×

সারাদেশ

বৃষ্টি নেই পাহাড়ে, জুমচাষিদের কান্না

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ আগস্ট ২০২২, ০৫:১৭ পিএম

বৃষ্টি নেই পাহাড়ে, জুমচাষিদের কান্না

রোদ ও খরায় পুড়ছে জুমের ক্ষেত। ছবি: ভোরের কাগজ।

বৃষ্টি নেই পাহাড়ে, জুমচাষিদের কান্না
বৃষ্টি নেই পাহাড়ে, জুমচাষিদের কান্না

পাহাড়ে বসবাসরত জুমিয়াদের কান্না কেউ শুনতে পায়না। রোদ ও খরায় পুড়ছে জুমের ক্ষেত। বৃষ্টি না হওয়ায় জুমের ফসল ভালো হয়নি। সেই সাথে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন বৃদ্ধি, অতিরিক্ত যাতায়াত ভাড়ায় পাহাড়ের জুম চাষীদের প্রবল কষ্ট শুরু হয়েছে। সামনের বছর তাদের পরিবারগুলি কিভাবে চলবে। ছেলে মেয়েদের লেখা পড়ার খরচ চালাবে কি করে সেই চিন্তায় পাহাড়ের প্রতিটি জুমচাষিদের দুশ্চিন্তার শেষ নেই।

জুম চাষ পাহাড়িদের কাছে একটি ঐতিহ্যবাহী ও জনপ্রিয় বিষয়। এ কৃষিপদ্ধতির মাধ্যমে পাহাড়িরা ধান, তিল, ভূট্টা, মরিচ, শাক সবজি, ফল, কুমড়াসহ নানা জাতের ফসল ফলায়। জুম চাষের ফসলের মাধ্যমেই তারা তাদের খাদ্য চাহিদা মেটায়।

থানচি সদর ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের কাইথং ম্রো পাড়া ও কুংহ্লা ম্রো পাড়ার বাসিন্দা মেনলাও ম্রো, মেনথং ম্রো, চিংপ্রাত ম্রো , সিংক্লান ম্রো, এছাড়াও বাসিরান ত্রিপুরা স্মৃতি ত্রিপুরা, তার স্বামী সলেমান ত্রিপুরা থানচি লিক্রে সড়কের পাশে সাংবাদিকদের জানান, জুমের ধানসহ নানান জাতের চাষের ফলন মরে যাচ্ছে। আমাদের কান্না কেউ শুনতে পায়না।

ম্রো পরিবারের কিছু সদস্য জানান, গত বছর পাহাড়ি উঁচু-নিচু জমিতে মোট ১৩ হাঁড়ি বীজ ধান রোপন করেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বৃষ্টিও হয়েছে। সে বছরে ফলন হয় পাঁচশ হাঁড়ি ধান, মিস্টি কুমড়া, জুম কুমড়া, তিল, ভূট্টা, মরিচ, ফল( মার্ফা)। বিক্রি করে ভালো লাভবানও হয়েছেন। পরিবারের ভরণ -পোষণের কোনো অসুবিধা হয়নি। চলতি বছর লিটক্রে সড়কের পাশে মোট ১২ হাঁড়ি ধান লাগানো হয় তবে বৃষ্টি না হওয়ায় খরা রোদে ধান এবং অন্যান্য ফসল মারা গেছে। বৃষ্টি নির্ভর জুম চাষে বৃষ্টি না হলে একশ হাঁড়ি ধান পাব কিনা সন্দেহ করছেন তিনি। তার মতে কুংহ্লা পাড়ার ৫০ পরিবার, কাইথং পাড়ার ৮০ পরিবারের একই অবস্থা হবে।

