×

সম্পাদকীয়

ওষুধের দাম বৃদ্ধি : রোগীর আর্থিক দুর্ভোগ দুঃখজনক

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০২২, ১২:২৯ এএম

ওষুধের দাম বৃদ্ধি : রোগীর আর্থিক দুর্ভোগ দুঃখজনক

নিত্যপণ্যের সঙ্গে সঙ্গে ওষুধের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। ৫৩টি ওষুধ বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে বাজারে। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর বিষয়টিকে মূল্য বৃদ্ধি বলতে নারাজ। তাদের দাবি, ওষুধে ব্যবহৃত কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি হওয়ায় এর সঙ্গে সমন্বয় করে ওষুধের দাম কিছুটা ‘আপডেট’ করা হয়েছে। উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, শুধু কাঁচামালের দামই বাড়েনি, প্যাকেজিং ম্যাটেরিয়াল, পরিবহন ও ডিস্ট্রিবিউশন ব্যয়, ডলারের বিনিময় মূল্য, মুদ্রাস্ফীতিসহ নানা কারণেই ওষুধ উৎপাদনের খরচ বেড়েছে। এসব কারণে ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছে। মাত্রাতিরিক্ত ওষুধের দাম বাড়াতে মানুষের দুশ্চিন্তা বেড়েছে। দাম বাড়াতে না দিলে উৎপাদন বন্ধের হুমকিও দিয়েছিল তারা। এখানে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর অসহায়। ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর এমন আচরণ সত্যিই দুঃখজনক। সর্বশেষ ২০১৫ সালে কয়েকটি ব্র্যান্ডের ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছিল। আর গত ৩০ জুন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত ওষুধের মূল্য নির্ধারণ কমিটির ৫৮তম সভায় অর্ধশতাধিক ওষুধের পুনর্নির্ধারিত দাম অনুমোদন করা হয়। অতিপ্রয়োজনীয় ওষুধের দাম নির্ধারণ করে দেয় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের করা প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ২০টি জেনেরিকের ৫৩ ব্র্যান্ডের ওষুধের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত দিয়েছে সরকার। এর মধ্যে বিভিন্ন মাত্রার প্যারাসিটামলের দাম বাড়ানো হয়েছে ৫০ থেকে শতভাগ। মাত্র ৪০ টাকার এমোক্সিসিলিনের দাম করা হয়েছে ৭০ টাকা, ২৪ টাকার ইনজেকশন ৫৫ টাকা। ৯ টাকার নাকের ড্রপের দাম বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৮ টাকা। কোনো কোনো ওষুধের দাম ৯৯ থেকে ১৩২ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এ বিষয়ে অবশ্য এখনো পর্যন্ত সরকার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেনি। কিন্তু বাজারে মৌখিক এই সিদ্ধান্তের প্রভাব অনেক আগেই পড়ে গেছে। দেশের মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার জন্য তালিকাভুক্ত ১১৭টি ওষুধের দাম বাড়ানোর ক্ষমতা রয়েছে সরকারের হাতে। তবে ওষুধের এ মূল্য বৃদ্ধির আগে অন্তত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে মানুষকে তা অবহিত করার নিয়ম। ওষুধ কোনো বিলাসী ভোগ্যপণ্য নয়। এর ওপর মানুষের জীবন-মরণ নির্ভর করে থাকে। এক্ষেত্রে ক্রেতার স্বার্থ রক্ষা করাই অনেক বেশি জরুরি। ওষুধের মূল্য বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসেবে কোম্পানিগুলোর উচ্চাভিলাষী বিপণন নীতি ও অধিক মুনাফা করার প্রবণতাকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। ওষুধ কোম্পানিগুলোর অতি মুনাফা প্রবণতার বলি হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এটি অনৈতিক। সরকারকে অবিলম্বে এদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। উদ্বেগের বিষয়, ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণে দেশে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। কার্যত প্রায় গোটা ওষুধের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে ওষুধ শিল্প মালিক সমিতি। সরকারের আইনের দুর্বলতার কারণেই ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য আইন সংশোধন করা প্রয়োজন। বৈশ্বিক এ দুর্যোগের সময় কেউ যদি ওষুধের সংকট তৈরি করে বা বেশি দাম নেয়, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। এটা মানুষের জীবনরক্ষার উপকরণ। কাজেই ওষুধের ব্যবসার সঙ্গে যারা যুক্ত, তাদের আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা ও মানবিক হওয়া প্রয়োজন। জনগণের চিকিৎসা ব্যয় কমাতে ওষুধের বাজার নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্টদের তদারকি বাড়ানোর বিকল্প নেই।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App