×

মুক্তচিন্তা

চলনবিলের স্বপ্নপুরুষ

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৪ আগস্ট ২০২২, ১২:৪৮ এএম

চলনবিলের স্বপ্নপুরুষ

সরদার মোহাম্মদ আবদুল হামিদ চলনবিলের স্বপ্নপুরুষ ছিলেন। চলনবিলের নাটোর জেলার গুরুদাসপুর উপজেলার তৎকালীন সময়ে অনেক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার পটভূমিতে শিক্ষাবিদ সরদার আবদুল হামিদের ধ্যান-ধারণার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। কখনো তিনি সরাসরি কাজ করেছেন আবার কখনো পরামর্শ দিয়েছেন। মোহাম্মদ আবদুল হামিদ চলনবিলের সব শ্রেণির মানুষের প্রিয় ছিলেন। আবদুল হামিদ বাংলা সনের বিভিন্ন মাসের দিন সংখ্যা নির্ধারণের লক্ষ্যে ১৯৫৯ সালে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন। প্রস্তাবটি ১৯৬৬ সালে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত নিরীক্ষা কমিটির সভার সুপারিশ সাপেক্ষে বাংলা একাডেমি কর্তৃক অনুমোদনক্রমে স্বীকৃতি লাভ করে। পরবর্তীতে বাংলাদেশ আবদুল হামিদ কর্তৃক উত্থাপিত প্রস্তাবটি অনুমোদন করে। এরই প্রেক্ষিতে বৈশাখ হতে ভাদ্র মাস পর্যন্ত প্রতিমাস ৩১ দিনে এবং আশ্বিন মাস হতে চৈত্র মাস ৩০ দিনে গণনা করা হয়। ১৯৩০ সালের ১ মার্চ নাটোর জেলার গুরুদাসপুর উপজেলার খুবজীপুর গ্রামে মোহাম্মদ আবদুল হামিদ এক কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি চলনবিল অঞ্চলের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি রক্ষার উদ্দেশ্যে একটি জাদুঘর স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বেসরকারি উদ্যোগে নাটোর জেলার গুরুদাসপুর উপজেলার খুবজীপুর গ্রামে অস্থায়ীভাবে যাত্রা শুরু হয় চলনবিল জাদুঘরের। কিছুদিন পরে ১৯৮৯ সালের ২ জুলাই জাদুঘরটি প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের আওতায় আসে। শহীদ শামসুজ্জোহার স্মৃতির স্মরণে নাটোরের গুরুদাসপুর থানা সদরে অবস্থিত কলেজটির নাম বিলচলন শহীদ শামসুজ্জোহা কলেজ করা হয়। এই কলেজের প্রতিষ্ঠা ও নামকরণে মোহাম্মদ আবদুল হামিদ জোরালো ভূমিকা পালন করেন। তিনি সাংবাদিকতাতেও বিশেষ অবদান রেখেছেন। তার পৃষ্ঠপোষকতায় ১৯৭৮ সালে চলনবিলের রিপোর্টারদের নিয়ে গুরুদাসপুরে ‘চলনবিল প্রেস ক্লাব’ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। মোহাম্মদ আবদুল হামিদ ২৬টি গ্রন্থ রচনা করেন। ১৯৬৭ সালে প্রকাশিত চলনবিলের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে ‘চলনবিলের ইতিকথা’ তার সেরা গবেষণামূলক গ্রন্থ। চলনবিলের ইতিকথা বইটির জন্য চলনবিলবাসী তার কাছে বিশেষভাবে ঋণী। আবদুল হামিদ রচিত অন্যান্য গ্রন্থের মধ্যে ‘বঙ্গাব্দ সমাচার’, ‘দেখে এলাম অস্ট্রেলিয়া, ‘পশ্চিম পাকিস্তানের ডায়েরি’, ‘পাশ্চাত্যের বৈশিষ্ট্য’, ‘জ্ঞানের মশাল’, ‘চলনবিলের লোকসাহিত্য’, ‘কর্মবীর সেরাজুল হক’, ‘আমাদের গ্রাম’, ‘শিক্ষার মশালবাহী রবিউল করিম’, ‘পল্লী কবি কারামত আলী’ উল্লেখযোগ্য। অধ্যক্ষ সরদার আবদুল হামিদ চলনবিল জেলা গঠনের প্রস্তাবনা করেছিলেন। তার প্রস্তাবিত চলনবিল জেলায় আটটি উপজেলা স্থান পায়। নাটোরের গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম ও সিংড়া, পাবনার চাটমোহর ও ভাঙ্গুড়া, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, উল্লাপাড়া ও রায়গঞ্জ (সলঙ্গা)। এছাড়াও বগুড়ার নন্দীগ্রামের একটা অংশের কথা তিনি উল্লেখ করেছেন। চলনবিল জেলা গঠনের প্রস্তাবনার আজো বাস্তবায়ন হয়নি। চলনবিল জেলা গঠন চলনবিলের মানুষের প্রাণের দাবি। আজ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে চলনবিলের সাধারণ মানুষ প্রভাবিত হচ্ছে। চলবিলের বাস্তুসংস্থান ধ্বংস হচ্ছে, মৎস্যসম্পদ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, মানুষ জীবন-জীবিকার পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছে। নদী দূষণ ঘটছে, নদীর গতিতে পরিবর্তন হচ্ছে, জমিতে অপরিকল্পিত সার-কীটনাশক ব্যবহার করার ফলে সুদূরপ্রসারিত প্রভাব পড়ছে। বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলার কেউ কি আছেন? চলনবিলের আরো হাজার সমস্যা নিয়ে কথা বলার জন্য আজ অধ্যক্ষ হামিদের মতো মানুষের বড় প্রয়োজন। ২০০৬ সালের ২৪ আগস্ট আবদুল হামিদ মৃত্যুবরণ করেন। আজ তার ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী। আমরা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি চলনবিলের স্বপ্নপুরুষ আবদুল হামিদকে। তার প্রতি অতল শ্রদ্ধা।

ফাত্তাহ তানভীর রানা : লেখক ও ব্যাংকার। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App