×

জাতীয়

বায়রা নির্বাচনে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার ইস্যু বড় ফ্যাক্টর

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ আগস্ট ২০২২, ১১:৫১ পিএম

বায়রা নির্বাচনে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার ইস্যু বড় ফ্যাক্টর

ছবি: ভোরের কাগজ

আইনী জটিলতা শেষে দরজায় কড়া নাড়ছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সীজ (বায়রা) নির্বাচন। ভোটের তারিখ ঘোষণার পর জমে উঠেছে নির্বাচনী মাঠ। নির্বাচনে তিনটি প্যানেল প্রচারণায় থাকলেও মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের শ্রমবাজার ইস্যু বড় ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করছে। এই শ্রমবাজারে ২৫ জনের সিন্ডিকেট হিসেবে চিহ্নিতরা যেমন প্যানেল দিয়েছে তেমনিভাবে প্রতিদ্বন্দ্বীতায় আছে সিন্ডিকেট বিরোধীরাও। তবে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে আন্দোলনে থাকা রিক্রুটিং এজেন্সী মালিকদের মধ্যেও দেখা দিয়েছে বিভক্তি। তারা পৃথক দুটি প্যানেল নিয়ে প্রচারণায় আছে। পৃথক তিন প্যানেল দিনভর প্রচারণা চালানো ছাড়াও তারকা হোটেল-ক্লাবে নৈশভোজ ও পার্টি চালাচ্ছে। তবে, কোনো অংশই এখনো পূর্ণ প্যানেল নিয়ে মাঠে নেই। সবাই হাঁটছেন কৌশলে, মেলাচ্ছেন ভোটের অঙ্ক।

জানা গেছে, প্রায় দেড়বছর আইনী জটিলতায় আটকে থাকার পর আগামী ৩ সেপ্টেম্বর হবে বায়রা নির্বাচন। তফসিল অনুযায়ী প্রার্থিতা প্রত্যাহার শেষে গত ১৭ আগস্ট বায়রা নির্বাচন বোর্ড ১৮২ জন প্রার্থীর বৈধ তালিকা প্রকাশ করেছে। মোট ভোটার ১০৪২ জন। নির্বাচনে বায়রার সাবেক সভাপতি নূর আলী ও আবুল বাশারের নেতৃত্বে সম্মিলিত ঐক্য পরিষদ, বায়রার সাবেক মহাসচিব ও মালয়েশিয়ার সিন্ডিকেটে মূলনায়ক রুহুল আমীন স্বপনের নেতৃত্বে সম্মিলিত গণতান্ত্রিক জোট এবং বায়রার সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি ড. মোহাম্মদ ফারুকের নেতৃত্বে সম্মিলিত সমন্বয় ফ্রন্ট ২৭ জন করে পৃথক তিনটি প্যানেল নিয়ে মাঠে আছেন।

এদের মধ্যে বায়রা সম্মিলিত ঐক্য পরিষদ ও সম্মিলিত সমন্বয় ফ্রন্টে যুক্তরা মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে সম্মিলিত গণতান্ত্রিক জোটে যুক্তদের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে এতোদিন একসঙ্গে আন্দোলন করলেও ভোটের মাঠে তারা প্রতিদ্বন্দ্বী। সম্মিলিত ঐক্য পরিষদ ও সম্মিলিত সমন্বয় ফ্রন্ট একে অপরের বিরুদ্ধে কৌশলে গোপনে সিন্ডিকেটে ঢুকে যাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন। সম্মিলিত ঐক্য পরিষদ নয়াপল্টনে গোল্ডেন প্লেট রেস্টুরেন্টে, সম্মিলিত গণতান্ত্রিক জোট হোটেল ভিক্টরীতে এবং সম্মিলিত সমন্বয় ফ্রন্ট অরচার্ড ফারুক টাওয়ারে নির্বাচন পরিচালনা অফিস খুলেছেন। এছাড়া কাজী আব্দুর রহিমের নেতৃত্বে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার কমিটি নামে একটি প্যানেলের কথা শোনা গেলেও ভোটের মাঠে তাদের তৎপরতা নেই বলে মনে করছেন প্রতিদ্বন্দ্বী তিন প্যনেলের নেতৃবৃন্দ।

