×

মুক্তচিন্তা

অবৈধ ফার্মেসির লাগাম টানুন

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১২:৩০ এএম

ফার্মেসিগুলো মানুষের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও অসাধু ব্যবসায়ীদের কারণে তা আজ মানুষের দুশ্চিন্তা ও জীবননাশের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যা খুবই দুঃখজনক বিষয়। অসাধু ব্যবসায়ীদের ভুল এবং মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ মানুষের জীবন হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে। এই বহুমুখী সমস্যার কবল থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য দেশের সব অবৈধ ফার্মেসির লাগাম টানা প্রয়োজন। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে সারাদেশে নিবন্ধিত ফার্মেসি ১ লাখ ৫১ হাজার। গত দুই বছরে নিবন্ধন পেয়েছে ৩২ হাজার ৫৩৫টি। এ সময়ে আরো ৪৩৬টি মডেল ফার্মেসির অনুমোদন দিয়েছে অধিদপ্তর। তবে নিবন্ধন ছাড়া কতগুলো ফার্মেসি আছে, তার সঠিক হিসাব নেই কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের কাছে। ধারণা আছে হাজার হাজার অসাধু ব্যবসায়ী অবৈধভাবে ফার্মেসি ব্যবসা করে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছে। করোনাকালে নানা ধরনের স্বাস্থ্যসেবা সরঞ্জাম এবং বিভিন্ন ওষুধের চাহিদা কয়েকগুণ বাড়ায় অবৈধ ফার্মেসির ব্যবসাও জমজমাট। তবে তদারকি না থাকায় নকল, ভেজাল, মানহীন, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ও স্বাস্থ্যসেবা সরঞ্জাম বিক্রি হয় এসব দোকানে। নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানের দুর্বলতা, ওষুধ কোম্পানিগুলোর অতি ব্যবসায়িক মনোভাব এবং জনসাধারণের অসচেতনতার কারণেই অবৈধ দোকানগুলো ব্যবসা করার সুযোগ পাচ্ছে। বর্তমান বাংলাদেশে ফার্মেসি ব্যবসা একটি লাভজনক সম্মানজনক ব্যবসা। এখানে কম পুঁজি বিনিয়োগ করে সহজেই লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু ইচ্ছা করলেই যে কেউ ফার্মেসি ব্যবসা শুরু করতে পারবে না। একটা দোকানে কিছু ওষুধ নিয়ে বসে পড়া বেশ সহজ, কিন্তু প্রক্রিয়াটা অবৈধ। এজন্য আপনাকে অবশ্যই ব্যবসার অন্যান্য আনুষঙ্গিক প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের সঙ্গে আরো অতিরিক্ত করতে হবে ফার্মাসিস্টের ট্রেনিং এবং ড্রাগ লাইসেন্স। ওষুধ তিনিই বিক্রি করতে পারবেন যার ফার্মাসিস্ট ট্রেনিং আছে এবং যিনি ড্রাগ লাইসেন্স পেয়েছেন। ড্রাগ লাইসেন্স ছাড়া ওষুধের ব্যবসা সম্পূর্ণ অবৈধ এবং আইনগতভাবে এটি একটি দণ্ডনীয় অপরাধ। আর ওষুধ ব্যবসার জন্য অতি প্রয়োজনীয় এই ড্রাগ লাইসেন্সটি ইস্যু করে বাংলাদেশ সরকারের ‘ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর’। অবৈধ ফার্মেসি পরিচালনা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তবুও বেপরোয়াভাবে বেড়ে চলেছে এই প্রাণনাশকারী সংস্থার বিকাশ। সমাধানে নেই জোরদার কোনো উদ্যোগ। অপরাধীদের আনা হচ্ছে না সঠিক তদন্তের মাধ্যমে শাস্তির আওতায়, যা একটি দেশের স্বাস্থ্যসেবায় হুমকিস্বরূপ। বিশ্ববাজারে বাংলাদেশি ওষুধের সুনাম থাকলেও দেশজুড়ে ওষুধ বাণিজ্যে সীমাহীন নৈরাজ্য চলছে। নকল, ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধের ছড়াছড়িতে মানুষের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছে। সারাদেশে ওষুধ বাণিজ্যের এই অরাজক পরিস্থিতির জন্য কয়েকটি সংঘবদ্ধ চক্র মুখ্য ভূমিকা রাখছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কঠোর মনিটরিং ও কার্যকর শাস্তির ব্যবস্থা না থাকায় ভেজালকারীরা বেপরোয়া। যেসব কোম্পানি নকল ও ভেজাল ওষুধ তৈরির দায়ে অভিযুক্ত, সেগুলোই ঘুরে-ফিরে বারবার এ তৎপরতায় লিপ্ত থাকছে। ভেজাল ও নকল ওষুধের কারণে অনেক সময় রোগী সুস্থ হওয়ার বদলে হয়ে পড়ছে আরো অসুস্থ। প্রাণহানির ঘটনাও কম নয়। কিন্তু ওইসব ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিরা পার পেয়ে যাচ্ছেন আইনের ফাঁকে। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। যা খুবই দুঃখজনক একটি বিষয়। একটি খুচরা বা পাইকারি দোকানের ড্রাগ লাইসেন্স নেয়ার পর প্রতি দুই বছর অন্তর নবায়নের বাধ্যবাধকতা আছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নবায়ন না হলে বিলম্ব ফি দিয়ে নবায়নের সুযোগ আছে। কিন্তু বছরের পর বছর পার হলেও লাইসেন্স নবায়ন করছেন না অনেক ব্যবসায়ী। দীর্ঘদিন এভাবে চলতে থাকলেও মেয়াদোত্তীর্ণ এসব লাইসেন্স বাতিলে কোনো উদ্যোগই নেয় না ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তরের উচিত সঠিক তদন্তের মাধ্যমে দেশের সব অবৈধ ফার্মেসিগুলোর লাগাম ধরা। গ্রাম থেকে শহর সর্বত্র মানুষের সঠিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। যার ফলে মানুষ সুস্থতার পরিবর্তে অসুস্থ হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাবে। এছাড়াও অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যুর হাত থেকে রেহাই পাবে। সর্বদিক বিবেচনা করে দেশের সব অবৈধ ফার্মেসি উৎখাতের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।

মিজানুর রহমান মিজান : শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App