×

জাতীয়

গান কবিতায় চিরবিদ্রোহীকে স্মরণ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০২২, ০৯:৩৪ পিএম

গান কবিতায় চিরবিদ্রোহীকে স্মরণ

গান কবিতায় চিরবিদ্রোহীকে স্মরণ

‘আমি চিরতরে দূরে চলে যাব, তবু আমারে দেব না ভুলিতে।’ না, ভুলতে দেননি তিনি। প্রেমে আর বিদ্রোহে, গানে আর কবিতায় বাঙালি সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে আছেন তিনি। বাঙালির চেতনায় মিশে আছেন অসাম্প্রদায়িক, হিন্দু-মুসলিমের মিলনকামী যুগমানব হিসেবে। এ এক মহাজীবনের কাহিনি। কখনও তার কলমে আগুনঝরা কবিতা, কখনও খাঁকি উর্দি গায়ে সাহসী সেনানী। কোনও সময়ে তিনিই আবার পেলব প্রেমিক, তিনিই আবার দৃপ্ত লেখনীতে সাম্যের গান গাইছেন। এত বিচিত্র কর্মকাণ্ডে ভরা একটিই মানুষের জীবন ভ্রমণ। তাকে নিয়ে বাঙালির গর্বের অন্ত নেই। ‘জাতের নামে বজ্জাতি’র সমূল উৎপাটনে, ‘দুস্তর পারাবার’ পাড়ি দেবার দুর্বার শপথে নিয়ত পথ দেখান কবিতা গানের মধ্য দিয়ে।

এই চিরবিদ্রোহীকে ৪৬তম প্রয়াণ দিবসে সমাধিতে ফুলেল শ্রদ্ধা ও তার লেখা কথামালায়, গান, আবৃত্তি, নাটকসহ নানা আয়োজনে স্মরণ করলো বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। যেখানে বারবারই ধ্বণিত হয়েছে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের উচ্চারণ।

ছায়ানট

‘বলেছিলে ভুলিবে না মোরে’ গাইলেন এক সংগীতশিল্পী। কাজী নজরুল ইসলামের মৃত্যুবার্ষিকীতে কবির লেখা এ গান তাকে স্মরণ করতেই। জাতীয় কবিকে ভোলার বেলা কখনোই আসবে না। ৪৬তম মৃত্যুবার্ষিকীর সন্ধ্যায় নজরুলের হারামণি’র গান গেয়ে সে কথাই জানালেন ছায়ানটের শিল্পীরা।

ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন মিলনায়তনে ছিল নজরুলপ্রয়াণ দিবসের আয়োজন। অনুষ্ঠান শুরু হয় ভক্তিমূলক গান দিয়ে। একক কণ্ঠে ‘অরুণকান্তি কে গো যোগী ভিখারি’ গানটি গেয়ে কবিকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এরপর একক কণ্ঠে নজরুলসংগীত পরিবেশন করেন নাসিমা শাহীন ফ্যান্সী, রেজাউল করিম, ধ্রুব সরকার, কল্পনা আনাম, কানিজ হুসনা আহ্ম্মাদী সিম্পী, সুমন মজুমদার, ঐশ্বর্য সমদ্দার, সুস্মিতা দেবনাথ শুচি, মনীষ সরকার, নাহিয়ান দুরদানা, মাকসুদুর রহমান মোহিত খান, মিরাজুল জান্নাত সোনিয়া, মাহমুদুল হাসান প্রমুখ। তারা গেয়ে শোনান একক গান ‘মদালস ময়ূর-বীণা কার বাজে’ ‘জাগো বিরাট ভৈরব যোগ সমাধি মগ্ন’ ‘আঁধার ভীত এ চিত যাচে’, ‘সন্ধ্যামালতী যবে ফুল বনে ঝুরে’ ‘নিশি রাতে রিম্ ঝিম্ ঝিম্ বাদল নূপুর’, ‘আমি পথ-মঞ্জরি ফুটেছি আঁধার রাতে’, ‘বুলবুলি নীরব নার্গিস-বনে’, ‘বল্ রাঙা হংসদূতী তার বারতা’, ‘বসন্ত এলো এলো এলো রে’, ‘নীলাম্বরী শাড়ি পরি' নীল যমুনায় কে যায়’, ‘বসন্ত মুখর আজি দক্ষিণ সমীরণে’, ‘ছেড়ে দাও মোরে আর হাত ধরিও না’, ‘বলেছিলে ভুলিবে না মোরে’ গানগুলি। ‘বসন্ত এলো, এলো এলো রে’ শীর্ষক সম্মেলক নৃত্যগীত পরিবেশন করে ছায়ানট শিল্পীরা। ‘জয় আনন্দ-ভৈরব’ একক নৃত্যগীত পরিবেশন করেন সুদেষ্ণা স্বয়ম্প্রভা তাথৈ।

