×

জাতীয়

ব্যাচেলেটের সফরে তৃপ্ত সরকার: পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ আগস্ট ২০২২, ০৯:০৮ পিএম

জাতিসংঘের গুমের তালিকার ৭৬ জনের মধ্যে ১০ জনকে পাওয়া গেছে

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয় হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেটের বাংলাদেশ সফর সফল হয়েছে বলে দাবি করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। গতকাল নিজ মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আমরা তাকে যে উদ্দেশ্য নিয়ে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম সেটি সফল হয়েছে। কিছু মানুষের মুখোশ উন্মোচন হয়েছে এবং আশাকরি তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে শুধু শুধু বিভ্রান্ত করা থেকে বিরত থাকবেন। প্রসঙ্গত, গত ১৪ থেকে ১৭ আগস্ট মিশেল ব্যাচেলেট বাংলাদেশ সফর করেন।

মিশেলের সফরের এতদিন পরে গুম প্রতিরোধ দিবসে এসে কেন সরকারকে এমন বক্তব্য দিতে হচ্ছে- প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গত দুদিন ধরে এটা নিয়ে খুব আলোচনা-সমালোচনা প্রেক্ষিতে বক্তব্য দিতে হচ্ছে। মানাবধিকারের বিষয়ে যেসব সমস্যা আছে সেগুলো কাটাতে মানবাধিকার বিষয়ক যেসব প্রতিষ্ঠান আছে তাদের প্রশিক্ষণ দেয়ার কথা আইনমন্ত্রী মিশেলকে বলেছেন। ডিজিটাল সিকিউরিটি এ্যাক্ট নিয়ে কাজ করার জন্য দুটো অফিস নেয়ার কথা বলেছেন। যারা এটা নিয়ে কাজ করেন, মুক্তমনে কাজ করতে চান তাদের নিয়ে ভবিষ্যতে আমরা কাজ করতে চাই-কথাটি মিশেলকে জানিয়েছি।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জানিয়েছেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ থেকে গুম হওয়া যে ৭৬ জনের তালিকা দেয়া হয়েছে, এর মধ্যে ১০ জনকে খুঁজে পাওয়া গেছে। বাকিদের খোঁজ পাওয়ার চেষ্টা চলছে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জানান, জাতিসংঘ যে ৭৬ জনের তালিকা দিয়েছে, সেই তালিকায় আজ থেকে ২০ -২৫ বছর আগে গুম হওয়া ব্যক্তিরও নাম রয়েছে। আমরা যখন সরকারে ছিলাম না, সেই সময়ের নামও রয়েছে। সেখানে কল্পনা চাকমার নাম রয়েছে। তিনি জানান, গুমের তালিকার ৭৬ জনের মধ্যে ১০ জনের খোঁজ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ২৮ জন দাগী আসামিও রয়েছে। তারাও বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে থাকতে পারে। আবার এর মধ্যে একটি মেয়ের নাম ছিল, যার মা অভিযোগ করেছিলেন, সে গুম হয়েছে। পরে দেখা গেল মেয়েটি পালিয়ে বিয়ে করেছে। শাপলা চত্ত্বরে হেফাজতের আন্দোলনের সময় নিখোঁজ হওয়া এমন ১০-১২ জন পরে ফিরে ফিরে এসেছে। প্রতিমন্ত্রী জানান, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট ঢাকা সফরের সময় গুম হওয়া ব্যক্তিদের জন্য কোনো বিশেষ সংস্থা গঠনের দাবি জানাননি। তিনি এক্ষেত্রে একটি মেকানিজমের কথা বলেছেন। রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা পুরো বিষয়টি মিশেলকে জানিয়েছি। নির্বাচন কমিশন সব রাজনৈতিক দলকে ডেকেছে, বিএনপি যায়নি, এটাও জানিয়েছি। গুম-খুনের বিষয়ে নিরপেক্ষ যে তদন্তের কথা বলা হয়েছে তা জাতীয় মানবাধিকার কমিশন চাইলেই করতে পারে।

