×

মুক্তচিন্তা

জলবায়ু পরিবর্তন শিশুশ্রম ত্বরান্বিত করছে

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৫ আগস্ট ২০২২, ০২:০৫ এএম

জলবায়ু পরিবর্তন শিশুশ্রম ত্বরান্বিত করছে
জলবায়ু পরিবর্তন বর্তমান প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। এর কারণে দেশের উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলে একটার পর একটা প্রাকৃতিক দুর্যোগ লেগেই আছে। খরা, বন্যা, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততা, নদীভাঙন প্রভৃতি জলবায়ু পরিবর্তনঘটিত দুর্যোগের প্রভাব পড়েছে দেশের ব্যাপক জনগোষ্ঠীর ওপর। উপকূলের খেটে-খাওয়া মানুষের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়েছে সবচেয়ে বেশি। উপকূলে কাজের ক্ষেত্র কমে যাচ্ছে। অপরদিকে জীবনযাত্রার খরচ বাড়ছে। কাজ হারিয়ে অনেক পরিবার দরিদ্র থেকে চরম দারিদ্র্যের কবলে পড়ছে। এক কথায়, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উপকূলের জীবন বিপর্যস্ত। নদীভাঙনসহ বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে বহু পরিবার শহরে পাড়ি জমাচ্ছে। শহরে এসেও উদ্বাস্তু শিশুরা বিভিন্ন শ্রমের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাচ্ছে। শিশুদের যে পড়ালেখার প্রয়োজন আছে তা দরিদ্র পরিবারের পিতামাতা বেমালুম ভুলে যাচ্ছে। এমনকি বহু দরিদ্র পরিবার শিশুর পড়াশোনাকে অলাভজনক কাজ মনে করছে। দেখা যাচ্ছে, শিশুশ্রমের সঙ্গে যুক্তরাই দরিদ্র পরিবারের সন্তান। শিশুশ্রমের বিভিন্ন কারণ রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন পরোক্ষভাবে সেসব কারণকে ত্বরান্বিত করছে। এর প্রভাবজনিত সমস্যার কারণে যখন একটা পরিবার কোনোভাবেই ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না, তখন পরিবারের সম্মতিতেই শিশুরা বিভিন্ন শ্রমে জড়িয়ে পড়ছে! বাড়তি অর্থের আশায় দরিদ্র পরিবারের দুঃখ ঘোচাতে বহু শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে যুক্ত হচ্ছে। এতে হয়তো সাময়িকভাবে পরিবারের কিছুটা অর্থনৈতিক সহযোগিতা হচ্ছে বটে! তবে সার্বিকভাবে শিশুর জীবনকে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। অনেক দরিদ্র পরিবার গ্রাম থেকে শিশুকে শহরে কাজের আশায় পাঠিয়ে দিচ্ছে। যে বয়সে শিশুর স্কুলে থাকার কথা, সে বয়সে শিশুরা বিভিন্ন হালকা ও ভারি কাজের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। এতে দরিদ্র পরিবারের অনেক শিশুশ্রমিক অজান্তেই অপরাধ কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে বর্তমানে শিশুশ্রমের সঙ্গে নিয়োজিত শিশুর সংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি। বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় ৪০ ভাগ শিশু। বাংলাদেশে বর্তমানে শিশুশ্রমের সঙ্গে যুক্তদের সঠিক পরিসংখ্যান নেই বললেই চলে। তবে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বর্তমানে দেশে শিশুশ্রমের সঙ্গে যুক্ত শিশুর সংখ্যা ৫০ লাখের বেশি। ‘বাংলাদেশ জাতীয় শ্রম আইন-২০১৬’ অনুযায়ী ১৪ বছরের কম বয়সি শিশুদের কাজ করানো হলে তা শিশুশ্রম হিসেবে গণ্য হবে। জাতিসংঘ ২০২১ সালকে ‘আন্তর্জাতিক শিশুশ্রম নিরসন বছর’ হিসেবে ঘোষণা করে। বাংলাদেশ শিশুশ্রম নিরসনের লক্ষ্যে কাজ করলেও শিশুশ্রমের অভিশাপ থেকে কিছুতেই মুক্তি মিলছে না। শিশুশ্রম বন্ধে সরকার ৩৮টি ঝুঁকিপূর্ণ শ্রম নির্ধারণ করে ২০২১ সালের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসনকল্পে অঙ্গীকার করেছিল। কিন্তু করোনা মহামারি হঠাৎ করে সবকিছু ওলটপালট করে দেয়। ২০২৫ সালের মধ্যে সব ধরনের শিশুশ্রম থেকে দেশকে মুক্ত করার লক্ষ্য রয়েছে। যদি এখনই শিশুশ্রম বন্ধে কার্যকর, পরিকল্পিত ও বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ না নেয়া যায় তাহলে শিশুশ্রমমুক্ত দেশ গড়া স্বপ্নই থেকে যাবে। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক দুরবস্থাও শিশুশ্রমের অন্যতম কারণ। তবে বর্তমান সময়ে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যার কারণে শিশুশ্রম বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, মোট শিশুশ্রমের অর্ধেকের জন্য দায়ী জলবায়ুগত দুর্যোগ। উপকূলসংলগ্ন এলাকায় শিশুশ্রম বাড়ছে। দুর্যোগের কবলে পড়ে দিশাহারা মানুষ শহরমুখী হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়, নদীভাঙন, বন্যা, খরা, জলোচ্ছ¡াসের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয় শিশুশ্রমকে ত্বরান্বিত করছে। সামাজিক এ সমস্যা এখনই রোধ করা সম্ভব না হলে ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অর্জন করা কঠিন হয়ে পড়বে। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে অভিযোজনের পাশাপাশি সমস্যা মোকাবিলায় সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। শিশুশ্রম বন্ধে দরিদ্র পরিবারের অভিভাবকদের সচেতনতা দরকার। সর্বোপরি সামাজিক কর্মসূচির আওতায় জলবায়ু উদ্বাস্তুদের সহায়তায় বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। সাধন সরকার সহকারী শিক্ষক, লৌহজং বালিকা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, মুন্সীগঞ্জ। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App