×

জাতীয়

রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ বৈশ্বিক পরিস্থিতি অস্থির করে তুলেছে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ আগস্ট ২০২২, ১১:৫৪ পিএম

রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ বৈশ্বিক পরিস্থিতি অস্থির করে তুলেছে

মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: পিএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বৈশ্বিক অস্থিরতা, কোভিট ১৯, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক ভাবে তেলের দামটা বেড়ে যাওয়ার কারণে এর প্রভাব দেশের বাজারে পড়েছে। এর কারণে বৈশ্বিক পরিস্থিতি অস্থির করে তুলেছে। যার ফলে সব কিছুর উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে ৪০ শতাংশের মত। সে কারণে বাজারে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। সব দেশের মতো আমরাও জ্বালানী তেলের কিছুটা মূল্য বাড়াতে বাধ্য হয়েছি। তিনি বলেন, আমি এখানে এসেছি দেশের মানুষের উন্নয়ন করার জন্য, কোন দুর্নীতি ও লুটপাটের জন্য নয়। যখন ওয়ার্ল্ড ব্যাংক পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ করেছিল, তখন আমরা ক্যানাডিয়ার আদালতে প্রমাণ করি এখানে কোন দুর্নীতি হয়নি। আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করি। আমরা দেশের জনগণের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি।

মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) সংসদে ১৪৭ (১) বিধি অনুযায়ী জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু আনীত সাধারণ প্রস্তাব-এর ওপর আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রস্তাবটি সংসদে গৃহিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যখন প্রবৃদ্ধি আট ভাগে নিয়ে আসলাম, তখন আসলো কোভিট ১৯, তার পরে যখন সামলে নিলাম রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ। এই পরিস্থিতি বিশ্বের অর্থনীতিক ব্যবস্থাকে অস্থির করে তুলেছে। বিশ্বের প্রতিটি দেশকে অর্থনৈতিক দুরবস্থা মোকাবেলা করতে হচ্ছে। সব জিনিসের আমদানীতে প্রায় ৬০ শতাংশ মূল্য বাড়তি দিতে হচ্ছে। আগের চেয়ে ৯ বিলিয়ন ডলার বেশী খরচ করতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, ২০২১ সালে প্রতি ব্যারেল ডিজেলের দাম ছিল ৮৩.৩৫ মার্কিন ডলার। এখন গড় মূল্য ১৩২.৫৩ মার্কিন ডলার। এর আগে ছিল ১৭০ মার্কিন ডলার। সেই সাথে বিভিন্ন প্রকার সারের ক্রয় মূল্য ৭৫ টাকা কেজি, যা ২২ কেজিতে দিচ্ছি। ৫৩ টাকা কেজিতে ভর্তূকি দিচ্ছি। সব ধরনের সারে কিন্তু আমরা অনেক ভর্তূকি দিচ্ছি। চিনির চাহিদা ২০ লাখ মেট্রিক টন। ৯৬ ভাগ আমদানী করতে হয়। মুসুর ডাল ৫ লাখ মেট্রক টন, চাহিদার সাড়ে ৪ লাখ মেট্রিক টন আমদানী করতে হয়। তাও ভর্তূকি দিয়ে বিক্রি করছি। আর আমদানী ব্যয় বেড়েছে ১২০ ভাগ। তিনি বলেন, পরিবহন ব্যয় বাড়ায় ৪০ শতাংশ উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের অভিজ্ঞতাটাও খুব তিক্ত। ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলা ঘটার পরে এই পার্লামেন্টের ৪-৫ জন এমপি আহত হন। আমরা কিন্তু বিএনপি আমলে কোনো কথা বলতে পারিনি। কিন্তু আজ তারা বিরোধীদের প্রস্তাবের ওপর ব্যাপক আলোচনার সুযোগ পাচ্ছেন। তিনি বলেন, আমাদের রিজার্ভ নিয়ে কোনো চিন্তার কিছু নেই। যদি কোনো দেশের রিজার্ভ তিন মাসের থাকে তা হলে তা ব্যালেন্সিং অবস্থায় থাকে। আমাদের ৫ মাসের রিজার্ভ এর পরিমাণ ডলার রয়েছে। বর্তমানে সরকারি মন্ত্রী বা এমপিদের যানবাহন কেনা বন্ধ করা হয়েছে। তিনি বলেন, বিভিন্ন সরকারি কোনো কমিটির মিটিংয়ের ওনারিয়াম বন্ধ রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, সব দিক বিবেচনা করেই আমরা জ্বালানীর মূল্য সমন্বয় করেছি। কেননা, বৈশ্বিক সংকট ও মূল্য বাড়ায় আমরা দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছি।

বাপেক্স সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘৯৬ সালে আমরা যখন সরকারে আসি তখন বাপেক্স বলে তেমন কোন কোম্পানী ছিল না। তখন আন্তর্জাতিক কোম্পানী গ্যাস উত্তোলন করতে দেয়া হতো, তখন থেকে বাপেক্সকে ১০ থেকে ২০ শতাংশ শেয়ার দিই। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে আমরা ৫টি গ্যাস কুপের সন্ধান পেয়েছি। ২০০৯ এ আমরা পেয়েছিলম ১ হাজার ৯ মিমি ঘনফুট, এখন বেড়ে হয়েছেন ২ হাজারের ৯০০ মিলিয়ন ঘনফুট ওপরে গ্যাস পেয়েছি।

তিনি বলেন, আমরা সমুদ্র সীমা অর্জনের পরে একটি কোম্পানী গ্যাসের সন্ধানে এসেছিল, কিন্তু পরে তারা চলেও যায়। তবে আমরা সমুদ্রে গ্যাসের সন্ধান করে চলেছি।

