×

জাতীয়

অপচিকিৎসায় মৃত্যু হয় অধিকাংশ সাপে কাটা রোগীর

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ আগস্ট ২০২২, ০৭:৫৪ পিএম

অপচিকিৎসায় মৃত্যু হয় অধিকাংশ সাপে কাটা রোগীর

সাপে কাটা রোগীদের ওষুধ অ্যান্টিভ্যানম। ফাইল ছবি

হাসপাতালে এন্টিভ্যানম পড়ে থেকে হয় মেয়াদোত্তীর্ণ
দেরিতে হলেও জনস্বাস্থ্য সমস্যার তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হয়েছে সাপের কামড়ে মৃত্যুর বিষয়টি। তবে প্রতিবছর সাপের কামড়ে ঠিক কত মানুষ মারা যায় এর সঠিক কোনো হিসাব নেই। ২০১০ সালের পর দেশে এ নিয়ে আর কোন জরিপ হয়নি। ওই জরিপের তথ্য অনুযায়ী দেশে, বছরে ৭ লাখ মানুষ সাপের কামড়ের শিকার হয়। আর বছরে মারা যায় ৬ হাজার মানুষ। এদিকে পূর্ণাঙ্গ তথ্য না থাকলেও বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে ৩ হাজার ২৫৬ জন এবং চলতি বছরের আগস্ট মাসে সাপের কামড়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৩ হাজার ৪৮৫ জন। সেই হিসাবে গত বছরের তুলনায় চলতি বছর সাপের কামড়ের ঘটনা বেশি ঘটেছে। বাংলাদেশে সাপে কাটা রোগীর প্রাণ বাঁচানোর পথে অন্যতম অন্তরায় হচ্ছে অপচিকিৎসা। অধিকাংশ সময়ই রোগীকে হাসপাতালে না নিয়ে এসে নিয়ে যাওয়া হয় ওঝা বা বৈদ্যের কাছে। এতে রোগীর মৃত্যু ও ঝুঁকি বাড়ছে। তাই জনস্বাস্থ্য রক্ষায় এ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর উপর জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। সোমবার (২২ আগস্ট) সাপে কাটা বিষয়ক সচেতনতা মূলক এক মতবিনিময় সভায় বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন। বিকালে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম। বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এম এ ফয়েজ, অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যাপক এবং সাপে কাটা এবং এন্টিভেনম নিয়ে গবেষণাকারী ডা. অনিরুদ্ধ ঘোষ প্রমুখ। অধ্যাপক ডা. এম এ ফয়েজ বলেন, সাপে কাটা রোগীদের দ্রুততম সময়ে চিকিৎসা শুরু করা অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ বিষয়। অনেক সময় ঝাড়ফুঁক ও ওঝার কাছে নিয়ে সময় নষ্ট করে যখন হাসপাতালে আনা হয় তখন অনেক বিলম্ব হয়ে যায়। রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হয়না। আগে সরকারি হাসপাতালে বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে সাপে কাটা রোগীদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসার সুব্যবস্থা ছিল না। কিন্তু বর্তমানে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এন্টিভেনম ইনজেকশন সরবরাহ করা হচ্ছে। এই চিকিৎসার সম্পর্কে জানেন না অনেকেই। অধ্যাপক ডা. খুরশীদ আলম বলেন, আষাঢ়, শ্রাবণ ও ভাদ্র মাসে বিশেষ করে ভাদ্র মাসে সাপে কাটার ঘটনা বেশি ঘটে। দেশের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পর্যায় পর্যন্ত সাপে কাটা রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। সাপে কেটেছে এমন সন্দেহ হলেই রোগীকে ওঝার কাছে নয় হাসপাতালে নিতে হবে-এই বার্তাটুকু সবার কাছে পৌঁছাতে হবে। অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন জানান, উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ২ টি ভায়াল (প্রতি ভায়ালে ১০টি ডোজ), সদর হাসপাতালে ৫টি এবং মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০টি ভায়াল এন্টিভ্যানম থাকে। অনেক সময় স্টোরেই এই ওষুধ পড়ে থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়। এই ওষুধ ও চিকিৎসার সম্পর্কে অনেকে জানেনও না। এছাড়া সাপে কাটা রোগীদের প্রকৃত চিত্র জানতে চলতি বছরই একটি জরিপ কাজ শুরুর আগ্রহের কথা জানান তিনি। এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে বছরে প্রায় ৫৪ লাখ মানুষ সাপের কামড়ের শিকার হয়। এরমধ্যে বিষক্রিয়া ঘটে ১৮ থেকে ২৭ লাখ মানুষের। তাতে মারা যায় ৮০ হাজার থেকে ১৪ লাখ মানুষ। অনেক মানুষ নানা অস্থায়ী অক্ষমতায় ভোগেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উন্নয়নশীল দেশগুলির মানুষ দীর্ঘমেয়াদী জটিলতায় যেমন বিকৃতি, সংকোচন, দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা, রেনাল জটিলতা, মানসিক কষ্ট এসব সমস্যায় ভোগেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App