলকে জিততে হলে কিছু শর্ত অবশ্যই পূরণ করতে হয়। ব্যাটিং-বোলিং ভালো করার পাশাপাশি ফিল্ডিংটাও মানসম্মত হওয়া প্রয়োজন। এগুলো বিধিবদ্ধ কথা-বার্তা। এর অন্যথা হলে জয় কোনোভাবেই সম্ভব নয়। সে সঙ্গে কমিটমেন্ট। দলের প্রতি, খেলার প্রতি খেলোয়াড়দের কমিটমেন্ট, জয়ের ক্ষেত্রে দারুণ ভূমিকা রাখে।

[caption id="attachment_365491" align="aligncenter" width="700"] ক্যাচ মিস মানে ম্যাচ মিস, টাইগার ফিল্ডাররা হরহামেশা ক্যাচ ছেড়ে দিতে বেশ পটু। ছবি: সংগৃহীত[/caption]

বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়রা এর আগেও দাবি করেছেন, তাদের কমিটমেন্টের অভাব নেই। এখনো দাবি করবেন নিশ্চয়ই। আফগানদের রশিদ খান, মোহাম্মদ নবি কিংবা মুজিব উর রহমানরা নিজের চেষ্টাতে দেশের ক্রিকেটকে টিকিয়ে রেখেছেন। শুধু দলে সুযোগ পাওয়া নয়, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কিভাবে পারফর্ম করতে হয় সে চেষ্টা করছেন। আর বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা চেষ্টা করেন ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো খেলে কিভাবে জাতীয় দলে জায়গাটা নিশ্চিত করা যায়। পারফর্ম করার চিন্তা তাদের মাথায় থাকে না।

টি-টোয়েন্টি মানেই বলে বলে রান, উইকেটের পতন, মাঠে টান টান উত্তেজনা, উৎকণ্ঠা আর অনিশ্চয়তায় ভোগা নয়। এই খেলার পরিকল্পনা, চিন্তা, বুদ্ধি, কৌশল, খেলোয়াড়দের স্কিল, সামর্থের প্রয়োগ, আত্মবিশ্বাস এবং ইতিবাচক মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আলোচনায় ‘পাওয়ার প্লে’ ডটবল, স্ট্রাইকরেট, ওয়াইড বল, উদ্ভাবন ক্ষমতা, পাওয়ার হিটার এবং পার্টনারশিপ-এই শব্দগুলো সব সময় ব্যবহৃত হয়। এগুলোর মধ্যেই তো আছে টি-টোয়েন্টির আসল মজা। মাঠের খেলার রঙ পাল্টে যায় তিন চার বলে।

টি-টোয়েন্টির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো পরিষ্কার আয়না। যেখানে হাস্যময় এবং মলিন মুখ খুব স্পষ্টভাবে ভেসে উঠে। এবার এশিয়া কাপে টাইগাররা প্রথম ম্যাচে আফগানদের বিপক্ষে না হয় কম স্কোরের কারণে হেরেছিল। ম্যাচ শেষে সাকিব ১০-১৫ রান বেশি না করতে না পারার আক্ষেপ জানিয়েছিলেন, কিন্তু লঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচের আক্ষেপ কী? ১৮৩ রান করার পরও কী সাকিব সেই রেকর্ড বাজাবেন, ১০-১৫ রান কম হয়ে গেছে?

১৮৪ রানের লক্ষ্য। অবশ্যই শ্রীলঙ্কা চাপে। বাংলাদেশের বোলারদের এই রান ডিফেন্ড করতে না পারাটাই তো বড় লজ্জার। তাও যদি লঙ্কানরা তাদের ব্যাটারদের কৃতিত্বে ম্যাচটা জিতলে, মনকে বুঝ দিতে পারত টাইগার সমর্থকরা। কিন্তু ২০ ওভারের ম্যাচ সাকিব বাহিনী খেললো ২২ ওভার। মানে ওয়াইড-নোসহ বাংলাদেশ বোলিং করেছে ২২ ওভার। ২ ওভার তথা ১২টি বল বেশি, কল্পনা করা যায়?