পদ্মা সেতুর রিটার্নের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা একটা বিশাল প্রকল্প নিলাম , আর ভাবলাম সেখান থেকে কি রিটার্ন আসবে সেটা তো আমরা দেখি না। পদ্মা সেতু নির্মাণ আমরা নিজম্ব টাকায় করেছি। গত ৬০ দিনে পদ্মা সেতুতে টোল আদায় হয়েছে ১৩৮ কোটি ৮৪ লাখ ৩ হাজার ৮৫০ টাকা। দক্ষিণাঞ্চলের উৎপাদিত পণ্য দ্রুত ঢাকায় চলে আসছে।

তিনি বলেন, আজকে বিদ্যুতের কথা, আমরা ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছিলাম। কিন্তু ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধে সবার মতো আমরা কিছুটা বিপদে পড়েছি। জার্মানী তো বলে দিয়েছে কেউ নতুন করে বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবে না। সব দেশে একই অবস্থা। তিনি বলেন, আমরা সচিবালয়েও বিদ্যুৎ সাশ্রয় করছি। আমি বঙ্গবন্ধুর কন্যা, এ দেশের মানুষকে আমিও তো খুব ভালবাসি। তাই তাদের উন্নয়ন উন্নতি আমি মনে প্রাণে চাই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মার্কিন মূল্য স্ফীতি গত বছরে সর্বোচ্চ বেড়েছে। ব্রাজিলের মূল্যস্ফিতি সর্বোচ্চ। বিশ্বজুড়ে মুল্য স্ফীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রে ৩৫ শতাংশ বেড়েছে। যুক্তরাজ্যে গ্যাস, পানি পর্যন্ত রেশনিং করা হচ্ছে। পানি নিয়ন্ত্রণ ও নির্দেশনা করে রেশনিং করা হচ্ছে। জাপানেও লোডশেডিং করা হচ্ছে। সেখানে পানি ব্যবহারের নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। ইউরোপে গ্যাসের ব্যবহার ১৫ শতাংশ কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যখন ২২-২৩ অর্থ বছরে বাজেট দিলাম তখন অর্থনৈতিক সঙ্কটের কথা মাথায় রেখে সাধারণ মানুষের জীবন যাপনের ভর্তূতির জন্য অর্থ বরাদ্দ রাখি ও কর্মসূচি রাখি। আমরা খাদ্য বান্ধব কর্মসূচি বজায় রেখেছি।

তিনি বলেন, এত করোনা গেল, যুদ্ধ চলছে- তার পরেও আমরা ৭.৫ শতাংশ জিডিপি অর্জন করেছি এ অর্থ বছরে। আমাদের রপ্তানির ক্ষেত্রে যথেষ্ঠ সুযোগ দিচ্ছি। এ ক্সেত্রে ভালো প্রণোদোনা দিচ্ছি। আরো প্রণোদোনা বাড়াবো। ২০২১-২০২২ পর্যন্ত আমদানি একেবারে বন্ধই ছিল। পরে আমদানি এসেছে, যদিও এতে বেশি অর্থ খরচও হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থ বছরে আমদানিতে অতি মাত্রায় রেমিটেন্স এসেছে। ফলে চলতি মার্চে ৭.৯২ বিলিয়ন ডলার এখন চলতি মাসে তা কমে হয়েছে ৩.২২ মার্কিন ডলার হয়েছে। তবে কোন কোন আমদানিকারী কিছুটা মুনাফা অর্জন করতে চায়, তাদের আমরা মনিটরিং করছি। রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে কোন রকম কাগজপত্র ছাড়াই পাঠাতে পারবে। বর্তমানে ৬টি বাণিজ্যিক ব্যাংক ডলার নিয়ে অবৈধ কারসাজি করার কারণে ওএসডি করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা যেসব ঋণ নিয়েছি তা নিয়মিত দিয়ে যাচ্ছি। কোন খেলাপী হয়নি। উন্নয়ন বাজেটে বেশ কিছু ব্যবস্থা নেয়া রয়েছে। যানবাহন কেনা যাবে না, বিদেশ ভ্রমন বন্ধ, আপ্যায়ণ নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। কোন প্রকার সম্মানী বন্ধ রাখা হয়েছে। সচিবালয়ে বিদ্যুৎ সহ সব ধরনের সাশ্রয় করা হচ্ছে।

আওয়ামী লীগের বর্ষিয়ান পার্লামেন্টেরিয়ান ও সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কর্নেল (অব.) ফারুক খান, কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনসী, সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খান, সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, সাবেক হুইপ আব্দুস শহীদ বৈশ্বিক কারণে আওয়ামী লীগ সরকারের জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর যৌক্তিকতা তুলে ধরেন। তারা এর কারণ হিসেবে রাশিয়া- ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়টি উল্লেখ করেন। সারা বিশ্বে আজ যে অস্থিরতা তার কিছুটা আঁচ এদেশে লেগেছে। এর জন্য বৈশ্বিক পরিস্থিতিকে দায়ি করেন তারা। তবে অচিরে তা দুর হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেন তারা। এসময় আওয়ামী লীগের নেতারা বিএনপি আমলে বিদ্যুতের খাম্বা ও বিদ্যুৎহীনতার কথা তুলে ধরেন। এ প্রস্তাবের ওপর আরো বক্তব্য রাখেন, জাপার পীর ফজলুর রহমান, ওয়াসিকা আয়েশা খান, সুলতান মো. মনসুর আহমেদ, আহসানুল হক টিটু, সামছুল হক চৌধুরী, জাপার সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, আবিদা খাতুন মিতা প্রমুখ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App