×

সম্পাদকীয়

প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন : চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির সঙ্গে জীবনমানও উন্নত হোক

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৯ আগস্ট ২০২২, ০১:০১ এএম

প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন : চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির সঙ্গে জীবনমানও উন্নত হোক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে চা শিল্প মালিকদের বৈঠকে দৈনিক মজুরি ১৭০ টাকা নির্ধারণের পর চা শ্রমিকরা কাজে যোগ দিয়েছেন। এতে দীর্ঘদিন পর প্রাণ ফিরেছে চা বাগানগুলোতে। এর আগে ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে ১৯ দিন ধরে আন্দোলন করে আসছিলেন চা বাগানের শ্রমিকরা। গত শনিবার চা বাগান মালিকদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বৈঠক করে শ্রমিকদের মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৭০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এজন্য প্রধানমন্ত্রী অভিনন্দন প্রাপ্য। ব্রিটিশ উপনিবেশ, পাকিস্তান আমল ও স্বাধীনতার ৫০ বছর পর আজো চা শ্রমিকরা নিম্ন মজুরি আর মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাদের জীবন আজো দাসত্বের শৃঙ্খলে বন্দি। এ থেকে মুক্তির পথ খুঁজছেন তারা। চা শ্রমিকরা দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে ধর্মঘট করেছেন। এ আন্দোলনের প্রতি আমাদেরও সংহতি ছিল। জানা গেছে, চা শ্রমিকরা সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত কাজ করে ১২০ টাকা মজুরি পান। বর্তমান বাজারে এ টাকায় সংসার চালানো কঠিন। শ্রমিকরা ৩০০ টাকা মজুরি দাবি করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। মালিকপক্ষ তাতে সাড়া দেয়নি। অবশেষে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে ১৭০ টাকা মজুরি নির্ধারণ হয়। এতে শ্রমিকরা মেনে নিয়ে কাজে যোগদান করেছেন। চা শিল্প বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বিশ্বের বড় ১০টি চা বাগান আছে আমাদের দেশে। চা উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে নবম। প্রথম ও দ্বিতীয় অবস্থানে আছে চীন এবং ভারত। বাংলাদেশে নিবন্ধিত চা বাগান ও টি-স্টেট রয়েছে ১৬৭টি, এর মধ্যে সিলেট বিভাগে রয়েছে ১২৯টি। সুদীর্ঘ ১৮০ বছর ধরে দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে চা শিল্প গভীরভাবে জড়িয়ে আছে। দেশের সাধারণ মানুষের সামাজিকতা, সংস্কৃতি ও দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে চা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। দেশে চায়ের চাহিদা বাড়ায় বেড়েছে উৎপাদনও। ২০২১ সালে দেশে মোট চা উৎপাদন হয়েছে ৯ কোটি ৬৫ লাখ কেজি। চায়ের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে চায়ের চাহিদা প্রায় ১০ কোটি কেজি। দুই দশক আগেও বাংলাদেশ থেকে কম-বেশি ১ কোটি ৩০ লাখ কেজি চা রপ্তানি হতো। আর এখন সেখানে খুবই সীমিত আকারে ৬-২০ লাখ কেজি রপ্তানি করা হয়। ২০২৫ সাল নাগাদ সরকার চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ১৪ কোটি কেজি। এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সরকার ইতোমধ্যে নানারকম পদক্ষেপ গ্রহণ করে তা বাস্তবায়ন শুরু করেছে। তবে শ্রমিকদের মজুরি বৈষম্যের বিষয় বারবার সামনে আসছে। মজুরি বৈষম্যসহ বিভিন্ন ধরনের বঞ্চনার কারণে চা জনগোষ্ঠীর মানুষ অন্য নাগরিকদের চেয়ে অনেক পেছনে পড়ে আছে। তাদের গড় পারিবারিক আয় বাংলাদেশের জাতীয় বা গ্রামীণ দারিদ্র্যসীমা ও পারিবারিক আয়ের চেয়ে অনেক কম। চা শ্রমিকের আবাসন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা- এসবই যেন দুর্ভাগ্যের আয়না। তাদের বসবাসের ব্যবস্থা করার দায়িত্ব বাগান মালিকের। চা শ্রমিকদের প্রতি সুবিচার করতে হলে প্রথমেই শ্রম আইন ও শ্রম বিধিমালা তাকে যেসব অধিকার দেয়, সেসব নিশ্চিত করতে হবে। এরপর সামাজিক নিরাপত্তার জন্য রাষ্ট্র তাদের জন্য যে বরাদ্দ রেখেছে, তা আরো বাড়াতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App