×

জাতীয়

প্রধানমন্ত্রীর ফলপ্রসূ সফর চায় ভারত-বাংলাদেশ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ আগস্ট ২০২২, ০৮:২০ এএম

ঢাকা ও দিল্লিতে প্রস্তুতির তোড়জোড়

বাংলাদেশ ও ভারত- দুই দেশেই জাতীয় নির্বাচন সামনে। বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু আলোচনার টেবিলে। পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট একাধিক বিষয় আশু সমাধানযোগ্য। আবার কিছু বিষয় দীঘদিন ধরে ঝুলে থাকায় অস্বস্তি আছে। এমন আবহে আগামী ৫ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চার দিনের সফরে ভারত যাচ্ছেন। তার এই সফর ঘিরে অমীমাংসিত ইস্যু নিষ্পত্তির পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে চলমান বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দুই পক্ষই ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে কাজ করছে। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, দুই প্রতিবেশী দেশের ঐতিহাসিক বন্ধুত্বের ওপর ভিত্তি করে উভয় পক্ষে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির ফারাক ঘুচবে এবার।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, উচ্চপর্যায়ের এই সফরকে কেন্দ্র করে কী কী আলোচনা হবে, কোনো বিষয়ে সমঝোতা হবে, তা নিয়ে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা কাজ করছেন। এরই মধ্যে গত জুনে জেসিসি এবং গত বৃহস্পতিবার জেআরসি বৈঠক হয়েছে। পাশাপাশি জ্বালানি, স্বরাষ্ট্রসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় তাদের বৈঠক করে ফেলেছে। সব বৈঠকের একটি প্রতিফলন এই সফরে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। শেখ হাসিনার সফরের আগে একটি দল এখন ভারত সফরে রয়েছে। এই সফরে প্রতিরক্ষা, বাণিজ্য, নিরাপত্তা, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, উন্নয়ন সহযোগিতা ও পানির মতো বিষয়গুলো অগ্রাধিকার পাবে বলে জানা গেছে।

সূচি অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ৫ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর ভারতে থাকবেন। জয়পুর ও আজমির শরিফ যাওয়ার আগে তিনি ৫ সেপ্টেম্বর দিল্লি পৌঁছাবেন এবং ৬ সেপ্টেম্বর তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য ভারতীয় নেতার সঙ্গেও আলোচনা করবেন তিনি। ৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী ঢাকায় ফিরবেন। সফরকালে শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি যৌথভাবে ভার্চুয়ালি বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্তে ‘স্বাধীনতা সড়ক’ উদ্বোধন করবেন বলে জানা গেছে।

প্রসঙ্গত, ওই সড়ক ধরে ১৯৭১ সালে পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করে মেহেরপুরের আ¤্রকাননে তাজউদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে দেশের প্রথম সরকার শপথ নিয়েছিল। সেই থেকে ওই জায়গাটির নাম হয় মুজিবনগর, যা পরে বাঙালির তীর্থক্ষেত্র হয়ে ওঠে। সম্প্রতি রাস্তাটির নামকরণ হয় ‘স্বাধীনতা সড়ক’। ওই সড়ককে কেন্দ্র করে মুজিবনগর স্থলবন্দরসহ একটি দর্শনীয় এলাকা গড়ে তুলতে চায় সরকার।

জানতে চাইলে মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ মুনসুর আলম খান গতকাল ভোরের কাগজকে বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সর্বশেষ ঢাকা সফরের সময় ওই সড়কটি উদ্বোধনের জন্য নীতিগতভাবে সম্মত হয় বাংলাদেশ-ভারত। সম্প্রতি দুই প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে সড়কটি উদ্বোধনের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী মো. ফরহাদুল ইসলামের মাধ্যমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় দুই প্রধানমন্ত্রী এই সড়কের ভার্চুয়াল উদ্বোধনের কথা সরকারিভাবে এখনো জানতে পারেননি উল্লেখ করে তিনি বলেন, দুই প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে উদ্বোধন হলে মুজিবনগর এলাকাটি নতুন করে আলোচনায় আসবে।

ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরে এক ডজনের ওপর চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক সম্পাদন করা নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে এর মধ্যে কোনটি সই হবে, সেটি নিশ্চিতভাবে জানার জন্য আরো কয়েক দিন অপেক্ষা করতে হবে। ৬ সেপ্টেম্বর দুই প্রধানমন্ত্রী দ্বিপক্ষীয় আলোচনার জন্য মিলিত হলে বাণিজ্য, সংযোগ এবং প্রতিরক্ষা সম্পর্ক আলোচনায় প্রাধান্য পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়াও সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, নদীর পানি ভাগাভাগি এবং উন্নয়ন সহযোগিতাও আলোচনার অংশ হবে।

জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) মাশফি বিনতে সামস বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর নিয়ে যতগুলো প্রস্তুতিমূলক বৈঠক করা দরকার, তার সবগুলোই করা হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে আমাদের তরফ থেকে সফরকে ফলপ্রসূ করার জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নতুন গতি পায় ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর। প্রায় সব ক্ষেত্রে দুই দেশ নিজেদের মধ্যে সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে। দুই দেশের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে বোঝাপড়া অত্যন্ত ভালো। তবে স¤প্রতি চীনের প্রতি বাংলাদেশের মনোযোগ বাড়ছে- এ ধরনের একটি আলোচনা ভারতের সরকারের বাইরে বিভিন্ন মহলে আলোচিত হচ্ছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান অত্যন্ত পরিষ্কার এবং সেটি হচ্ছে অন্য দেশের প্ররোচনায় প্রতিবেশীর ক্ষতি হয়, এমন কোনো কাজ করবে না ঢাকা। এবারের সফরে হয়তো সেই বার্তাটি পুনর্ব্যক্ত করতে পারে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের রফতানি ভারতে অনেক গুণ বেড়ে বর্তমানে প্রায় ২০০ কোটি ডলার হয়েছে। একই সঙ্গে ভারত থেকে আমদানি বাড়লেও পণ্যগুলোর বেশির ভাগ শিল্পের কাঁচামাল অথবা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। এছাড়া ভারত থেকে বিনিয়োগও আসছে বাংলাদেশে, যা অত্যন্ত ইতিবাচকভাবে দেখা হচ্ছে।

কর্মকর্তারা বলেছেন, ভারত ও বাংলাদেশ ইতিহাস, ভাষা, সংস্কৃতি এবং অন্যান্য অনেক মিলের বন্ধন ভাগ করে নেয়। ‘উৎকৃষ্ট দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক’ দেশ দুটির মধ্যে সার্বভৌমত্ব, সমতা, আস্থা ও বোঝাপড়ার ওপর ভিত্তি করে চলে। ভারতও তার ‘প্রথম প্রতিবেশী’ নীতির আলোকে বাংলাদেশকে খালি হাতে ফেরাবে না বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App