×

মুক্তচিন্তা

কর্মঘণ্টা নষ্টে অর্থনৈতিক বিপর্যয়

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৫ আগস্ট ২০২২, ০২:০৫ এএম

কর্মঘণ্টা নষ্টে অর্থনৈতিক বিপর্যয়
বর্তমানে দেশের সেরা সমস্যাগুলোর মধ্যে কর্মঘণ্টা নষ্ট হওয়া অন্যতম, যার প্রধান কারণ হলো যানজট। বিশ্বব্যাংকের এক গবেষণায় দেখা গেছে অসহনীয় যানজটের কারণে প্রতিদিন অনেক কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। রাজধানী ঢাকায় ৭৩টি মোড়ে আটকে থাকে যানবাহন। এতে প্রতিদিন আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৯৮ হাজার কোটি টাকা। আর জ্বালানি পুড়ছে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকার। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় জানা গেছে, চরম যানজটের কারণে প্রতিদিন নষ্ট হচ্ছে ৯০ লাখের অধিক কর্মঘণ্টা। এই সর্বনাশা যানজটের কারণে প্রতিদিন ক্ষতি হচ্ছে ১৫২ কোটি ৫৬ লাখের অধিক টাকা। এই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে প্রতি বছর সবমিলিয়ে ১ হাজার ৪০০ কোটি কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। এতে প্রতি বছর আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে ১৪০ কোটি টাকা যা দেশবাসীর জন্য বড় শঙ্কার কারণ। নানামুখী সমস্যার কারণে মানুষের স্রোত আর অনিয়ন্ত্রিত গাড়ি রাজধানীতে যানজটের সৃষ্টি করছে। রাজধানীবাসীর কাছে যানজট একটি মূর্তিমান আতঙ্ক। প্রতিদিনের অসহ্য যানজটের কারণে স্থবির হয়ে পড়ে মানুষের জীবন ও জীবিকা। হুমকিতে পড়ে বেঁচে থাকার চিন্তা। তেমনিভাবে চাকরি, বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা কিংবা অবরোধ, হরতালের দিনে রাজধানীর প্রায় প্রতিটি সড়কে দেখা যায় তীব্র যানজট। জীবনাচরণ হয়ে পড়ে স্থবির, মানুষ হয়ে ওঠে নাকাল। পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) হিসাব অনুযায়ী ঢাকা শহরে নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা প্রায় ১১ লাখ ৭৩ হাজার ১৬০টি। তার মধ্যে মোটরসাইকেলের সংখ্যা প্রায় অর্ধেক। ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা প্রায় ২ লাখ ৫২ হাজার ৬৭৪টি। যাত্রীবাহী বাসের সংখ্যা প্রায় ৩৯ হাজার ৭৮২টি। এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ঢাকা শহরে চলাচলকৃত ৫০ শতাংশ ব্যক্তিগত যানবাহন। আর এই ৫০ শতাংশ গাড়ি বহন করে মাত্র ১২ শতাংশ যাত্রী। কিন্তু বাকি ৫০ শতাংশ গাড়ি বহন করে ৮৮ শতাংশ যাত্রী। যানজট বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হলো ব্যক্তিগত যানবাহন বৃদ্ধি। বিপুলসংখ্যক যানবাহনের চাপে মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে। নগরীর জীবনমান, শিক্ষার উন্নতি ও চিকিৎসা ব্যবস্থায় সুবিধা প্রভৃতি কারণে প্রতিনিয়ত রাজধানীতে মানুষের আগমন বাড়ছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিশেষ করে বন্যাকবলিত এলাকা, নদী-ভাঙন ও দুর্ভিক্ষ অঞ্চলের গরিব ও অসহায় মানুষের একমাত্র কর্মসংস্থানের জায়গা হিসেবে পছন্দ ঢাকা। সড়ক ব্যবস্থার নাজুক অবস্থা, অনিয়ন্ত্রিত যানবাহন চলাচল, যেখানে সেখানে ইচ্ছেমতো গাড়ি পার্কিং, অবৈধ ফুটপাত ও অপরিকল্পিত নগরায়ণ প্রভৃতি যানজট বাড়িয়ে তুলছে। রাজধানীজুড়ে অপরিকল্পিতভাবে বাড়িঘর ও হাটবাজার গড়ে উঠছে, যার ফলে রাস্তাঘাট সরু হয়ে যাওয়ায় যানজট বাড়ছে, দুর্ঘটনা ঘটছে। নষ্ট হচ্ছে কর্মঘণ্টা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ঝরছে তাজা প্রাণ। তাছাড়া সড়কে একদিকে ধীরগতির রিকশা, ভ্যান ও অন্যদিকে দ্রুতগতিসম্পন্ন গাড়ি ও বাস-ট্রাকের যাতায়াতের ফলে গতিবেগ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে, যার ফলে ঘটে দুর্ঘটনা আর দুর্ঘটনার পর দুর্ঘটনাকবলিত এলাকায় শুরু হয় তীব্র যানজট। মোটকথা এক বেসামাল অবস্থার সৃষ্টি হয় যানজটে। তাছাড়া যান চলাচলে ট্রাফিক নিয়ম অমান্য করার ফলেও যানজটের ঘটনা নিয়মিতই রয়ে গেছে। নগরীতে সাধারণ মানুষের জন্য একমাত্র ভরসা পাবলিক ট্রান্সপোর্ট। প্রতিটি বাসে প্রায় ৫০-৬০ জন মানুষের ধারণক্ষমতা রয়েছে। চলমান মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষে রাজধানীর সঙ্গে পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোর যোগাযোগ স্থাপিত হলে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। তবে ধীরগতি ও দ্রুতগতিসম্পন্ন যানের ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। তা নিয়ে কাজ করতে হবে। যানজট সমস্যার সমাধান করতে পারলেই রক্ষা পাবে জনগণ। এর ফলে আর নষ্ট হবে না রাজধানীতে বসবাসরত মানুষের মূল্যবান কর্মঘণ্টা। উপরন্তু তা দেশের সামাজিক উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানে সহায়ক হয়ে উঠবে। মিজানুর রহমান মিজান শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App