×

জাতীয়

নীতিগত দুর্বলতা তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ায় প্রতিবন্ধকতা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ আগস্ট ২০২২, ০৩:১৭ পিএম

নীতিগত দুর্বলতা তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ায় প্রতিবন্ধকতা

একদিকে প্রধানমন্ত্রী ধুমপানমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দিয়েছেন, অন্যদিকে সরকারের একাধিক সচিব একটি সিগারেট কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে রয়েছেন। আবার জাতীয় বাজেটে তামাক কোম্পানিগুলোকে সুবিধা দেয়া হচ্ছে। এমন দুর্বল নীতির কারণে বাংলাদেশে তামাক ব্যবহারকারীর সংখ্যা কমার বদলে উল্টো আরও বেড়েছে বলে অভিমত দিয়েছেন ‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গঠনে করণীয়’ শীর্ষক এক আলোচনা সভার বক্তারা।

আহছানিয়া মিশনের আয়োজনে রবিবার (২৮ আগস্ট) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন ঢাকা আহছানিয়া মিশনের নির্বাহী পরিচালক সাজেদুল কাইয়ুম।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী তামাকমুক্ত বাংলাদেশর ঘোষণা দিয়েছেন। আমি শতভাগ সততার সঙ্গে এ লক্ষ্যে কাজ করবো। শুধু তামাক না বিভিন্ন রকমের মাদক আমাদের ক্ষতি করছে। এই তামাকের বাংলাদেশ তো আমরা চাইনি।

তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার বিষয়ে তিনি আরও বলেন, মানুষকে সচেতন করতে পারলে অর্ধেক লড়াইটা আমরা জিতে যাবো। আমিও ৫০ বছর সিগারিট খেয়েছি। গত ৩ বছর ছেড়ে দিয়েছি। এখন মনে হয় আমি কতো মানুষের ক্ষতি করেছি। দূষিত হাওয়া বাতাসে ছেড়েছি। আমি যা করেছি, তার জন্য অনুশোচনা আমার আছে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার স্পিকার বা জনপ্রতিনিধিদের সামনে ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন তামাকমুক্ত দেশ গড়তে হবে। শতভাগ তামাকমুক্ত করা সম্ভব নয়, তবে ৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে পারলে আমরা বলতে পারব তামকামুক্ত বাংলাদেশ।

তিনি আরও বলেন, পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে ২০০৯ সালে তামাকসেবী ছিল ৪৩ শতাংশ। ২০১৭ সালে হয়েছে ৩৫ শতাংশ। তামাকসেবীর হার কমলেও বাস্তবে বেড়েছে। কারণ এখন জনসংখ্যা বেড়েছে। আগে ৩ কোটি মানুষ তামাকসেবী ছিলো। এখন সেই সংখ্যা ৪ কোটির বেশি। এভাবে চলতে থাকলে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়ন কখনো সম্ভব নয়। কারণ এটা একটা মহামারি। তামাকে এক বছরে ৩ লাখ ২০ হাজারের বেশি মারা গেছে। এ হিসাব বর্তমানে আরো বাড়তে পারে। যা করোনার দুই বছরে মৃত্যুর চেয়েও ভয়াবহ।

সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, একদিকে প্রধানমন্ত্রীর তামাকমুক্ত বাংলাদেশের ঘোষণা, অন্যদিকে বাজেটে তামাক কোম্পানিগুলোকে বিশেষ সুবিধা দেয়া হয়। অর্থ মন্ত্রণালয় তামাকের দাম বাড়িয়ে দিয়ে সেই বাড়তি দামের ওপরে কর আরোপ করছে। পৃথিবীর কোন জায়গায় এমন নেই।

এই সংসদ সদস্য বলেন, ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো কোম্পানিতে সরকারের শেয়ার আছে দশমিক ৬৪ শতাংশ। অর্থাৎ এক শতাংশের কম। অথচ এই কোম্পানির ৪০ শতাংশ পরিচালক সরকারের সচিব। এই দ্বৈত নীতি থেকে সরে আসতে না পারলে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়া সম্ভব না।

অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত বলেন, আমি যে নিকোটিন নেই সেখান থেকে যে ধোয়া বের হয় তা আমার স্ত্রী-সন্তান গ্রহণ করলে সমান ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাই তামাক নিয়ন্ত্রণে শুধু আইন করে লাভ হবে না। মানুষকে সচেতন করতে হবে। তিনি বলেন, বিভিন্ন ধরনের মাদক বাহির হয়েছে। এখন কম্পিউটারের চিপের মতোও মাদক আছে। ছোট বাচ্চারা বাজারে গিয়ে এটা কিনে আনেন। বাবা-মা প্রশ্ন করলে বলে কম্পিউটারের চিপ। আসলে এটা নিকোটিন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App