×

জাতীয়

পাকিস্তানের জেলে বঙ্গবন্ধুর ‘নিঃসঙ্গ লড়াই’

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ আগস্ট ২০২২, ১০:৫৯ পিএম

পাকিস্তানের জেলে বঙ্গবন্ধুর ‘নিঃসঙ্গ লড়াই’

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতীয় নাট্যশালার পরীক্ষণ থিয়েটার হলে অনুষ্ঠিত হয় যাত্রাপালা নিঃসঙ্গ লড়াই। ছবি: ভোরের কাগজ।

পাকিস্তানের জেলে বঙ্গবন্ধুর ‘নিঃসঙ্গ লড়াই’

বঙ্গবন্ধুর লায়ালপুর জেলখানার বন্দিজীবনভিত্তিক কাহিনী নিয়ে যাত্রাপালা নিঃসঙ্গ লড়াই। ছবি: ভোরের কাগজ।

পাকিস্তানের জেলে বঙ্গবন্ধুর ‘নিঃসঙ্গ লড়াই’

দেশের নানাপ্রান্ত থেকে আসা যাত্রাশিল্পীরা অভিনয় করেছেন এই যাত্রাপালায়। ছবি: ভোরের কাগজ।

লায়ালপুর জেল। ২৫ মার্চ রাতে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়ার পরে লাহোর থেকে আশি মাইল দূরে এই জেলে বঙ্গবন্ধুকে রাখা হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পরেও তিনি বন্দি থাকেন পশ্চিম পাকিস্তানের জেলে। বিচারের নামের এক প্রহসন মঞ্চস্থ হয় বঙ্গবন্ধুর এই জেল জীবনে। পৃথিবীতে আর কোথাও কোনো নেতার এরকম হাস্যকর সাজানো বিচার হয়েছে কিনা ইতিহাসে তার সাক্ষ্য মেলা ভার।

উনিশশ একাত্তুরের জুলাইয়ের গোড়ার দিকে ইয়াহিয়া বুঝতে পারেন যে পূর্ব পাকিস্তানে তার সেনাবাহিনী বিপুল প্রতিরোধের সম্মুখীন হচ্ছে এবং পৌঁছে যাচ্ছে পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে। তখন প্রতিশোধের নেশায় ইয়াহিয়া শেখ মুজিবকে হত্যার পরিকল্পনা করে। জুলফিকার আলী ভুট্টো তাকে নিবৃত্ত করে এই বলে যে, মুজিবকে হত্যা করা হলে বিশ্ব সমর্থন একেবারে তলানিতে গিয়ে ঠেকবে। কেবলমাত্র বিচারের মাধ্যমে তাকে সাজা দিলে সেটা গ্রহণযোগ্যতা পাবে।

[caption id="attachment_364023" align="aligncenter" width="700"] বঙ্গবন্ধুর লায়ালপুর জেলখানার বন্দিজীবনভিত্তিক কাহিনী নিয়ে যাত্রাপালা নিঃসঙ্গ লড়াই। ছবি: ভোরের কাগজ।[/caption]

শুরু হয় বিচার। লায়ালপুর জেলে বঙ্গবন্ধুর ট্রায়াল। অভিযোগ দাঁড় করানো হয় বারোটি। যার ভেতরে ছয়টি প্রমাণিত হলে নিশ্চিত শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য ব্রোহি নামক এক ব্যারিস্টারকে নিয়োগ দেয়া হয় যিনি বঙ্গবন্ধুর পক্ষের উকিল হবেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু সাফ সাফ জানিয়ে দেন আমার পক্ষে কোনো উকিলের প্রয়োজন নেই আমি নিজেই আমার যুক্তি-তর্ক তুলে ধরবো। বিচারে সাজানো কিছু সাক্ষী হাজির করা হয়। বঙ্গবন্ধু তার ক্ষুরধার যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করে দিতে থাকেন যে তার বিরুদ্ধে সবগুলো মামলাই ভিত্তিহীন। সাক্ষীরা সব টাকা খেয়ে মিথ্যে সাক্ষী দিতে এসেছে।