৮টা ওয়াইড বল, ৪টা নো বল। ওই ১২টি ওয়াইড এবং নো বল থেকে তো এমনিতেই ১২ রান চলে আসে। কিন্তু ১২ রানে থেমে থাকলে তো ভালোই ছিল। কোনো কোনো নো বলে এসেছে ৫ রান, ৩ রান- এমন। সব মিলিয়ে অতিরিক্ত ১৭ রান। অথচ, ১৮৩ রান দিয়েছিল লঙ্কান বোলাররা। কিন্তু তাদের একজন বোলারও একটিও ওয়াইড-নো দেয়নি। অতিরিক্ত ১০ রান হয়েছে, বাই এবং লেগ বাই থেকে। এগুলো তো ছিল বৈধ বল। অর্থাৎ, ২০ ওভার কাটায় কাটায় শেষ করেছেন লঙ্কান বোলাররা।

দুবাইয়ে টাইগারদের বাঁচা মরার ম্যাচে ২ রানে মুশফিকুর রহিমের হাতে জীবন পাওয়ার পর কুশল মেন্ডিস আরো তিন-তিনবার জীবন পান। তার মধ্যে তৃতীয়বার ৩১ রানে জীবন পান বাংলাদেশ রিভিউ না নেয়াতে। এক প্রান্তে যখন উইকেট পড়ছিল আরেক প্রান্তে ঝড়ো ব্যাটিং করে যাচ্ছিলেন মেন্ডিস। শেষ পর্যন্ত তার গড়ে দেয়া ভিতে জয়ের হাসি হাসে শ্রীলঙ্কা। কেন রিভিউ নেয়া হয়নি? শুধু তাই নয়, এর আগেও এমন হয়েছে বারবার। লঙ্কার বিপক্ষে হারের পর এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। তার সহজ স্বীকারোক্তি, তাকে কেউ বলেনি রিভিউ নিতে।

সাকিব বলেন, কেউই শোনে নাই আসলে। কাভারে ছিলাম, শুনতে পাইনি। কেউই বলেনি, ভাই রিভিউটা নেন। বোলার থেকে শুরু করে কেউই না।’ এশিয়া কাপ থেকে ছিটকে যাওয়ার পর সাকিব আল হাসান কাঠগড়ায় তুলেছেন একজন স্পিনার হয়ে শেখ মেহেদির করা সেই নো বলকে। তিনি জানালেন, স্পিনার হয়ে এভাবে নো বল করাটা রীতিমতো এক অপরাধই। নো বল অবশ্য সেই একটাই করেনি বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণ, এরপর আরো তিনটি নো বল করেছেন বোলাররা, সঙ্গে আছে ৮টি ওয়াইড বলও। আর মেন্ডিসও ‘জীবন’ সেই একটাই পাননি। ইনিংসের শুরুতেই তিনি ফিরতে পারতেন, ব্যক্তিগত ২ রানে তাসকিন আহমেদের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছিলেন, তবে উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিম তা তালুবন্দিই করতে পারেননি।

এরপর সপ্তম ওভারে মেন্ডিস আউট হয়েও বেঁচে যান শেখ মেহেদির সেই নো বলের কল্যাণে। সাকিব সেই বল নিয়ে বললেন, কোনো অধিনায়কই চায় না তার বোলাররা নো বল করুক, আর একজন স্পিনার নো বল করছে, বিষয়টা একটা অপরাধ। ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট কোথায় ছিল এমন প্রশ্নের জবাবে সাকিব বলেছেন, আমাদের ব্যাটসম্যানরা যে সময় আউট হয়েছে, এটা টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে। স্পিনারদের নো বল করাটা অপরাধ, এটাও হতে পারে। এটা আমাদের দেখিয়েছে এমন চাপের মুহূর্তে আমরা ভেঙে পড়ি।’ এখান থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে, আর সামনের দিকে তাকাতে হবে এখন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App