ছায়ানট সঙ্গীত বিদ্যায়তনের প্রয়াত শিক্ষাগুরু সোহরাব হোসেনকে উৎসর্গীত অনুষ্ঠানে শুরুতে কথন পর্বে অংশ নেন ছায়ানটের নির্বাহী সভাপতি ডা. সারওয়ার আলী। শিক্ষাগুরু সোহরাব হোসেনের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়ে দৃশ্য-শ্রাব্য উপস্থাপন করা হয়।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৬তম প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধা জানিয়েছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। সংস্কৃতি সচিব মোঃ আবুল মনসুরের নেতৃত্বে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ সকালে কবির সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত সংস্কৃতি সচিব মনিরুল আলম ও অসীম কুমার দে, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান, প্রত্মতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রতন চন্দ্র পণ্ডিত, কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ জাকীর হোসেন, রেজিস্ট্রার অফ কপিরাইটস মো: দাউদ মিয়া, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক কবি মিনার মনসুর, কবি নজরুল ইনস্টিটিউট ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি খায়রুল আনাম শাকিলসহ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন দপ্তর-সংস্থার প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে এ শ্রদ্ধা জানানো হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল, প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিজামুল হক ভুইয়া প্রমুখ।

জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের গান কবিতা মানুষকে সব সময় অনুপ্রেরণা দেবে এমন মন্তব্য করে অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানের বলেন, তিনি সাম্যের কবি, অসাম্প্রদায়িক ও মানবতার কবি। বঙ্গবন্ধু ও কবি নজরুলের মধ্যে একটি অসাধারণ সখ্যতা ছিল। বঙ্গবন্ধুই মূলত কবি নজরুলকে দরিদ্রপীড়িত জীবনাচার থেকে উদ্ধার করে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। দুজনই মানবতাবাদী, অসাম্প্রদায়িক ও উদার জীবন দর্শন। অনেক বিশাল কবির সাহিত্য সম্ভার। তার সাহিত্য সম্ভারে নানাবিধ মূলবোধ ও নানা ধরনের ভাবদর্শন।

তিনি বলেন, কবির মধ্যে অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলার স্পৃহা ছিল। তার মধ্য আছে ধর্মীয় মূল্যবোধ প্রতিপালনের ইঙ্গিত। বিশ্বের যেকোনো পরিস্থিতিতে তার ভাবদর্শন মানুষ অনুসরণ করবে। এর মধ্য দিয়েই কবি অমর হয়ে থাকবেন। নজরুল ইনস্টিটিউট

কবির সমাধিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক আয়োজনের মধ্য দিয়ে জাতীয় কবিকে স্মরণ করল কবি নজরুল ইনস্টিটিউট। বিকাল সাড়ে ৫টায় ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে প্রতিষ্ঠানটি এ আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি সচিব মো. আবুল মনসুর। কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ জাকির হোসেনের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কবি নজরুল ইন্সটিটিউট ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান খায়রুল আনাম শাকিল। আলোচক ছিলেন কবি নজরুল ইন্সটিটিউট ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক আকতার কামাল।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App