×

জাতীয়

চা শ্রমিকদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও কনফারেন্স ২ সেপ্টেম্বর

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০২২, ১০:৫৪ পিএম

বাগান মালিকদের সঙ্গে প্রায় ৩ ঘন্টা আলোচনার পর চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১৭০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার চা বাগান মালিকদের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি এ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। আগামী ২ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চা শ্রমিকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করবেন বলে জানা গেছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে চা শ্রমিক ইউনিয়ন শ্রীমঙ্গলে আনন্দ মিছিল করে রবিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়া স্বত্ত্বেও কাজে ফেরার ঘোষণা দিয়েছে। আর নবগঠিত চা অধিকার পরিষদ কবে নাগাদ কাজে ফিরবে তা গতকাল রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত জানায়নি।

পূর্বঘোষণা অনুযায়ী এদিন বিকেল ৪টার পরপরই গণভবনে এ বৈঠক শুরু হয়ে শেষ হয় সন্ধ্যা ৭টায়। ১৩ জন বাগানমালিক এ বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব আহমেদ কায়কাউস এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, শ্রমিকদের আবাসন, রেশনসহ অন্যান্য যেসব সুযোগসুবিধা দেয়া হয়, তার সঙ্গে এই দৈনিক মজুরি মিলিয়ে তাদের প্রতিদিনের আয় ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা হবে। এর সঙ্গে আনুপাতিকহারে শ্রমিকদের বোনাস, বার্ষিক ছুটি ভাতা, বেতনসব উৎসব ভাতা, অসুস্থতাজনিত ভাতা ইত্যাদিও বাড়বে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, আজ থেকে শ্রমিকদের সবাইকে কাজে যোগ দেয়ার জন্য বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে শ্রমিকরা ১২০ টাকা দৈনিক মজুরি পেতেন। ফলে তাদের দৈনিক মজুরি বাড়ল ৫০ টাকা।

বৈঠকের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ব্রিটিশরা ওদেরকে নিয়ে আসছিল। দাসত্বগিরি করতে হত শ্রমিকদের। এদের নাগরিকত্বও ছিল না। বঙ্গবন্ধু যখন চা বোর্ডের চেয়ারম্যান হলেন তখন শ্রমিকদের নাগরকিত্ব দেয়া হল। সুযোগ-সুবিধা পেতে শুরু করল তারা। চা শ্রমিকরা বঙ্গবন্ধুর এসব অবদান মনে করে। চা আমাদের বড় একটা অর্থকড়ি ফসল। এজন্য আমরা চায়ের উৎপাদনও বাড়িয়েছি। কাজেই তাদের ভালোমন্দ দেখা সবারই দায়িত্ব। বাগানমালিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, খেটেখাওয়া এসব মানুষদেরকে তো দেখতে হবে।

বাংলাদেশ চা সংসদের (বাগান মালিকদের সংগঠন) ১৩ সদস্যের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকটি প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে বৈঠক চলে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাগান মালিকদের কাছে শ্রমিকদের মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২শ টাকা করতে চেয়েছিলেন। অপরদিকে বাগানমালিকরা আগেই ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৪৫ টাকা করেছিলেন। শ্রমিকরা তা না মেনে ধর্মঘট চালিয়ে যান। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে আরো ৫ টাকা বাড়িয়ে শ্রমিকদের মজুরি ১৫০ টাকা করার প্রস্তাব দেন বাগান মালিকরা। এই নিয়ে দীর্ঘ আলোচনার পর সাব্যস্ত হয় ১৭০ টাকা এবং প্রধানমন্ত্রী সেটিই মেনে নিয়ে নির্দেশনা দেন।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ চা সংসদের সিনিয়র সদস্য তাহসিন আহমেদ চৌধুরী বৈঠক শেষে ভোরের কাগজকে বলেন, এখন পুরো বিষয়টি সরকারের টেবিলে রয়েছে। কাজেই শ্রমিকদের মজুরি নিয়ে কে কত টাকা প্রস্তাব দিয়েছিলেন সে নিয়ে আলোচনার আর দরকার নেই। নতুন মজুরি নিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে বাগান মালিকদের চুক্তি কবে হবে-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। আগামী ২ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্রমিকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করবেন।