জানা গেছে, ২৫ জনের সিন্ডিকেট মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে শ্রমিক পাঠানোর সুযোগ দেয়ার কথা বলে আরও ২৫০ রিক্রুটিং এজেন্সি মালিককে অন্তর্ভুক্ত করেছে বলে অভিযোগ আছে। এই ভোটগুলো তারা পাবে বলে প্রচার করা হচ্ছে। আবার সিন্ডিকেট বিরোধীরা মনে করছেন, ব্যবসায়িক স্বার্থে সিন্ডিকেটে সাব এজেন্ট হলেও গোপন ভোটে রিক্রুটিং এজেন্সী মালিকরা থাকবেন সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে। এ অবস্থায় বায়রা নির্বাচনে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার মূল ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্মিলিত সমন্বয় ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মাহমুদ বলেছেন, লাইসেন্স যার ব্যবসা তার, সিন্ডিকেট নিপাত যাক। তিনি বলেন, নূর আলী ও আবুল বাশার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে নেতৃত্বে দিলেও তাদের অনেকে সিন্ডিকেটে ঢুকে গেছে। তারা সিন্ডিকেটের পরিধি বাড়ানোর পায়তারা করছেন। ভোটাররা এর জবাব দিবেন।

সম্মিলিত ঐক্য পরিষদের নেতৃত্বে থাকা বায়রার সাবেক সভাপতি আবুল বাশার বলেছেন, সিন্ডিকেটমুক্ত শ্রমবাজার প্রতিষ্ঠা করা, বায়রায় গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা, সদস্য বান্ধব বায়রা গড়া তাদের উদ্দেশ্য। এই প্যানেলের টিপু সুলতান বলেছেন, শ্রমবাজারে কোনো সিন্ডিকেট থাকবে না। এবারের নির্বাচন সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে। বায়রার সাাবেক অর্থসচিব ফখরুল ইসলাম বলেছেন, সিন্ডিকেট ভাঙতে মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে আরও এজেন্সী অন্তর্ভুক্ত করতে পারলে তাদের মাধ্যমে পার্টনারশীপ হিসেবে সব এজেন্সী কাজ করতে পারবে বলে তারা চেষ্টা করছেন।

এদিকে সম্মিলিত গণতান্ত্রিক জোটের প্রধান রুহুল আমীন স্বপন বলেছেন, ভোটাররা তাদের নেতৃত্ব ঠিক করবেন। এই প্যানেলের নেতৃত্বে থাকা বায়রার সাবেক মহাসচিব কাজী মো. মফিজুর রহমান বলেছেন, ব্যবসা বান্ধব পরিবেশ তৈরী করাই তাদের লক্ষ্য। তিনি বলেন, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে ২৫ এজেন্সীর সঙ্গে আরও কমপক্ষে ৫০০ এজেন্সী এসোসিয়েট এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে। সিন্ডিকেট বলে বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা চালানো হচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, দুই দেশের সরকারের ইচ্ছায় এই শ্রমবাজার চালু হয়েছে। বায়রার শীর্ষ নেতা এ কে এম মোবারক উল্লাহ শিমুল বলেছেন, প্রায় ৬০ এজেন্সী মালিকের সদস্য পদ আটকে রাখায় তা আদালত পর্যন্ত গড়ায়। এতে নির্বাচন আটকে যায়। আদালত ওই ৬০ জনকে সদস্যপদ দিয়েছে।

রিক্রুটিং এজেন্সী মালিকরা জানিয়েছেন, সম্মিলিত গণতান্ত্রিক জোটে বায়রার সাবেক সভাপতি সাংসদ বেনজির আহমেদ, সাংসদ লে. জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, সাংসদ নিজাম হাজারী, হাব সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম, হাবের সাবেক সভাপতি আব্দুস ছোবাহান ভূঁইয়া, আটাবের সাাবেক সভাপতি মনছুর আহমেদ কালাম, সাবেক মহাসচিব আসলাম খানসহ সরকারের একজন মন্ত্রী সরাসরি সম্পৃক্ত। নেপথ্যে আছে এক সচিবের নামও। এদের মধ্যে অনেকে সোনাগাঁও হোটেলে প্যানেল পরিচিতি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

গত ৯ জুন নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যান বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মিরাজুল ইসলাম উকিল ও তার দুই সদস্য একই মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. আবুল কালাম আজাদ এবং তানিয়া ইসলাম তফসিল ঘোষণা করেন। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আদেশ মোতাবেক বাণিজ্য সংগঠন আইন ২০২২, বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা ১৯৯৪ এবং বায়রার সংঘবিধি অনুযায়ী গোপন ব্যালটের মাধ্যমে বায়রার ২৭ সদস্য বিশিষ্ট কার্যনির্বাহী কমিটির দ্বিবার্ষিক নির্বাচন (২০২২-২৪) অনুষ্ঠানের জন্য তফসিল ঘোষণা করা হলো। গত ১৭ আগস্ট বিকেল ৪টায় প্রার্থীতা প্রত্যাহার শেষে নির্বাচন বোর্ড চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে। ৩ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীন ভোট গ্রহণ শেষে ফলাফল ঘোষণা করা হবে। বায়রায় প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (আইআইটি-১ অধিশাখা) মোহাম্মদ দাউদুল ইসলাম।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App