×

মুক্তচিন্তা

আমারে দেবো না ভুলিতে

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৮ আগস্ট ২০২২, ০১:২২ এএম

আমারে দেবো না ভুলিতে
মৃত্যুর ৩৫ বছর আগে ১৯৪২ সালে জুলাইয়ের এক সন্ধ্যায় খেলা শেষ হওয়ার আগেই তার বেলা শেষ হয়ে গিয়েছিল। কবি কাজী নজরুল ইসলাম অসুস্থ হওয়ার আগে শ্যামবাজার স্ট্রিটের ১৫/৪ নম্বর বাড়িতে থাকতেন। ১৯৪২ সালের ৯ জুলাই অল ইন্ডিয়া রেডিওর কলকাতা স্টেশনে ছোটদের জন্য এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠান শুরু হলে যথারীতি নজরুল আবৃত্তি করতে শুরু করলেন। হঠাৎ তার জিহ্বা আড়ষ্ট হয়ে গেল। প্রোগ্রামার নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায় দৌড়ে এলেন। রেডিওতে ঘোষণা দেয়া হলো কবি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। প্রোগ্রামটি আরেকদিন আয়োজন করা হবে। সে রাতে নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায় ট্যাক্সিতে করে কবিকে বাড়ি পৌঁছে দেন। এক সপ্তাহের মধ্যেই রোগের প্রকোপ শরীর ছাড়িয়ে মস্তিকে ছড়িয়ে পড়ল। কবির আচার-আচরণে অসঙ্গতি প্রকট হয়ে উঠল। কথার মাঝে অসংলগ্নতা দেখা দিল ব্যাপকভাবে। নজরুলের বাসার মালিক ছিলেন একজন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক, নাম ডাক্তার ডি এল সরকার। ডি এল সরকার নিজ উদ্যোগে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করেন। কিন্তু তার চিকিৎসায় কিছু সাময়িক নিরাময় হলেও হাতের কম্পন ও জিহ্বার আড়ষ্টতা কোনোভাবেই কমেনি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যক্তিগত চিকিসৎক কবিরাজ বিমলানন্দ তর্কতীর্থ নজরুলের অসুস্থতার খবর জানতে পেরে আয়ুর্বেদীয় চিকিৎসা করেন। আয়ুর্বেদীয় চিকিৎসায়ও কোনো ফল এলো না। উপরন্তু ক্রোধের মাত্রা বৃদ্ধি ও জিহ্বার আড়ষ্টতা বৃদ্ধি বেড়েই চলছিল। এর সঙ্গে যুক্ত হয় মস্তিষ্কবিকার। চুরুলিয়া থেকে খবর পেয়ে নজরুলের জ্যেষ্ঠ ও কনিষ্ঠ ভ্রাতা কাজী সাহেবজান ও কাজী আলী হোসেন দেখতে আসেন। কিন্তু সুসময়ে যারা তাকে চেটেপুটে খেয়েছেন, তার মেধাকে পুঁজি করে ক্ষমতা ও সম্পদের প্রাসাদ গড়েছেন তার দুঃসময়ে সেই সুবিধাবাদীদের কেউই এগিয়ে আসেননি। ১৯৪২ সালের ৯ জুলাই হতে ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট পর্যন্ত নজরুল বেঁচে ছিলেন শিশুর মতো। দীর্ঘ ৩৪ বছর ১২০ দিন পর ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট রবিবার, সকাল ১০টা ১০ মিনিটে বাংলা সাহিত্যের চির বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ইহলীলা সমাপ্ত করেন। বেতার ও টেলিভিশনে নজরুলের মৃত্যু সংবাদ প্রচার হয়। গভীর শোকে মুহ্যমান হয়ে মানষ ছুটে আসে পিজি হাসপাতালে। কবির মরদেহ রাখা হয় পিজি হাসপাতালের কনফারেন্স রুমে। ১১টার দিকে তার মরদেহ কেবিন থেকে বের করে আউটডোরে দোতলায় মঞ্চে আনা হয়। জনস্রোত সামাল দিতে না পেরে পরবর্তীতে তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি)। পিজি হাসপাতালের সভা কক্ষে নজরুলের কবরের স্থান নির্ধারণের জন্য এক জরুরি সভা বসে। অনেক আলোচনার পর অবশেষে বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদ প্রাঙ্গণকেই নির্বাচিত করা হয়। দুপুর ২টার সময় কবির মরদেহ টিএসসিতে আনা হয়। হাজার হাজার মানুষ ফুলে ফুলে শেষ শ্রদ্ধা জানায় তাদের প্রিয় কবিকে। বিকাল সাড়ে ৪টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় নজরুলকে দাফন করা হয়। বিদ্রোহী নজরুল জীবনে কারোর কাছে মাথা নত করেননি। জীবনের সব ধ্যান ও জ্ঞান দিয়ে যৌবনের বন্দনা করে গেছেন। নিপীড়িত, প্রবঞ্চিত ও পরাধীন মানুষের প্রতিনিধি হয়ে শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে পরিচালিত সংগ্রামে জীবন উৎসর্গ করে গেছেন। নজরুল বেঁচে থাকবেন শোষিত ও লাঞ্ছিত জনগণের মুক্তির সংগ্রামে অদম্য মনোবল, প্রেরণা ও শক্তি হয়ে। দেবব্রত নীল লেখক ও নজরুল গবেষক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App