×

জাতীয়

হাজার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ আগস্ট ২০২২, ০৮:০৫ এএম

হাজার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

জাতীয় রাজস্ব ভবন (এনবিআর)। ফাইল ছবি

** আটকে আছে ইএফডি বসানোর প্রক্রিয়া ** ম্যানুয়ালি আদায় হচ্ছে ভ্যাট ** ৪ বছরে মেশিন বসেনি দশ হাজারও **

রাজস্ব বাড়াতে সারাদেশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পর্যায়ক্রমে ১ লাখ ইলেকট্রনিক্স ফিজিক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) বসানোর উদ্যোগ নেয় সরকার। কিন্তু ১ লাখ দূরে থাক ১০ হাজার মেশিনও বসাতে পারেনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ কারণে প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের অন্যতম ছিল বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ইসিআর বসানো। পরবর্তী সময়ে ইসিআরের তুলনায় আরো আধুনিক মেশিন ইএফডি বসানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নও বারবার বাধার মুখে পড়ে। এনবিআরের আমদানি করা ইএফডি মেশিন বিভিন্ন দোকানে দোকানে বসানো হবে। আর মেশিনে দাম পরিশোধ করবে ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের বিরোধিতার মুখে এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। পরবর্তী সময়ে ইএফডি সরবরাহের জন্য তৃতীয়পক্ষকে নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ইএফডি সংক্রান্ত একটি দরপত্র আহ্বান করে এনবিআর। এতে বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত জেনেক্স ইনফোসিস লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশ নেয়। এই দরপত্র অনুমোদনের আগেই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ তোলে বেক্সিমকো ডিজিটাল। এতেই বাধে বিপত্তি। নতুন করে দরপত্র মূল্যায়নের নির্দেশনা আসে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ঊর্ধ্বতন মহল থেকে। জেনেক্স ইনফোসিস আদৌও জালিয়াতি করেছে কিনা- এই বিষয়ে দরপত্র পুনঃযাচাই করা হবে বলেও নিশ্চিত করেছে এনবিআর সূত্র।

ইএফডি সংক্রান্ত জটিলতার বিষয়ে জানতে চাইলে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা রহমাতুল মুনিম ইএফডির টেন্ডার সংক্রান্ত কোনো বিষয় তিনি পাবলিকলি বলতে রাজি হননি। তবে ইএফডি সরবরাহের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানিয়েছেন।

জানা গেছে, ২০১৮ সালে ১৩টি খাতে ইএফডি মেশিন ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়। এ বিষয়ে ২০১৮ সালের অক্টোবরে একটি আদেশ জারি করে এনবিআর। খাতগুলো হচ্ছে- আবাসিক হোটেল, রেস্তোরাঁ ও ফাস্টফুডের দোকান, মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, আসবাবপত্রের বিক্রয়কেন্দ্র, পোশাক বিক্রয়কেন্দ্র্র বা বুটিক শপ, বিউটি পার্লার, ইলেকট্রনিক বা ইলেকট্রিক্যাল গৃহস্থালি সামগ্রীর বিক্রয়কেন্দ্র্র, কমিউনিটি সেন্টার, অভিজাত শপিং সেন্টারের অন্তর্ভুক্ত সব ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, জেনারেল স্টোর বা সুপারশপ অন্য বড় ও মাঝারি ব্যবসায়ী (পাইকারি ও খুচরা) প্রতিষ্ঠান এবং স্বর্ণকার, রৌপ্যকার ও স্বর্ণ ও রৌপ্যের দোকানদার।

চার বছর পেরিয়ে ৫ বছরে পড়লেও এখনো আলোর মুখ দেখেনি এনবিআরের এই উদ্যোগ। এখনো প্রায় ৯০ শতাংশ দোকান থেকে আগের মতো ম্যানুয়ালি ভ্যাট আদায় করছেন ভ্যাটের কর্মকর্তারা। এতে সরকার হাজার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে। এনবিআরের এই দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ও দোকানি। এই সুযোগে অনেকে ভ্যাট দেন না। যার প্রমাণ মেলে এনবিআরের আরেকটি দপ্তর ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কর্মকাণ্ডে। কিছু দিন পর পর প্রতিষ্ঠানগুলোতে তারা অভিযান চালায় এবং সরকারের বিপুল অঙ্কের রাজস্ব ফাঁকির বিষয়টি উদ্ঘাটন করে। ছোট ছোট প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে নামিদামি অনেক প্রতিষ্ঠানও ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছে, যা এনবিআরের এই গোয়েন্দা সংস্থার বিভিন্ন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন ভোরের কাগজকে বলেন, দেশে প্রায় ৫ লাখ দোকান রয়েছে। এর মধ্যে ৬ হাজারের মতো ইএফডি সরবরাহ করা হয়েছে। সেই হিসাবে প্রায় সবাই এর বাইরে আছে। যে কারণে আমরা ভোক্তার কাছ থেকে ভ্যাট নেই না। আর ভ্যাট নিলে সরকারকে ভ্যাট দিতে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। এমনিতেই এই খাত থেকে প্রতি বছর প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার মতো ভ্যাট আদায় হয়। ইএফডি বসালে আরো ৩ থেকে ৪ হাজার কোটি টাকা বেশি আসবে বলেও মনে করেন এই ব্যবসায়ী নেতা। ইএফডির দাম কারা পরিশোধ করবে এই নিয়ে এনবিআর ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে একটা জটিলতা ছিল। এই জটিলতা এখন কেটে গেছে। তবে সারাদেশে কী পরিমাণে আর কীভাবে ইএফডি বসাবে এটা এনবিআর ভালো জানে বলে মনে করেন তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App