তারপরেও বিচারের রায় হয় এবং রায়ে বঙ্গবন্ধুর ফাঁসির আদেশ ঘোষণা করা হয়। তাকে লায়ালপুর জেল থেকে নেয়া হয় মিয়াঁওয়ালি জেলে যেখানে তার ফাঁসি কার্যকর করা হবে। কবর খোঁড়া হয় তার জন্যে। বঙ্গবন্ধু সেই কবর খোঁড়া দেখতেও পান। তিনি মৃত্যুকে ভয় পাননি। কেবল বলেছিলেন তার লাশটা যেনো তার দেশের মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়। এদিকে দেশ স্বাধীন হয় আর বিশ্ব নেতৃত্বের চাপে বন্ধ হয়ে যায় ফাঁসি কার্যকরের আয়োজন। পাকিস্তানের জেল থেকে মুক্তি পেয়ে বিলাত ও ভারত হয়ে দশ জানুয়ারি, উনিশশ বাহাত্তুর দেশে ফেরেন তিনি।

[caption id="attachment_364024" align="aligncenter" width="700"] দেশের নানাপ্রান্ত থেকে আসা যাত্রাশিল্পীরা অভিনয় করেছেন এই যাত্রাপালায়। ছবি: ভোরের কাগজ।[/caption]

এই সত্যাশ্রয়ী গল্প নিয়েই যাত্রাপালাটি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আমন্ত্রণে লিখেছেন মাসুম রেজা। এটি তার লেখা প্রথম যাত্রাপালা। মাসব্যাপী শোক দিবসের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগের ব্যবস্থাপনায় বঙ্গবন্ধুর লায়ালপুর জেলখানার বন্দিজীবনভিত্তিক কাহিনী নিয়ে যাত্রাপালা নিঃসঙ্গ লড়াই। নির্দেশনায় ছিলেন সাইদুর রহমান লিপন। প্রযোজনা উপদেষ্টা লিয়াকত আলী লাকী। উপদেষ্টা নির্দেশক হিসেবে কাজ করেছেন ওয়াহিদা মল্লিক জলি। দেশের নানাপ্রান্ত থেকে যাত্রাশিল্পীরা অভিনয় করেছেন এই যাত্রাপালায়। তাদের অভিনয়ে ঋদ্ধ হয়েছে প্রযোজনাটি।

বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) সন্ধ্যায় জাতীয় নাট্যশালার পরীক্ষণ থিয়েটার হলে নিঃসঙ্গ লড়াই শীর্ষক যাত্রাপালাটি অনুষ্ঠিত হয়।

নিঃসঙ্গ লড়াইয়ের সারথীরা হলেন মিঠুন ইসলাম টিস্যু, এস এম শফি, আফসারুজ্জামান রনি, মোস্তফা জাফরুল আজম সাখাওয়াত হোসেন সেলিম, রাহুল মজুমদার, শান্তনু সাহা, শাহ মো. রইচ উদ্দীন আশীষ, আবুল কালাম আজাদ, পরিতোষ কুমার সাহা, লিয়াকত হোসেন, কাজী রফিকুল ইসলাম, মো. তাহাজ উদ্দীন, মো. সানাউল্লাহ, আসকার আলী ওয়াসিম, তুষার কান্তি মল্লিক, হরেন্দ্রনাথ মন্ডল, শিশির রহমান, জহির রায়হান, শাহানাজ পারভীন, লিপি শর্মা, ঝুমা তরফদার, স্বপ্না বিশ্বাস, মিলিতা, সরকার, অনুরাধা মন্ডল, মুনজেরিন বিনতে সিথি, হুমায়রা জাহান নীড়, উজমা হাসান, লিপি পাল।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App