×

জাতীয়

গণভবনের দিকে তাকিয়ে চা শ্রমিকরা, বিকেলে বৈঠক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০২২, ০৮:১৯ এএম

গণভবনের দিকে তাকিয়ে চা শ্রমিকরা, বিকেলে বৈঠক

ছবি: ভোরের কাগজ

মজুরি বাড়ানোর দাবিতে টানা ১৮দিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন দেশের ২৪১টি চা বাগানের শ্রমিকরা। এরই মধ্যে ঘোষণা আসে আজ শনিবার গণভবনে চা শ্রমিকদের মজুরির বিষয় নিয়ে বাংলাদেশীয় চা সংসদের সঙ্গে বসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর এ সংবাদ শোনার পর মৌলভীবাজারের ৯২টি চা বাগানে গতকাল শুক্রবার কোনো আন্দোলন করেননি চা শ্রমিকরা। তবে কর্মবিরতি অব্যাহত রয়েছে।

এখন চা শ্রমিকদের দৃষ্টি গণভবনের দিকে। তাদের ধারণা মালিক পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে প্রধানমন্ত্রী তাদের একটা সুফল এনে দিবেন।

এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল কালিঘাট চা বাগানের ৩নং ওয়ার্ডের সদস্য অনিল তন্তবাই বলেন, আমরা এখন প্রধানমন্ত্রীর দিকেই তাকিয়ে আছি। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের দুঃখ-দুর্দশার কথা জানেন। আমরা ২০০ বছর ধরে যে জায়গায় বসবাস করছি সে জায়গার ভূমি অধিকার আজো পাইনি। সব বাগানে এখনো স্কুল হয়নি।

শ্রীমঙ্গল আমরইল চা বাগানের শ্রমিক জনিস বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের শেষ ভরসার স্থল। প্রধানমন্ত্রীর দিকেই এখন আমরা তাকিয়ে আছি। তিনি বলেন, তাদের বিশ্বাস শনিবারের মিটিংয়ে প্রধানমন্ত্রী তাদের নিরাশ করবেন না।

শ্রীমঙ্গল কালাপুর ইউনিয়নের ফুলছড়ি চা বাগানের বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি লক্ষণ বাউরি বলেন, আমরা আন্দোলন করছি আমাদের পেটের দায়ে। আমাদের যে মজুরি দেয়া হয় তা থেকে কারেন্ট বিল, রেশন, ভবিষ্যৎ তহবিল ও চা শ্রমিক ইউনিয়নের চাঁদা সব কিছু কেটে নগদ মজুরি দাঁড়ায় ১০০ টাকারও কম। কিছু শ্রমিক আছেন যারা ভরা মৌসুমে পাতা একটু বেশি তুলতে পারেন। অভার টাইম হিসেবে তারা ১০০ টাকার চেয়ে আরো কিছু বেশি পান। কিন্তু নগদ টাকা এটাই। এই টাকা দিয়েই দৈনন্দিন সব চাহিদা পূরণ করতে হয়। ছেলেমেয়ের লেখাপড়া, কাপড়-চোপড়, মাছ সবজি, তেল লবণ, ডাল সবই। এটা কি করে সম্ভব? তাই চা শ্রমিকদের প্রতিদিনই ‘তেল আনতে নুন ফুরায়’। টানাপড়েনেই চলে সংসার।

তিনি বলেন, ২ টাকা কেজিতে আটা দেয়া হয় যা সকালে চা রুটিতেই চলে যায়। দুপুরে ও বিকালে ভাত রান্না করলে ৪-৫ জনের একটি পরিবারে দুই কেজি চাল লাগে। চালের দামেই দৈনিক মজুরি চলে যায়। বাদবাকি কিভাবে সামাল দেয় চা শ্রমিকরা সে খবর কেউ রাখে না। তিনি বলেন, আমি আশাবাদী আমাদের নেত্রী বাস্তবতার নিরিখে আমাদের মজুরিসহ অনান্য সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে দিবেন।

এ ব্যাপারে চা শ্রমিক ছাত্র যুব অংশের নেতৃত্ব দেয়া মোহন রবিদাশ বলেন, আমাদের কর্মবিরতি অব্যাহত আছে। প্রধানমন্ত্রী যেহেতু শনিবার এ বিষয়ে বসবেন তাই শনিবার দেখে আমরা নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করব।

হবিগঞ্জের চা শ্রমিকরা ১৮তম দিনেও কাজে ফেরেন নি : হবিগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, জেলায় অবস্থিত সুলতানসী ভেলির ২৪টি চা বাগানের প্রায় অর্ধলক্ষাধিক আন্দোলনরত শ্রমিক ১৮দিন ধরে কর্মবিরতি পালন করছেন। এ ব্যাপারে বাগান মালিকদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে আজ শনিবার বিকাল ৪টায় এক সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব এম এম ইমরুল কায়েস বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

আন্দোলনরত শ্রমিকরা বিক্ষোভ আর মিছিল করছেন নিজ নিজ বাগানে। যাদের কথায় শ্রমিকরা আন্দোলনে নেমেছিল তাদের নিয়ন্ত্রণে নেই শ্রমিকরা। শ্রমিকদের মধ্যে বিভক্ত হয়ে গেছে। একপক্ষ চাচ্ছে আন্দোলন অব্যাহত থাক। আরেক পক্ষের শ্রমিকরা অনেকেই এখন পেটের দায়ে কাজে ফিরতে আগ্রহী। কারণ শ্রমিকদের হাতে এখন টাকা নেই। দু সপ্তাহেরও অধিক সময় ধরে আন্দোলনের কারণে শ্রমিকরা মজুরি পাচ্ছেন না। গত বৃহস্পতিবার নির্ধারিত মজুরির দিনে শ্রমিকরা ১৫ আগস্ট ছুটির দিন ও একদিন অর্জিত ছুটি নিয়ে মাত্র দুদিনের মজুরি ২৪০ টাকা করে পেয়েছেন। অনেকেই অনাহারে অর্ধাহারে রয়েছেন।

এদিকে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন দফায় দফায় আলোচনা করেও সফল হতে পারেননি। চা শ্রমিকরা ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে গত ৯ আগস্ট থেকে দৈনিক ২ ঘণ্টা করে ৪দিন কর্মবিরতি পালন করেন। এরপর গত ১৩ আগস্ট থেকে লাগাতার কর্মবিরতি, বিক্ষোভ, মিছিল ও মহাসড়ক অবরোধ করে আসছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App