×

সম্পাদকীয়

অবৈধ ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার নিয়ন্ত্রণ : সরকারের কঠোর অবস্থান দেখতে চাই

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৩০ আগস্ট ২০২২, ০১:৪৮ এএম

তিন মাস বন্ধ থাকার পর গতকাল থেকে আবার অভিযানে নেমেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এই অভিযান চলবে আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে সেবার মান বাড়াতে ও শৃঙ্খলা ফেরাতে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে সরকার। দীর্ঘদিনের অনিয়ম ও বাণিজ্য এবং ভোগান্তি দূর করতে অবৈধ হাসপাতাল বন্ধে অভিযানে নেমেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। এসব অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিকের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। বিনা চিকিৎসা বা ভুল চিকিৎসায় এসব হাসপাতালে রোগীর মৃত্যু যেন স্বাভাবিক বিষয়। আর উচ্চহারে বিল আদায়ের ঘটনা তো রয়েছেই। গত মে মাসের শেষের দিকে টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পরপর মা ও নবজাতক মৃত্যুর ঘটনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের টনক নড়ে। ২৫ মে ৭২ ঘণ্টা বা তিন দিনের মধ্যে দেশের সব অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এই সময়ের পর নিবন্ধনহীন কোনো ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালু থাকলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে ঘোষণাও দেয়া হয়। এতে দেড় হাজারেরও বেশি অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দেয়া হয়। প্রথম ১০ দিন সাঁড়াশি অভিযান চললেও পরবর্তীতে এ অভিযানের গতি অনেকটা কমে আসে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, এই অভিযান চলমান একটি প্রক্রিয়া। এর আগেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বরাবরই বলে এসেছে ভুয়া ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর বিরুদ্ধে সরকারের অভিযান অব্যাহত থাকবে ও ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিন্তু জনবল সংকটের দোহাই দিয়ে কার্যকর কিছু দেখা যায়নি। দেশে ১৩ হাজার ৬৮০টি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে লাইসেন্স আছে ৬ হাজার ১০২টির। এর মধ্যে হাসপাতাল ২ হাজার ১৪৮টি, প্যাথলজি ল্যাব ৩ হাজার ৮৭২টি ও ব্লাড ব্যাংক ৮২টি। লাইসেন্সের জন্য আবেদন এবং পরিদর্শনের অপেক্ষায় আছে আরো কয়েক হাজার প্রতিষ্ঠান। উদ্বেগের বিষয়, লাইসেন্স ও ভ্যালিড কাগজপত্র নেই, অন্যদিকে তারা যে ভালো সেবা দিচ্ছে তাও নয়। অনেক ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিকে নেই ন্যূনতম ডাক্তার, নার্স ও টেকনিশিয়ান। চিকিৎসা না দিয়ে যেনতেনভাবে মানুষের গলা কেটে ব্যবসা করাই যেন তাদের মুখ্য উদ্দেশ্য। চিকিৎসাবিজ্ঞানের অভাবনীয় অগ্রগতি ঘটেছে। উন্নত বিশ্বের অনেক উদ্ভাবনের সুফল ভোগ করছে বাংলাদেশের মানুষ। তবে অর্থনৈতিক কারণে এ সুবিধা সবার কাছে সমভাবে পৌঁছানো সম্ভব হয় না। বিশেষভাবে অসচ্ছল জনগোষ্ঠীর জন্য এ সমস্যা আরো তীব্র হয়, যখন চিকিৎসকরা অনেক ধরনের পরীক্ষা করাতে বলেন। মেডিকেল টেস্টকে কমবেশি সব চিকিৎসক বাড়তি উপার্জনের হাতিয়ারে পরিণত করছেন, এমন অভিযোগ ক্রমশ বাড়ছে। চিকিৎসাসেবাকে সাধারণ মানুষের কাছে সহজলভ্য করতে সরকার প্রতি বছরই শত শত কোটি টাকা বাজেট বাড়াচ্ছে। সরকারি হাসপাতালে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকার কথা থাকলেও দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা এবং অনৈতিক কারসাজির সিন্ডিকেটেড বাণিজ্যের জন্য সে সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন দেশের দরিদ্র মানুষ। এ ধরনের হয়রানি ও অনৈতিক বাণিজ্য বন্ধ করতে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশাপাশি অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App