একই সাথে সড়কের দুই পাশের রুমা ও থানচি উপজেলা সীমান্ত রেখার রেমাক্রী প্রাংসা ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের রাংদিয়া পাড়ার বাসিন্দা বীর বাহাদুর , অরসেন ত্রিপুরা ও অনেকেই একই দশার কথা জানালেন। তারা বলেন, গত ফেব্রুয়ারী ও মার্চ দুই মাস পাহাড়ের জঙ্গল কাটা শুরু করেন। এপ্রিল মাসে আগুন লাগায় মে মাসে বীজ ধান ও অন্যান্য ফসল রোপন করি। জুন জুলাই দুইমাস পরিচর্যা করি। আগস্ট মাসে কিছু কিছু ধান পাকার কথা। সম্পূর্ণ ধান পাকতে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরও লাগবে। জুমের উ’পাদিত ফসল ঘরে তুলতে নভেম্বর-ডিসেম্বর লাগবে। এবার ঈশ্বর সহায় না হলে পাহাড়ে মানুষের হাহাকার, খাদ্য সংকট বা অভাব দেখা দেয়ার সম্ভাবনা বেশী বলে মনে করছেন তারা।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্য মতে থানচি উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের ৩১৬৭ পরিবারে সাধারণ কৃষক রয়েছেন। এর মধ্যে উঁচু ভূমিতে জুম চাষ করেন ৯৫ শতাংশ পরিবার। বাকিরা বিভিন্ন ঝিড়ির মাঝ দিয়ে সমতল ভূমিতে চাষ করে থাকেন। তাদের মতে মোট ২৪৮৪ হেক্টর জমি রয়েছে। সেখানে ২৪৬২ হেক্টর উঁচু জমিতে জুম চাষ করেন। বাকি ২২ হেক্টর জমি কৃষি কাজে ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া জুমের ধান ছাড়াও অন্যান্য ফসলের মধ্যে মরিচ, তিল, ভূট্টা, শাক সবজি, কুমড়া, মিষ্টি কুমড়া,মার্ফা ফল ইত্যাদি চাষ হয়। উঁচু ভূমির মধ্যে কৃষকরা ব্যবহার করে থাকেন আদার জন্য ৩৪২ হেক্টর, হলুদ ৩৫৭ হেক্টর, তিল ২৭১ হেক্টর, মরিচ ৮০ হেক্টর, শাক সবজির জন্য ২১২ হেক্টর জমি। চলতি বছরে ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬০২১.৮২ মে. টন। গতবছরে ৬৪৩৯.৩৯ মে. টন ফলন হয়েছিল ৬৬৮৯.৪৮ মে. টন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২০০ মে. টন বেশী উৎপাদন হয়েছে বলে দাবী কৃষি বিভাগের।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উদ্ভিদ সংরক্ষণ ও উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ দাশগুপ্ত বলেন, চলতি বছরে ১০০ জন কৃষক পরিবারকে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে প্রণোদনা হিসেবে ব্রি- বীজ ধান ৫ কেজি, এমওপি ১০ কেজি এবং ২০ কেজি ডিএফপি সার বিনামূল্যে বিতরণ করেছেন। এছাড়া কৃষি জমির জন্য ১০ পরিবারকে প্রদর্শনী প্লট হিসেবে সহযোগীতা করা হয়েছে। তাদের ফসলের গুনগতমান ভালো হয়েছে এবং তারা লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে পারবে।

 

প্রশ্ন করা হলে কুংহ্রা পাড়ার বাসিন্দা সিংক্লাং ম্রো জানান, কৃষি অফিসারদের আমরা চিনি না, জানিও না। যোগাযোগ ভালো হলে ও আমাদের পাড়ায় তারা কোনো দিন আসেন না। জুমের ধান ও সবজি চাষ, আদা হলুদ, কাজু বাদাম ও আম বাগান করার জন্য খুব আগ্রহী আমরা। প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে না দেয়ায় আমাদের ওয়ার্ডে প্রায় সাত আট পাড়ায় কোনো সুবিধা পাই না। তিন্দু ইউনিয়নের বাসিন্দা থাংলং ম্রো জানান, জুম চাসের ওপর বর্তমান ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রশিক্ষণ সার, কীটনাশক, কৃষি উপকরণ পেলে জুম চাষে পদ্ধতিগতভাবে এগিয়ে যেতে পারতাম।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মজ্ঞুরুল আরিফিন সবুজ বলেন, সামনে বৃষ্টি হলে লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে পারবো বলে দৃঢ় আশা রাখছি। কিন্তু বৃষ্টির এমন অবস্থা থাকলে লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে কষ্ট হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App