×

সারাদেশ

চালু হচ্ছে রামগড় স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন কার্যক্রম

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩১ আগস্ট ২০২২, ০৪:০৮ পিএম

চালু হচ্ছে রামগড় স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন কার্যক্রম

সোমবার নৌপরিবহন সচিব মো. মোস্তফা কামাল ইমিগ্রেশন ভবন নির্মাণ কাজের অগ্রগতি পরিদর্শনে আসেন। ছবি: ভোরের কাগজ।

চালু হচ্ছে রামগড় স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন কার্যক্রম

রামগড় ইমিগ্রেশন ভবন

সীমান্ত জটিলতায় রামগড় স্থলবন্দর অবকাঠামো নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকলেও প্রাথমিক ভাবে চালু হচ্ছে বন্দরের ইমিগ্রেশন কার্যক্রম। তবে বন্দরের চার তলা পাসেঞ্জার টার্মিনাল ও পোর্ট ভবন, চার তলার ডরমেটরী ভবন, এক্সেল কন্ট্রোল কক্ষ, বাংলাদেশ-ভারত ট্রাক টার্মিনালসহ নানা অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ হওয়ার আগে পণ্যবাহী পরিবহন যাতায়াতের সুযোগ তৈরী হচ্ছেনা এই বন্দরে।

গত সোমবার (২৯ আগস্ট) নৌপরিবহন সচিব মো. মোস্তফা কামাল বন্দরে নির্মাণাধীন ইমিগ্রেশন ভবন নির্মাণ কাজের অগ্রগতি পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের জানান, ইমিগ্রেশন ভবন নির্মাণ শেষ পর্যায়ে। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রামগড় স্থলবন্দরে ইমিগ্রেশন কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও কাস্টমসের দিক থেকে আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত। উদ্বোধনের পর যখন অন্যান্য অফিস এসে বসবে তখনি ইমিগ্রেশন কার্যক্রম পুরোপুরি চালু হবে। তখন দুই দেশের নাগরিকরা ভিসা সাপেক্ষে বাংলাদেশ ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে সহজে যাতায়াত করতে পারবেন।

[caption id="attachment_365010" align="aligncenter" width="700"] রামগড় ইমিগ্রেশন ভবন[/caption]

জানা গেছে, খাগড়াছড়ির রামগড় ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সাব্রুম সীমান্তের ফেনী নদীর ওপর নির্মাণ করা হয়েছে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু। ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণসহ নানা লক্ষ্যকে সামনে রেখে মৈত্রী সেতুর বাংলাদেশ অংশে প্রায় দুইশ’ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করার কথা রামগড় স্থলবন্দর। অবকাঠামো নির্মাণে সরকার এর অনুমোদন দিয়েছে ২০১৭ সালে। এরপর স্থলবন্দরের জন্য প্রথমে ১০ ও পরে আরও ১৬ একর জায়গা অধিগ্রহণ করা হয় প্রায় ৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে। ২০২৪ সালের জুন মাসের মধ্যে এই বন্দরের নির্মাণকাজ শেষ করার লক্ষ নিয়ে ঠিকাদারও নিয়োগ করে বন্দর কর্তৃপক্ষ কিন্তু সীমান্ত জটিলতার অভিযোগ তুলে গত জানুয়ারীতে বাঁধা দেয় ভারতীয় সীমান্ত বাহিনী বিএসএফ। ঠিকাদার কাজ শুরুর প্রস্তুতি নিলে বন্ধ হয়ে যায় বন্দরের স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ কাজ।

সূত্র মতে, স্থলবন্দরের স্থায়ী কাঠামো তৈরী নিয়ে জটিলতার কারণে নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় অস্থায়ী অবকাঠামোয় ইমিগ্রেশন কার্যক্রম চালু করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। জটিলতা নিরসন হলে বন্দর দিয়ে পণ্যবাহী গাড়ীসহ আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হবে বলেও জানান তারা। মূলত ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এ স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমের আগে ইমিগ্রেশন কার্যক্রম শুরু করার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ করায় প্রথমে ইমিগ্রেশন কার্যক্রম চালু করছে বাংলাদেশ বন্দর কর্তৃপক্ষ।

চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রায় ১১২ কিলোমিটার দূরত্বের এই স্থলবন্দর ব্যবহার করে মাত্র তিন ঘণ্টায় চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ট্রান্সশিপমেন্টের পণ্য যেতে পারবে ভারতে। দেশটির সেভেন সিস্টার্স খ্যাত উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় ত্রিপুরা রাজ্যসহ মেঘালয়, আসাম, মণিপুর, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড এবং অরুণাচলের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন হবে এই বন্দর দিয়েই। একই সঙ্গে রামগড় স্থলবন্দর ব্যবহার করে চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে পণ্য পরিবহন করতে পারবেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। বাড়বে দুই দেশের ববসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পর্যটন সহ বিকশিত হবে পাহাড়ের অর্থনীতি।

জানা গেছে, এই বন্দরকে কেন্দ্র করে ৮৪৫ কোটি ৫৩ লাখ টাকা ব্যায়ে চট্টগ্রামের বাইয়ারহাট থেকে রামগড় স্থলবন্দর পর্যন্ত সড়ক প্রশস্ত করণ প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু করেছে সওজ বিভাগ। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ভারত দিচ্ছে ৫৮১ দশমিক ২০ কোটি টাকা। বাকি টাকা বাংলাদেশ সরকার নিজ তহবিল থেকে দিচ্ছে।

বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, বাংলাদেশি ব্যবসায়িরা ভারত থেকে গবাদিপশু, মাছের পোনা, তাজা ফলমূল, গাছগাছড়া, বীজ, গম, পাথর (স্টোনস এন্ড বোল্ডারস) কয়লা, রাসায়নিক সার, চায়না ক্লে, কাঠ, টিম্বার, চুনাপাথর, পিঁয়াজ, মরিচ, রসুন, আদা, বলক্লে, কোয়ার্টজ, চাল, ভূষি, ভুট্টা, বিভিন্ন প্রকার খৈল, পোল্ট্রি ফিড, ফ্লাই অ্যাশ, রেলওয়ে স্লিপার, বিল্ডিং স্টোন, রোড স্টোন, স্যান্ড স্টোন, বিভিন্ন প্রকার ক্লে, গ্রানুলেটেড স্লাগ ও জিপসাম সহ ইত্যাদি আমদানি করতে পারবে এবং রপ্তানি করতে পারবেন সকল পণ্য।

রামগড় পৌর মেয়র রফিকুল আলম কামাল বলেন, ইমিগ্রেশন কার্যক্রম চালু হচ্ছে এতে আমরা আশার আলো দেখছি। তবে বন্দর টার্মিনাল নির্মাণ ও পণ্যবাহী পরিবহন সুবিধা চালু হলে এ অঞ্চলের মানুষ লাভবান হবেন। তখন চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের জন্য নতুন অর্থনৈতিক সম্ভাবনা বয়ে আনবে। তবে এ বন্দরের সরচেয়ে বড় সুবিধাভোগী হবে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো। তারা সহজে ও কম খরচে অল্প সময়ে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পণ্য পরিবহনের সুবিধা পাবেন।

বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের প্রকল্প ব্যবস্থাপক ইন্জিনিয়ার রুহুল আমীন জানান, সীমান্ত জটিলতায় মূল অবকাঠামো নির্মাণ এখনো শুরু হয়নি। তবে এই জটিলতা নিরসনে দুই দেশে উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা হচ্ছে। দুই দেশের অভিভাসন কার্যক্রম চালুর লক্ষে আমরা ইমিগ্রেশন ভবন নির্মাণ করছি।

রামগড় স্থলবন্দরের প্রকল্প পরিচালক মো. সারওয়ার আলম বলেন, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে প্রায় দুইশ’ কোটি টাকা ব্যয়ে রামগড় স্থলবন্দর নির্মাণে মনিকো লিমিটেড নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজের দায়ীত্ব দেয়া হয় কিন্তু সীমান্ত জটিলতায় নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। তবে জটিলতা নিরসরে বাংলাদেশ-ভারতের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা চলছে তাছাড়া প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে দ্বিপক্ষয় আলোচনায় বিষয়টি সমাধান হলে দ্রুত বন্দর অবকাঠামো নির্মাণ পুরোদমে শুরু হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App