তদন্তে সাহায্যের অনুমতি দিতে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের আহবান:

বিশ্ব গুম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক রিপোর্টে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস বলেছে, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের উচিৎ জোরপূর্বক গুমের অভিযোগগুলোর স্বচ্ছ ও স্বাধীন তদন্তের আন্তর্জাতিক আহবানে সাড়া দেয়া। সম্প্রতি তিন দিনের সফরে বাংলাদেশে গিয়েছিলেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট। তিনি সরকারের প্রতি গুমের ভিক্টিম, তাদের পরিবার এবং সুশীল সমাজকে সঙ্গে নিয়ে একটি বিশেষ মেকানিজম বা পদ্ধতি প্রতিষ্ঠার আহবান জানান, যার মাধ্যমে দেশের গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগগুলো তদন্ত করা যাবে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী ওই মেকানিজম বাস্তবায়নে তিনি জাতিসংঘের সহযোগিতার প্রস্তাবও দেন। নিরাপত্তা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দোষী সাব্যস্ত করতে এবং ভবিষ্যতে এ ধরণের নির্যাতন বন্ধ করতে বাংলাদেশের কৌশলগত এবং বাণিজ্য সহযোগীরা সরকারের প্রতি এরইমধ্যে আহবান জানিয়েছে। এ নিয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলী বলেন, অসংখ্য গুমের সঙ্গে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের যুক্ত থাকার যে প্রমাণ রয়েছে তা বেশ শক্ত। বাংলাদেশ সরকারের উচিৎ এ নিয়ে তাদের অজ্ঞতা জাহির বন্ধ করা এবং অভিযুক্তদের জবাব ও দায় নিশ্চিতে জাতিসংঘের সঙ্গে কাজ করা। ২০২১ সালে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বাংলাদেশে গুম নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। এতে এ ধরণের ৮৬টি ঘটনা তুলে ধরা হয়। বাংলাদেশ সরকার ওই রিপোর্ট অস্বীকার করা ছাড়া আর কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। এছাড়া হিউম্যান রাইটস ওয়াচের কাছে কোনো ধরণের আপডেট তথ্যও দেয়নি বাংলাদেশ সরকার।

মিশেল ব্যাচেলেটের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করলো ঢাকার মার্কিন দূতাবাস:

আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশে গুমের অভিযোগগুলো গভীরভাবে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে ঢাকায় অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস। মঙ্গলবার সকালে নিজেদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে দেয়া এক পোস্টে এই আহ্বান জানিয়ে বলা হয়েছে, সম্প্রতি জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট বাংলাদেশে জোরপূর্বক গুমের অভিযোগগুলো নিয়ে যে গভীর তদন্তের আহ্বান জানিয়েছিলেন, তা পুনর্ব্যক্ত করছে মার্কিন দূতাবাস। এ মাসের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশ সফরের সময় ব্যাচেলেট বলেছিলেন, সরকারের মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে যে গুরুতর অভিযোগগুলো আনা হয়েছে তা নিয়ে আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তিনি এসব অভিযোগের নিরপেক্ষ, স্বাধীন এবং স্বচ্ছ তদন্তের ওপরে জোর দেন। এছাড়া নিরাপত্তা ক্ষেত্রে সংস্কারের কথাও বলেন তিনি। মার্কিন দূতাবাস ফেসবুকে জানায়, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বজুড়ে গুমের শিকার হওয়া ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করছে। ওই পোস্টের সঙ্গে মিশেল ব্যাচেলেটের বক্তব্যের লিংক যুক্ত করে দিয়েছে মার্কিন দূতাবাস। বাংলাদেশ সফর শেষে ঢাকার একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন ব্যাচেলেট। এতে তিনি বলেছিলেন, গত কয়েক বছর ধরে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা গুম নিয়ে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করে যাচ্ছিল। ঢাকায় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ নিয়ে তার গভীর উদ্বেগের কথা তিনি জানিয়েছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App