×

জাতীয়

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আবারও গ্রেপ্তার ঝুমন দাস

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩১ আগস্ট ২০২২, ০৮:৩৪ এএম

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আবারও গ্রেপ্তার ঝুমন দাস

ঝুমন দাস। ছবি: ভোরের কাগজ

ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ার জেরে দিনভর থানায় আটকে রেখে সুনামগঞ্জের শাল্লার ঝুমান দাস আপনকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছে শাল্লা থানা পুলিশ।

মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) মধ্যরাতে শাল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ঝুমন দাস আপনকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের একটি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শাল্লা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সুমননুর রহমান বাদী হয়ে এই মামলাটি দায়ের করেন বলে জানান তিনি।

এর আগে মঙ্গলবার সকালে ঝুমন দাশকে বাড়ি থেকে ধরে আনে পুলিশ। টানা ১২ ঘণ্টা তাকে থানায় আটকে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

ঝুমনের ভাই নুপুর দাস বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক উস্কানি দেয়ার অভিযোগে পুলিশ মঙ্গলবার সকাল ১১টায় তাকে থানায় নিয়ে যায়। এর আগে দুই দিন ধরে তাকে অনুসরণ করছিল পুলিশ। পুলিশ তার মোবাইল নিয়ে গেছে এবং বেশ কিছু পোস্ট সরিয়ে দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সন্ধ্যায় ঝুমনের স্ত্রী থানায় গেলে তাকে অবহিত করা হয় জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ঝুমনকে ছেড়ে দেয়া হবে। কিন্তু মধ্যরাতে মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় তাকে।

ঝুমন দাসের এই ভাই বলেন, ‘মন্দিরের ভেতরে মসজিদের দানবাক্স’ সংক্রান্ত ফেসবুকে ছড়িয়ে পরা একটি ছবি নিজের আইডি থেকে শেয়ার করেছিলেন ঝুমন। এ নিয়ে এলাকায় দেখা দেয় তুমুল উত্তেজনা।

গত বছরের ১৫ মার্চ সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে ‘শানে রিসালাত সম্মেলন’ নামে একটি সমাবেশের আয়োজন করে হেফাজতে ইসলাম। এতে হেফাজতের তৎকালীন আমির জুনায়েদ বাবুনগরী ও যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক এতে বক্তব্য দেন।

ওই সমাবেশের পরদিন ১৬ মার্চ মামুনুল হকের সমালোচনা করে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন শাল্লার নোয়াগাঁওয়ের ঝুমন দাস। স্ট্যাটাসে মামুনুলের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের অভিযোগ আনেন তিনি।

মামুনুলের সমালোচনাকে ইসলামের সমালোচনা বলে এলাকায় প্রচার চালাতে থাকেন তার অনুসারীরা। এতে এলাকাজুড়ে উত্তেজনা দেখা দেয়। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে নোয়াগাঁও গ্রামের বাসিন্দারা ১৬ মার্চ রাতে ঝুমনকে পুলিশের হাতে তুলে দেন।

পরদিন বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর সকালে কয়েক হাজার লোক লাঠিসোঁটা নিয়ে মিছিল করে হামলা চালায় নোয়াগাঁও গ্রামে। তারা ভাঙচুর ও লুটপাট করে ঝুমন দাসের বাড়িসহ হাওরপাড়ের হিন্দু গ্রামটির প্রায় ৯০টি বাড়ি, মন্দির। ঝুমনের স্ত্রী সুইটিকে পিটিয়ে আহত করা হয়।

এরপর ২২ মার্চ ঝুমনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে শাল্লা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল করিম।

শাল্লায় হামলার ঘটনায় শাল্লা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল করিম, স্থানীয় হাবিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বিবেকানন্দ মজুমদার বকুল ও ঝুমন দাসের মা নিভা রানী তিনটি মামলা করেন। দায়েরকৃত তিন মামলায় প্রায় তিন হাজার আসামি। পুলিশ নানা সময়ে শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে। তারা সবাই এখন জামিনে।

শুধু জামিন পাচ্ছিলেন না ঝুমন দাস। বিচারিক আদালতে পাঁচ দফা তার জামিন আবেদন নাকচ করেন বিচারক। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন অধিকারকর্মী, বুদ্ধিজীবী ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা চলছিল।

এর মধ্যে জামিনের জন্য হাইকোর্টে আবেদন করেন ঝুমন দাস। কারাবন্দির ছয় মাস পর জামিনে মুক্তি পান তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App