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের অর্থ সম্পাদক পরেশ কালিন্দি ভোরের কাগজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শ্রমিকদের জন্য মজুরি ২শ টাকা করতে চেয়েছিলেন বলে আমরা শুনেছি। কিন্তু বাগান মালিকরা তা হতে দেননি। তবু আমরা যা পেয়েছি তা প্রধানমন্ত্রীর জন্যই পেয়েছি। আজ রবিবার আমরা প্রধানমন্ত্রীকে আনুষ্ঠানিক ধন্যবাদ জানিয়ে কাজে ফিরব।

এরআগে গত ৯ আগষ্ট থেকে দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার দাবিতে আন্দোলন শুরু করে চা বাগানগুলোর প্রায় দেড় লাখ শ্রমিক। সে সময় প্রতিদিন দু’ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করলেও, ১৩ই আগস্ট থেকে তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট শুরু করেন। এর আগে ১৪৫ টাকা মজুরিতে শ্রমিকদের একটি অংশ ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলেও বেশিরভাগ শ্রমিক তাতে রাজি হননি।

পরবর্তীতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মজুরি সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে শ্রমিকদের একটি অংশ পুরনো ১২০ টাকা মজুরিতেই আপাতত কাজে ফিরেছেন। আরেকটি অংশ ধর্মঘট অব্যাহত রেখেছেন। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মজুরির বিষয়টি নির্ধারিত হবে বলে জানানো হয়। এরকম পরিস্থিতিতে চা শ্রমিকদের ইস্যুতে শনিবার বাগান মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শ্রমিকরা জানিয়েছেন, সর্বশেষ ২০২০ সালে যখন চা শ্রমিক ইউনিয়ন এবং বাগান মালিকদের সংগঠন চা সংসদ মজুরি নিয়ে চুক্তি করেছিল, সেসময় মজুরি বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল। সে প্রতিশ্রুতি ১৯ মাসেও বাস্তবায়ন হয়নি। তবে মালিকদের সংগঠন বলছে, ৩০০ টাকার প্রতিশ্রুতি কখনো দেয়া হয়নি। তাদের কথা, শ্রমিকদের যেসব সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়, তা তিনশো টাকার চেয়ে বেশি।

এদিকে, আন্দোলনের প্রেক্ষিতে নবগঠিত চা অধিকার পরিষদের নেতারা ১৭০ টাকা মজুরি বাড়ানোর সিদ্ধান্তের বিষয়ে এখনো কিছু বলছেন না। তবে এই সিদ্ধান্ত যে মনঃপুত হয়নি তা তাদের ফেসবুকের টাইমলাইনে লিখে বুঝিয়ে দিচ্ছেন। নতুন সিদ্ধান্তের ফলে চা শ্রমিক ইউনিয়ন রবিবার থেকে কাজে ফেরার ঘোষণা দিলেও চা অধিকার পরিষদ কাজে কবে থেকে ফিরবে তা শনিবার রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত জানায়নি। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা বলেন, আমরা আগেই বলেছিলাম প্রধানমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত দেবেন, আমরা তা মেনে নেব। যেহেতু প্রধানমন্ত্রী মালিকদের সঙ্গে বসে মজুরি ১৭০ টাকা নির্ধারণ করেছেন, তাই আমরা আগামীকাল (রবিবার) থেকেই কাজে যোগদান করব। এদিকে নতুন মজুরি নির্ধারণ হওয়ার খবরে তাৎক্ষণিক আনন্দ মিছিল করেন আন্দোলনরত চা-শ্রমিকরা। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল চৌমোহনা চত্বরে হাজারো চা-শ্রমিকদের উল্লাস করতে দেখা যায়। চা-শ্রমিকরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে আনন্দ মিছিল করেন এবং একে অপরকে মিষ্টি খাওয়ান। তাদের দাবিকৃত মজুরির একটি সুন্দর সমাধান হওয়ায় এখন কাজে ফিরবেন বলে তারা জানান। চা-শ্রমিক দুলাল হাজরা বলেন, প্রধানমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, আমরা তাই মেনে নেব। আমরা এখন বাগানের জন্য কাজ করব। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন আমাদের সঙ্গে কথা বলবেন, আমারা আশা করি তিনি আমাদের বাকি দাবিগুলোও মেনে নেবেন। চা-শ্রমিক সিলা ভূইয়া বলেন, আমারা দীর্ঘদিন ধরে খেয়ে না খেয়ে আন্দোলন করেছি। এখন প্রধানমন্ত্রী আমাদের মজুরি ১৭০ টাকা দিয়েছেন। আমরা খুশি। কাল থেকে আমরা কাজে নামব।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App